Advertisment

গরু বাঁচাতে ভোটে লড়ছেন, কিন্তু প্রচারে এ কেমন বাংলা!

মনমোহনের অভিযোগ, বিজেপি গরুদের প্রতি পর্যাপ্ত সংবেদনশীল নয়। তাই আলাদাভাবে লড়তে বাধ্য হয়েছেন তিনি। কিন্তু এই ভোটপ্রার্থীর প্রচারে বাংলা ভাষাকে বিকৃত করার অভিযোগ উঠেছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
lok sabha elections 2019 kolkata north

মনমোহন গাড়োদিয়ার সেই প্রচারপত্র

নজরকাড়া কেন্দ্রে হেভিওয়েট প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে তিনিও শামিল। উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তৃণমূল, সিপিএম, বাম, কংগ্রেসের পাশাপাশি চোখে পড়ছে রাষ্ট্রীয় অহিংসা মঞ্চের প্রার্থী মনমোহন গারোদিয়ার ব্যানার, ফেস্টুন, ফ্লেক্স। ভোটপ্রচারে তাঁর প্রধান ইস্যু, গো-হত্যা বন্ধ করা। সঙ্গে পার্শ্বচরিত্রের ভূমিকায় হিন্দি ভাষার মর্যাদাবৃদ্ধি, নিরামিষ খাবারের প্রচার বাড়ানো, সংরক্ষণ ব্যবস্থা বাতিল।

Advertisment

মনমোহনের অভিযোগ, বিজেপি গরুদের প্রতি পর্যাপ্ত সংবেদনশীল নয়। তাই আলাদাভাবে লড়তে বাধ্য হয়েছেন তিনি। কিন্তু বাগুইআটির বাসিন্দা এই ভোটপ্রার্থীর ব্যানার, পোস্টারে বাংলা ভাষাকে বিকৃত করার অভিযোগ তুলেছেন উত্তর কলকাতার বাসিন্দাদের একাংশ।

সূত্রের খবর, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় অহিংসা মঞ্চ নামে সংগঠনটি মতাদর্শগতভাবে অতি দক্ষিণপন্থী, হিন্দুত্ববাদী। সদর দফতর বড়বাজারে। বিজেপি বা শিবসেনার মতো দলের প্রতি তাদের অভিযোগ, ওই দলগুলি সংসদীয় রাজনীতির জাঁতাকলে আটকে গিয়ে প্রকৃত হিন্দুত্বের পথ থেকে সরে গিয়েছে। এর বিরুদ্ধে প্রচার গড়ে তুলতে ২০১৪ সালে দেশের বিভিন্ন প্রদেশ মিলিয়ে সাতজন প্রার্থী দিয়েছিল রাষ্ট্রীয় অহিংসা মঞ্চ। চলতি নির্বাচনে অবশ্য কেবল কলকাতা উত্তর কেন্দ্র থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাঁরা।

উত্তর কলকাতা লোকসভার অর্ন্তগত সাতটি বিধানসভাতেই কমবেশি প্রচার করছেন মনমোহন। কিন্তু তাঁর প্রচারে বাংলায় লেখা যে ব্যানার, ফ্লেক্স, লিফলেট বা পোস্টার ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলির বানান এবং বাক্যগঠনের অবস্থা ভয়াবহ। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তা নিয়ে ট্রোল শুরু করেছেন নেটিজেনদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, যে প্রার্থীর প্রচারপত্রে একটি লাইনও শুদ্ধ বাংলায় লেখা নেই, তিনি উত্তর কলকাতার মতো কেন্দ্রে ভোট চাওয়ার যোগ্য নন।

মনমোহনের প্রচারপত্রের প্রধান আহ্বান - 'রাম রাজ্য আনতে হোবে, গৌমাতা রক্ষা করতে হোবে' (বানান অপরিবর্তিত)। এরপর লেখা - 'গৌহত্তা ছাড়া ভারত আর বংগাল কে আবার সমৃদ্ধ রাজ্য কবা জন্নে উত্তর কোলকাতা সংসদিয় ক্ষেত্র রাষ্ট্রীয় অহিন্সা মঞ্চ কে ওম্মীদবার সুপ্রসিদ্ধ সমাজসেবী আর গোভক্ত মনমোহন গাড়োদিযা কে গন্না কিসান চুনাব চিন্হে বোট দিযে বিপুল বোটে জযী করুন' (বানান ও বাক্যগঠন সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত)। উত্তর কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে মনমোহনের সমর্থনে যে নির্বাচনী প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে, তাতেও ছত্রে ছত্রে বানান এবং বাক্যগঠন সংক্রান্ত ভুল রয়েছে।

সরকার অনুমোদিত স্কুলের প্রধান শিক্ষক, বাগবাজারের বাসিন্দা অমিতদ্যুতি রায় বলেন, "উত্তর কলকাতার বাসিন্দা হিসাবে লজ্জায় মাথা নীচু হয়ে যাচ্ছে। প্রথমত, এই ধরণের চরম সাম্প্রদায়িক প্রচার বাংলার সংস্কৃতি নয়। তার উপর এমন বাংলা! প্রার্থী নিজে অবাঙালি হতেই পারেন, কিন্তু ছাপতে দেওয়ার আগে কোনও বাংলাভাষী ব্যক্তিকে দিয়ে একবার দেখিয়ে নেওয়া গেল না? নাকি উনি বাঙালিদের মানুষ বলেই মনে করেন না?"

মনমোহন অবশ্য এ নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাচ্ছেন না। তাঁর কথায়, "আমি বাংলার মানুষ নই। রাজস্থান থেকে এসে কলকাতায় থাকতে শুরু করেছি। বাংলা তেমন জানি না। তাই হয়তো কিছু ভুল হয়েছে। সেজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তবে আসল দোষ যাঁরা ছাপিয়েছেন, তাঁদের। আমি বলেছিলাম দু-একজন বাঙালিকে দেখিয়ে নিতে, ওঁরা তা করেন নি।" ভোটে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমি আদর্শের জন্য লড়ছি। গোমাতা, নিরামিষ ভোজন এবং হিন্দির জন্য বিজেপি কিছুই করে নি। গরুদের প্রতি বিজেপি যথেষ্ট সংবেদনশীল নয়। অন্য দলগুলির মতো তারাও ভোটের স্বার্থে তোষণ শুরু করছে। কড়া পদক্ষেপ নিতে চাইছে না। এর বিরুদ্ধেই আমার লড়াই। সেখানে কয়েকটা বাংলা বানান ভুল হওয়া এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ নয়।"

General Election 2019 election commission
Advertisment