কোথায় রয়েছেন বিসিএস অধিকারিক অর্ণব রায়? কোনও চাপের ফলে কি আত্মগোপন করে রয়েছেন, নাকি তাঁর নিখোঁজ হওয়ার পিছনে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে? ঘটনার পর চার দিন কেটে গেলেও কোনও খোঁজ না মেলায় নদীয়ার নির্বাচনের কাজে যুক্ত এই নোডাল অফিসারের অন্তর্ধান রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। পুলিশি তদন্ত চলছে।
অর্ণবের স্ত্রী অনিশা যশ এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে অর্ণবের সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল। ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁদের মধ্যে কোনও ঝঞ্ঝাট ছিল না। কাজেই পরিবারগত ভাবে অর্ণবের হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই। অর্ণবের নামে এসব ভুল রটনা করা হচ্ছে। তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার তথা ডেপুটি কালেক্টর অনিশা।
রানাঘাট ও কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের দায়িত্বে ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট তথা ডেপুটি কালেক্টর অর্ণব রায়। জানা গিয়েছে, ২০১৭ ব্যাচের এই বিসিএস অফিসার ১৮ এপ্রিল দুপুর ২টোর পর থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। তারপর থেকেই তাঁর দুটি মোবাইল ফোনই যোগোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানায় এবিষয়ে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়েছে। পুলিশ এই নিখোঁজ রহস্যর তদন্ত করছে। তবে সোমবার পর্যন্ত কোনও খোঁজ মেলেনি ওই আধিকারিকের। ইতিমধ্যে তাঁর পরিবর্তে অন্য একজন আধিকারিক নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু কোথায় রয়েছেন অর্ণব রায়? তাঁর কী হয়েছে? এর পিছনে কি অন্য কোনও রহস্য রয়েছে? উঠছে নানা প্রশ্ন। আদতে আসানসোলের হীরাপুরের বাসিন্দা অর্ণব। তিনি ও তাঁর স্ত্রী দুজনেই বিসিএস অফিসার। অর্ণবের অন্তর্ধান নিয়ে বিশেষ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক মন্তব্য করেছিলেন, ''ডিপ্রেশন''। এরপর থেকেই নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে নদীয়ার প্রশাসনিক মহলে। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি নির্বাচনের কাজ করতে গিয়ে কোনও সমস্যা হয়েছিল অর্ণবের?
স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর অনিশা তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন ১৯ এপ্রিল। তারপর ফের পোস্ট করেন ২০ এপ্রিল বিকেলে। বারেবারেই তিনি বলতে চেয়েছেন, তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। সেখানে ডিপ্রেশনের কোনও জায়গা নেই। অর্ণব কোথায়? সূত্রের খবর, তাঁর মোবাইল দুটি সুইচড অফ হয়েছে ওই দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ। একটি মোবাইলের লোকেশন ছিল শান্তিপুর। যা কৃষ্ণনগর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে। সেদিন দুপুরে তিনি বিপ্রদাস পাল পলিটেকনিক কলেজে গিয়েছিলেন নির্বাচনেরই কাজে। সেখান থেকে দুপুর ২টোর সময় বেরিয়েছেন। তারপর থেকেই কোনও খোঁজ নেই।
সূত্রের খবর, অফিস বা পারিবারিক ক্ষেত্রে কিছু ঘটেছে কিনা, সমস্ত সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কোনও উচ্চপদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে অর্ণবের কোনও তর্ক-বিতর্ক হয়েছে কিনা, তারও খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। সেক্ষেত্রে কোনও মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছিল কিনা, সেটাই একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের কাজের চাপ এড়াতে তিনি নিজেই কি অন্তরালে চলে গিয়েছেন বা আত্মগোপন করে রয়েছেন? এমন প্রশ্নও উঠছে। তাছাড়া পারিবারিক কোনও সমস্যা ছিল কিনা, তারও খোঁজ নিচ্ছেন তদন্তকারীরা। যদিও অর্ণবের স্ত্রী বারে বারেই দাবি করছেন, তাঁদের মধ্যে এমন কোনও ঘটনা ঘটে নি যে অর্ণব হতাশায় ভুগবেন। বরং নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে তাঁরা খুশি ছিলেন।