Advertisment

বঙ্গ বিজয়ে লড়াই এবার কাঁটায় কাঁটায়, কী কৌশল যুযুধান বিজেপি-তৃণমূলের?

ভোটের বাদ্যি বেজে গিয়েছে। প্রচার থেকে ফলাফল- টানটান উত্তেজনায় দু'মাসের হাইপ্রোফাইল লড়াই। কার্যত মোদী বনাম মমতার যুদ্ধ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ভোটের বাদ্যি বেজে গিয়েছে। প্রচার থেকে ফলাফল- টানটান উত্তেজনায় দু'মাসের হাইপ্রোফাইল লড়াই। কার্যত মোদী বনাম মমতার যুদ্ধ। ভোটের দিন ঘোষণার আগেই রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছিল ১২ কোম্পানি আধা সেনা। এবার সেই সংখ্যা আরও বাড়বে। বিনা যুদ্ধে একে অপরকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি নয় তৃণমূল-বিজেপি। জোট বেঁধেছে বাং-কংগ্রেস। এর আগে গণতন্ত্রের উৎসবের এই চেহারা দেখেনি বাংলা। লড়াই কাঁটায় কাঁটায়। তবে, পশ্চিমবঙ্গের ভোট এবার মেরুকরণের হতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। ভোট ঘোষণা হতেই প্রতিপক্ষকে বাজিমাতের কৌশলও প্রস্তুত। দিন যত এগোবে যুযুধান বিজেপি-তৃণমূল একে একে বার করবে আস্তিনের তাস।

Advertisment

'পরিবর্তনের ভোট' ২০১১ বা ২০১৬, তৃণমূলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা মেলায় তেমন কোনও চ্যালেঞ্জ ছিল না। দশ বছর আগে তো বটেই, গত বারের বিধানসভাতেও বিজেপিকে জোড়াল প্রতিপক্ষ হিসাবে ভাবা হয়নি। ২০১১-তে খাতা খুলতে না পারলেও ২০১৬ সালে গেরুয়া শিবিরেরে বিধায়ক সংখ্যা ছিল মাত্র ৩। ছবিটা বদলে যায় ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে। বিজেপি বাংলা থেকে জিতে নেয় ১৮টা আসন। ভোট শতাংশ বেড়ে পৌঁছে যায় ৪০.৬৪ শতাংশে। ধরাশায়ী অবস্থা বাম-কংগ্রেসের। বদলে যায় বাংলার রাজনৈতিক সমীকরণ। পদ্ম ক্রমশ পাপড়ি মেলতে থাকে পশ্চিমবঙ্গে। আপাতত বঙ্গ বিজয়ই বিজেপির পাখির চোখ। তাই ১৯৭১ সালের পর আবারও এক টানটান উত্তেজনাকর ভোটের সাক্ষী হতে চলেছে রাজ্যবাসী।

আরও পড়ুন- বাংলায় এবার ৮ দফায় নির্বাচন, কোন কেন্দ্রে কবে ভোট জেনে নিন

ফলাফল যাই হোক না কেন, স্পষ্ট যে একদা বাম দূর্গ বাংলায় ভোট এবার মেরুকরণের। একদিকে বিজেপি যখন 'জয় শ্রীরাম' ধবনি, সরস্বতী পুজো, দুর্গা পুজোকে হাতিয়ার করে তৃণমূল বধের কৌশলী প্রচারে ব্যস্ত তখন দলের ধর্ম নিরপেক্ষা অবস্থান তুলে ধরতে মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নজরে বাংলায় ৩০ শতাংশের বেশি সংখ্যা লধু মুসলিম ভোট। দলের ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোর জানিয়েছেন, তৃণমূল ৩০ শতাংশ এগিয়ে থেকে নির্বাচন যুদ্ধ শুরু করবে। অন্যদিকে বিজেপি সংখ্যাগুরু হিন্দু ভোটের সমাহারে জোর দিয়েছে। তবে গেরুয়া উত্তরপ্রদেশ বা বিহারের থেকে সংখ্যালঘু ভোট বেশি বাংলায়। তাই মুসলিম ভোট কিছুটা হলেও যেন চ্যালেঞ্জ গেরুয়া শিবিরের সামনে।

