ফুটবলার হিসেবে গায়ের সঙ্গে কখনও জড়িয়ে থেকেছে সবুজ-মেরুন, কখনও আবার লাল-হলুদ। বর্তমানে সেই ঢিলেঢালা পাঞ্জাবির সঙ্গে বাড়তি সংযোজন, পদ্মফুল আঁকা গেরুয়া স্কার্ফ। চৈত্রের শেষ গরমকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন অলিগলি, মফঃস্বলের অচেনা জায়গায়। অপরিচিতদের অভাব-অভিযোগ শুনছেন, নোট নিয়ে রাখছেন। দুই প্রধানে দাপিয়ে খেলা গোলকিপার কল্যাণ চৌবে এখন লোকসভা নির্বাচনে বঙ্গ বিজেপির 'ডার্ক হর্স'। খেলা ছেড়ে দেওয়ার পরে সফল ধারাভাষ্যকার হিসেবেও স্বতন্ত্র পরিচিতি রয়েছে। তবে ফুটবলের ক্ষেত্র বাদ দিলে মোহনবাগানের 'ঘরের ছেলে' এখন রাজনীতির বৃহত্তর ময়দানে।
আরও পড়ুন: পুড়ে যাওয়া উয়াড়ির পাশে বঙ্গ ফুটবলের অভিভাবক, সাড়া নেই সিএবি-র
প্রচারের ফাঁকেই শুক্রবার কল্যাণ চৌবে ফোনে কৃষ্ণনগর থেকে বলে দিলেন, "মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। ফুটবলার হিসেবে সমর্থকদের প্রত্যাশা সামলেছি। প্রতিপক্ষকে হারাতে হবে, ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে হবে - এমন আবদারে নিজেকে মোটিভেট করতাম একসময়ে। বিষয়টা ভীষণ গর্বের ছিল। এখনও ভোটের ময়দানে সাধারণ মানুষের অপরিসীম প্রত্যাশা, চাহিদা আমাকে ঘিরে। তবে এটা অনেকটাই দায়িত্বের বিষয়।"
প্রচারের মাঝেই কলকাতায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্রিগেডে যোগ দিতে। ট্রেনে চেপে আর পাঁচজনের মতো আসেন শহরে। প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে সাফ কাপে দেশের হয়ে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন বলছিলেন, "প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় হয়েছে। ওঁর বক্তব্য পরিষ্কার, রাষ্ট্র নির্মাণ ও দেশের উন্নয়নের বার্তা নিয়ে সাধারণের কাছে পৌঁছতে হবে। আন্তর্জাতিক স্তরে ভারত যেভাবে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে চলেছে, সেকথা জানাতে হবে সমাজের প্রান্তিক মানুষকেও। কোনওভাবেই নেতিবাচক ভাবনাকে প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না।"
আদ্যোপান্ত শহুরে জীবনযাত্রার থেকে কতটা আলাদা গ্রামীণ পরিবেশ, সেই কথা বলতে গিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন জাতীয় দলের প্রাক্তন তারকা, "আমার কেন্দ্র গ্রামীণ এলাকাভুক্ত। লোডশেডিং তো বটেই, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের মান অত্যন্ত খারাপ। রাস্তা-ঘাটেরও কোনও উন্নতি হয়নি। তাই ঠিক করেছি, যদি নির্বাচিত হই, তাহলে মানুষের প্রাথমিক চাহিদা, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করতে উদ্যোগ নেব। এটাই আমার কাজের তালিকায় অগ্রাধিকার পাবে।"
তাঁর পরিচয় বর্তমানে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক। তবে খেলার মাঠের গন্ধ এখনও বয়ে বেড়ান নিজের সঙ্গেই। তাই সামাজিক, আর্থিক জীবনযাপনের আলোচনার পাশাপশি কল্যাণের গলায় শোনা যায় ক্রীড়াক্ষেত্রে তাঁর পরিকল্পনার কথা। নিজেই বলছিলেন, "এখানে একটি গর্ভমেন্ট কলেজ রয়েছে। সেই কলেজেরই মাঠে জ্যোতির্ময়ী শিকদার একসময়ে অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। চোখে খেলাধুলোর স্বপ্ন লেগে থাকা যুবক-যুবতীদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ওই মাঠ সংস্কার করে খেলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি স্পোর্টস হাব তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে।"
খেলা আর রাজনীতির চক্রব্যূহে বন্দি হয়েও অবশ্য বন্ধুত্ব টিকিয়ে রেখেছেন তিনি। অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাঝে বাবুল সুপ্রিয় বরাবরের মতোই বিশেষ কল্যাণের কাছে। তারকা-গায়কের ডিজাইন করা জার্সিতেই বহুবছর পরে আই-লিগের সিংহাসনে বসেছিল মোহনবাগান। ক্লাব আর রাজনৈতিক সতীর্থের কথা উঠতে অল্প থেমে তিনি বলেন, "বাবুল সুপ্রিয় মোহনবাগানকে আমার মতোই ভালবাসে। ও যখন জার্সি ডিজাইন করে তখন ছিলাম। রাজনীতির মধ্যেও আমাদের দেখা হলে ফুটবলের প্রসঙ্গ উঠবেই।"
বাবুলের বন্ধুত্ব আর প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্র নিয়েই কৃষ্ণনগর বিজয় করতে প্রস্তুত বাগানের ঘরের ছেলে। মহুয়া মিত্ররা নিছকই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। কল্যাণ চৌবের চ্যালেঞ্জ কিন্তু নিজের সঙ্গেই, নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার।