হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরই লোকসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই সব রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনে প্রচারে মরিয়া। সব জায়গাতেই ছড়িয়ে পড়েছে ভোটের উত্তাপ। কিন্তু এর একেবারে বিপরীত চিত্র মণিপুরে। সমাবেশ নেই, নেই ভোটের আঁচ।
কয়েক মাস ধরে হিংসা গ্রাস করেছে মণিপুরকে। ভোটের আর মাত্র দুসপ্তাহ বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত মণিপুরে কোন রাজনৈতিক দল কোন সভা করেনি। দেখা নেই কোন ব্যানার-পোস্টারও। নেই নির্বাচনী পরিবেশও। কিন্তু ভোটের আগে কেন এমন থমথমে মণিপুর? রাজ্য জুড়ে মাঝে মধ্যে চোখে পড়েছে কয়েকটি হোর্ডিং। তাতে সাধারণের কাছে ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুরোধ জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন।
যেখানে বিজেপি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে সাধারণের কাছে ভোটের আবেদন জানাচ্ছেন সেখানে মণিপুর যেন ব্রাত্য। কংগ্রেসের ক্ষেত্রেও সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং অন্যান্য বিশিষ্ট নেতাদের দেখা নেই মণিপুরে । মণিপুর নির্বাচন কমিশন বলেছে যে নির্বাচনের প্রচারের উপর কোন সরকারী নিষেধাজ্ঞা নেই, যদিও রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিরা রাজ্যের পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই সেখানে প্রচার পর্ব এড়িয়ে চলছেন।
মণিপুরের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক প্রদীপ ঝা বলেছেন, “নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী প্রচারে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। "মডেল কোড অফ কন্ডাক্টের পরিধির মধ্যে যা আসে তা রাজ্যে অনুমোদিত।"
বিজেপি প্রার্থী বসন্ত কুমার সিং, কংগ্রেসের বিমল আকোইজাম, রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়ার মহেশ্বর থাওনাওজাম এবং মণিপুর পিপলস পার্টি (এমপিপি) সমর্থিত রাজকুমার সোমেন্দ্রো সিং কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় অনন্য সমাধান নিয়ে এসেছেন। তারা একেবারে ভিন্ন উপায়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছাচ্ছেন। যার মধ্যে রয়েছে বাসভবন বা দলীয় কার্যালয়ে মিটিং অথবা সাধারণের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার চালানো। মহেশ্বর থাউনাওজাম, যিনি ডোর-টু-ডোর প্রচার চালানোর জন্য বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছেন। তিনি বলেন, "আমি যদি জনসভায় ভাষণ দিতাম এবং সমাবেশ করতাম তবে ভাল হত, তবে আমি প্রচার সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।" তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভোটাররা তাদের ভোটের গুরুত্ব জানেন এবং এখানকার মানুষ অবশ্যই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন"।
রাজ্যের বিদায়ী শিক্ষা ও আইনমন্ত্রী বসন্ত কুমার সিং এবার লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নিজ বাসভবন ও দলীয় কার্যালয়ে ছোট ছোট মিটিং করছেন। একইভাবে, দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকোইজাম বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর বাসভবনে দেখা করেছেন। ইম্ফলের কংগ্রেস অফিসে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা এবং আকোইজামের সমর্থনে পোস্টার লাগানো হয়েছে।
বিজেপি মনিপুর শাখার সভাপতি এ. শারদা দেবী বলেন, “নির্বাচন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আমরা আড়ম্বর করে সাধারণের ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে পারি না। “নির্বাচনও একটা উৎসবের মতো, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আমরা উৎসব উদযাপন করতে পারছি না।” রাজ্য সরকারের একজন সিনিয়র আধিকারিক বলেছেন যে কোনও রাজনৈতিক দলের জোরালো প্রচারপর্ব রাজ্যের আইনশৃঙ্খলরর অবনতির কারণ হতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, “যদিও পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে, তবে কোন জোরালো প্রচার রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং কোন দলই সেই ঝুঁকিটা নিতে চাইছে না ভোটের আগে। মেইতি সম্প্রদায়ের দাবির প্রতিবাদে পার্বত্য জেলাগুলিতে 'উপজাতি সংহতি মিছিল' সংগঠিত হওয়ার পর গত বছরের ৩রা মে রাজ্যে জাতিগত সংঘাতে কমপক্ষে ২১৯ জন নিহত হয়েছে। অবস্থা এ ছাড়া পাঁচটি উপত্যকা জেলা এবং তিনটি পার্বত্য জেলায় ৫০হাজারের -এর বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে বর্তমানে ত্রাণ কেন্দ্রে বসবাস করছেন।
উল্লেখ্য, মণিপুরে ১৯ এবং ২৬ এপ্রিল দুই ধাপে ভোটপর্ব অনুষ্ঠিত হবে। ত্রাণ শিবির গুলিতেও ভোটদানের বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে প্রার্থীরা এখনও সেই সব ত্রাণ শিবিরে গিয়ে সাধারণের সঙ্গে দেখা করেন নি। নির্বাচনী প্রচারের পরিবর্তে, প্রার্থীরা "ইন-ক্যামেরা" মিটিংয়ের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে পৌঁছাচ্ছেন।