একই সঙ্গে প্রচারে বাঙালি আবেগ-সংস্কৃতিতে শান দিচ্ছে উভয় পক্ষই। বিজেপির কৌশলী ধর্মীয় প্রচারে আখেড়ে তৃণমূলেরই লাভ দেখছে জোড়া-ফুল নেতৃত্ব। শাসক দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, 'ওরা যত হিন্দুত্বের প্রচার করবে ততই তৃণমূলের লাভ। সংখ্যালধু ভোট ও হিন্দুদের মধ্যে প্রান্তিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর ভোটেই বঙ্গ বিজয় সম্ভব।'

আরও পড়ুন- নজিরবিহীন পদক্ষেপ কমিশনের, বাংলায় এবার দু’জন পুলিশ পর্যবেক্ষক, জানুন তাঁদের সম্পর্কে

২৯৪ আসনের মধ্যে দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, মালদা, হাওড়া, বর্ধমান, নদিয়া- এই দশ জেলাতেই রয়েছে প্রায় ২০০ আসন। উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি এই জেলাগুলোতে বিজেপি লোকসভায় ভাল ফলফাল করেছিল। তৃণমূল নেতার কথায়, পরিস্থিতি পালটেছে। এইসব অঞ্চলে দু'বছর আগের শক্তি এখন আর বিজেপির নেই। এছাড়াও এটা বিধানসভা ভোট। 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৯-য়ের ভোট প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়ে দাঁড়াননি। এছাড়াও বিজেপি হাওয়া ছিল। কিন্তু তারপর একটি বিধানসভা ভোটেও ভাল ফলাফল হয়নি কেন্দ্রের শাসক শিবিরের। তাদের ভোট শতংশ কমেছে।' বাংলায় ডবল ডিজিট অতিক্রম করা বিজেপির কাছে কষ্টসাধ্য বলে আগেই চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন প্রশান্ত কিশোরও। উল্লেখ্য, ওই দশ জেলার প্রায় ২০০ আসনের মধ্যে তৃণমূল ২০১৬-তে প্রায় ১৫০টি নিজেদের দখলে রেখেছিল।

এবার জোটে করে লড়ছে বাম-কংগ্রেস। সঙ্গে রয়েছে রাজনীতিতে নবাগত পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। তৃণমূলের নজরে আপাতত এই জোটের ভোটও। শাসক শিবির মনে করছে বাম-কংগ্রেস জোট করে কিছু ভোট কাটলেও মেরুকরণের ভোট আদতে বিজেপিকে ঠাকাতে মানুষ তৃণমূলকেই বেছে নেবেন।

আরও পড়ুন- নাড্ডার কনভয়ে হামলার স্মৃতি টাটকা, সেই কারণেই কি দ২৪ পরগনায় তিন দফায় ভোট?

অন্যদিকে, একদা তৃণমূলের সেনাপতি মুকুল রায়-শুভেন্দু অধিকারী এখন গেরুয়া শিবিরের। নিজেদের খেলায় ব্যস্ত তাঁরা। স্বপ্ন দেখছে পদ্ম বাহিনী। বঙ্গ জয়কে পাখির চোখ করে সংগঠনিক স্তরেও পরিবর্তন এনেছে মোদী-নাড্ডারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের বাংলায় নির্বাচনের সহ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তাঁরাই দেখছেন সব খুঁটিনাটি। চলছে পরিবর্তন যাত্রা। সঙ্গে যোগদান মেলা। বারে বারে বাংলায় প্রচারে আসছেন অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা। তুলে ধরছেন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সাফল্য ও মমতা সরকারের নানা দুর্নীতি, অব্যবস্থার নজির। 'তোলাবাজি-দর্নীতি, সিন্ডিকেট রাজ' তোপ দেগেই তৃণমূলকে উৎখাতে মরিয়া পদ্ম গোষ্ঠী। ৭ মার্চ ব্রিগেডে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। আপাতত 'সোনার বাংলা' গড়তে বিজেপি যে কতটা মরিয়া বারংবার রাজ্য়ে এসে ভোটারদের তারই হদিশ দিতে তৎপর গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব।

সুতরাং দু'শিবিরেরই প্রস্তুতি প্রায় সাড়া। ভোট ঘোষণার সঙ্গেই এবার আস্তিনের তাস প্রকাশ্যে আনবে তৃণমূল-বিজেপি। লড়াই তাই সেয়ানে সেয়ানে।

Read in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

tmc bjp Mamata Banerjee west bengal politics modi West Bengal Polls 2021 West Bengal Assembly Election 2021
Advertisment