Advertisment

নজরে 'বহিরাগত', শেষ প্রহরের কৌশল সাজাতে মমতার ফোন সুফিয়ানকে

"নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। গন্ডগোল বাধলে কাকে ফোন করতে হবে, কোথায় জানানো হবে, সবই বলে দেওয়া হয়েছে।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

নন্দীগ্রামে দুই শিবিরেই শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি চলছে। এক্সপ্রেস ফটো- পার্থ পাল

সময় ঠিক কাটায় কাটায় সন্ধ্যে ৬টা ১৫ মিনিট। মোবাইলের রিং বেজে উঠতেই ফোন ধরেই বললেন 'হ্যাঁ দিদি'। তৃণমূল কংগ্রেসের নন্দীগ্রামের চিফ ইলেকশন এজেন্ট সেখ সুফিয়ানের কাছে ফোন এসেছিল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের। দক্ষিণ নন্দীগ্রামে বাড়ি সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ে বসে সুফিয়ান বলেন, "দিদি ফোন করেছিলেন। আমি তো ইলেকশন এজেন্ট, আমায় তো ফোন করবেনই।" তিনি দাবি করেন, "বিজেপির বাইকবাহিনী, নির্বাচন কমিশন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসকে।" বিজেপির পাল্টা দাবি, "তৃণমূলের বাইকবাহিনীর দাপটেই আমরা আতঙ্কিত।" যুযুধান দুপক্ষই অশান্তির আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না।

Advertisment

বুধবার নন্দীগ্রামে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল দলীয় কর্মীদের শেষ মুহূর্তের প্রস্ততি চলছে। নন্দীগ্রাম দু'নম্বর ব্লকের বিরুলিয়া বাজারেই বিজেপির স্থানীয় কার্যালয়। দুপুর দুটো নাগাদ ওই কার্যালয়ে ছিলেন দলের জেলা সহ-সভাপতি প্রলয় পাল, নন্দীগ্রাম দুই দক্ষিণ মন্ডলের সভাপতি অরূপ জানা, সহ দলের স্থানীয় নেতৃত্ব ও কর্মীরা। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের প্রলয়বাবুকে ফোন করা নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল। এদিক অরূপবাবুর দাবি, "খেজুরি, ভগবানপুর সীমান্ত এলাকায় বহিরাগতদের নিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করছে তৃণমূল। বাইকবাহিনীর কথা নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীই ভরসা।" স্থানীয় শক্তিকেন্দ্রের আইটি সেলের সদস্য বছর ৩২-এর দীপক দাস বলেন, "নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। গন্ডগোল বাধলে কাকে ফোন করতে হবে, কোথায় জানানো হবে, সবই বলে দেওয়া হয়েছে। কাল সকাল পাঁচটা নাগাদ ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে দলীয় এজেন্টরা।"

publive-image
এক্সপ্রেস ফটো- পার্থ পাল

আরও পড়ুন, “মুকুল শুভেন্দুর মত এত খারাপ নয়”, নন্দীগ্রামে কেন একথা বললেন মমতা?

আমদাবাদের টাকাপুরায় বিজেপি কার্যালয়ে দেখা গেল নির্বাচনের চূড়ান্ত তৎপরতা চলছে। বুথ এজেন্টরা কী করবেন, কী করবেন না তা বোঝানো হয়ে গিয়েছে। ২৫ বছরের দেবকুমার দাস কলকাতায় সেলসের কাজ করেন। তিন মাস ছুটি নিয়েছেন শুধু বিজেপির হয়ে নির্বাচনে কাজ করবেন। সকাল ছটায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঘরে ফিরতে রাত ১০টা বেজে যাচ্ছে। ১০-১৫দিন ধরে এই কার্যালয়েই খাওয়া সারছেন এখানকার ব্যস্ত জনা ৩০ দলীয় কর্মী। এদিনের মেনুতে ছিল মাছের ঝোল, একটু ভাজা, চাটনি। জানালেন দেব। দলের আরেক কর্মী শান্তনু সেন জানিয়ে দিলেন, তিনি দাদার অনুগাামী। তাই বিজেপিতে। অশান্তি হলে প্রশাসনকে জানাবো তা না হলে প্রতিরোধ হবে।

রেয়া পাড়ায় এক বছরের জন্য বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। আপাতত সেখানে নন্দীগ্রাম দু'নম্বর ব্লক তৃণমূল অফিস। এই অফিসের পাশ দিয়েই মঙ্গলবার রোড শো করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বুধবার বিকেলে এই কার্যালয়ে তখন স্থানীয় নেতৃত্ব আলোচনায় ব্যস্ত। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে রয়েছেন দলীয় কর্মীরা। দলীয় কর্মীকে মারধর, নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত বলে জানালেন ব্লক নেতা মহাদেব বাগ। তৃণমূল কর্মী দীপঙ্কর দাস বলেন, "আমাদের কপাল এখান থেকে জিতে ফের মুখ্যমন্ত্রী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৫০ হাজার ভোটে জিতব। দলীয় কর্মী ৩৬ বছরের বাবলু দাসের দাবি, "বাইরের লোক জড় করে এখানে সংগঠন দেখাতে চাইছে বিজেপি। নন্দীগ্রামে বিজেপি বলে কিছু নেই। কাল, বৃহস্পতিবার সকাল পাঁচটায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়বেন দলের বুথে এজেন্টরা।"

publive-image
এক্সপ্রেস ফটো- পার্থ পাল

আরও পড়ুন, হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রাম! শেষ দিনের প্রচারে ঝড় বঙ্গ রাজনীতির এপিসেন্টারে

সন্ধ্যের সময় তৃণমূল নেতা সেখ সুফিয়ানের বাড়িতে যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা। বাড়ি লাগোয়া অফিসে বসে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রতিনিধিকে সুফিয়ান বলেন, "২৪ ঘণ্টার মধ্যে বদলে গেল নন্দীগ্রামের পুলিশ। একদিকে বাইকবাহিনী, অন্যদিকে কমিশনের পক্ষপাতিত্ব চলছে। মুখ্যমন্ত্রীকে হারানোর ষড়যন্ত্র চলছে। যেখানে দুর্বল সেখানে ছাপ্পা মারবে, যেখানে পারব মোকাবিলা করব।" বিজেপির মত এই দাপুটে তৃণমূল নেতার দাবি, "ভগবানপুর, পটাশপুর থেকে বাইরের লোক ঢোকানো হচ্ছে। দক্ষিন নন্দীগ্রাম বাইপাশের ধারে তৃণমূলের বুথ ক্য়াম্পের ৭০ নম্বর বুথের তৃণমূল কর্মী আনোয়ার খান, মফিজুল খানরা স্পষ্ট জানালেন, এখানে সিপিএম বুথে এজেন্ট দিতে পারলেও বিজেপি পারবে না।

বৃহস্পতিবারের নন্দীগ্রামের নির্বাচনের দিকে নজর রয়েছে শুধু রাজ্য নয় সারা দেশের। এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে লড়ছেন শুভেন্দু। প্রচারে সারা ফেলে দিয়েছিল তৃণমূল-বিজেপি। নজর কাড়ার চেষ্টা করেছেন সিপিএম প্রার্থী মীনক্ষী ভট্টাচার্য। রাজনৈতিক মহলের মতে, বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামের ভোটের মুড পরবর্তী ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Mamata Banerjee bjp tmc
Advertisment