Advertisment

রাজনৈতিক গোলকধাঁধায় ওয়াইসি! কীভাবে লক্ষ্যভেদ? বড় চ্যালেঞ্জের মুখে AIMIM সুপ্রিমো

কংগ্রেস ওয়াইসির বিরুদ্ধে মুসলিম ভোট চুরি করার জন্য বিজেপির বি-টিম বলে উল্লেখ করেছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
BJP,Congress,BRS,Telangana Election, Telangana Election 2023, Telangana Election Asaduddin Owaisi, Asaduddin Owaisi on Rahul Gandhi, Rahul Gandhi on Asaduddin Owaisi

আসাদউদ্দিন ওয়াইসি নিজের দুর্গ ধরে রাখার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।

তেলেঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনের জন্য হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল 'অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন' (এআইএমআইএম) এবং বিআরএস- জোট সঙ্গী । কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী লাগাতার জোটকে নিশানা করছেন। তেলেঙ্গানায় বহু জনসভায় তিনি বলেছেন যে উভয় দলই বিজেপির বি টিম।

Advertisment

আসাদুদ্দিন ওয়াইসিকে যখন প্রশ্ন করা হয় তেলেঙ্গানার নির্বাচনী হাওয়া কোনদিকে, তিনি বলেন, তেলেঙ্গানার মানুষ এআইএমআইএম এবং বিআরএসের সঙ্গে আছে। হায়দ্রাবাদের শক্ত ঘাঁটি বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ওয়াইসি বলেছিলেন যে হায়দ্রাবাদের আসনগুলিতে আমরা আবার জিততে চলেছি। আমরা নির্বাচনে আগেও লড়ছি সেখান থেকেও আমরা জয়ী হব। তিনি বলেন, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে এবং আমরা যে নয়টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি তার সবকটিতেই আমরা জিতব। তেলেঙ্গানা নির্বাচনে মোট ৫০টিরও বেশি সমাবেশ ও জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন ওয়াইসি

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এআইএমআইএম-বিআরএসকে বিজেপির বি দল বলে উল্লেখ করেছেন এই প্রশ্নের উত্তরে হায়দরাবাদের সাংসদ ওয়াইসি বলেন, আমি রাহুলকে জিজ্ঞেস করতে চাই কেন তিনি 370 ধারা নিয়ে কথা বলেন না? তিন তালাক নিয়ে কথা বলছেন না কেন? সারাদেশে মুসলমানদের হেনস্থা করা হয়েছে আপনি সেটা নিয়ে কথা বলছেন না কেন? এসব বিষয়ে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন কেন রাহুল?

ওয়াইসি বলেছিলেন যে রাহুল গান্ধী প্রতিটি হিংসার নিন্দা করেন, কিন্তু জুনায়েদ এবং নাসিরকে যখন রাজস্থানে খুন করা হয়েছিল, তখন তিনি কেন সেখানে যাননি? রাহুল হিন্দুত্বের আদর্শ অনুসরণ করছেন। রাহুল মুসলিম রিজার্ভেশন নিয়ে কথা বলেন না কেন? হায়দরাবাদের সাংসদ বলেছেন, রাহুল গান্ধীর বয়স ৫০ বছর হয়ে গেছে। এখন তিনি একাকীত্ব অনুভব করছে। একাকীত্ব কুরে কুরে খাচ্ছে রাহুলকে। এই একাকীত্ব কাটিয়ে উঠতে রাহুলের বিকল্প কিছু ভাবা প্রয়োজন। ৩০ শে নভেম্বর তেলঙ্গানায় বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, যার জন্য ভোট গণনা ৩রা ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

মাত্র ৯টি আসনে লড়াই করেও তেলেঙ্গানার রাজনীতিতে ওয়েসির দল কেন গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝার জন্য, রাজ্যের সামাজিক সমীকরণের দিকে তাকাতে হবে। যদি আমরা এখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের কথা বলি, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, রাজ্যে তাদের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৩ শতাংশ। একই সময়ে, বৃহত্তর হায়দ্রাবাদ এলাকায় মুসলিম জনসংখ্যা ৪৩.৩৫ শতাংশ। যেখানে রাজ্যের প্রায় ৪৫টি আসনে, মুসলিম ভোটাররা জয়-পরাজয়ের সমীকরণ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আসনগুলিতে মুসলিম ভোটারদের জনসংখ্যা ১৮ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত।

এখন পর্যন্ত, বিআরএস এমআইএম-এর সহযোগিতায় মুসলিম ভোটব্যাঙ্ককে মজভুত করেছে। তবে এবার কংগ্রেসের আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে, মুসলিম ভোটাররা কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে কর্ণাটকে জয়ের পর মুসলিম ভোটারদের আস্থা ফের কংগ্রেসের দিকে ফিরেছে। এটিই বিআরএস এবং এমআইএমকে চিন্তায় ফেলেছে। আসাদুদ্দিন ওয়াইসি এবং তার দলের জন্য, যারা হায়দ্রাবাদের উপর নির্ভর করে সারা দেশে মুসলমানদের নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন দেখে, রাজ্যের মুসলিম অংশের মধ্যে

কংগ্রেসের ক্রমবর্ধমান প্রভাব তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হায়দ্রাবাদের দুর্গ বাঁচাতে তিনি এখন জনতার দরবারে প্রাণপাত করছেন। জুবিলি হিলস এলাকায় মোবাইলের দোকান চালান এমন কৌসার রাজা বলেন, এবার কংগ্রেস যেভাবে চ্যালেঞ্জ করছে, তাতে ওয়াইসি ভাইদের কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে। তিনি বলেছেন যে গত দুই দশকে এই প্রথম তিনি ওয়াইসিকে এত পরিশ্রম করতে দেখা যাচ্ছে।

অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসির যিনি তার বক্তব্যের কারণে ক্রমাগত খবরের শিরোনামে রয়েছেন, গত কয়েক বছরে ভারতীয় রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একজন বড় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এবং তেলেঙ্গানার বাইরে অন্যান্য রাজ্যেও তার প্রসার ঘটিয়েছেন।

এবার ১১৯ টি বিধানসভা আসন বিশিষ্ট তেলেঙ্গানা বিধানসভায় BRS এবং কংগ্রেসের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। বিজেপিও নিজেদের জয়ের দাবি করছে, কিন্তু নির্বাচনী জনসভায় বিজেপি ও কংগ্রেস উভয় দলের নেতাদেরই টার্গেট ওয়েসি, কিন্তু বড় প্রশ্ন হল এই নির্বাচনে হায়দ্রাবাদের আশেপাশে মাত্র ৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এআইএমআইএম, কেন তিনিই সবার লক্ষ্য? আসলে, এআইএমআইএম হায়দ্রাবাদের চারপাশে আসনগুলিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে।

আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন মজলিস নামেও পরিচিত। এটি প্রায় ৮৫ বছর আগে হায়দ্রাবাদে একটি সামাজিক-ধর্মীয় সংগঠন হিসাবে শুরু হয়েছিল। নবাব মাহমুদ নওয়াজ খান ১৯২৮ সালে মজলিস প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত এই সংগঠনটি চালিয়ে যান। পরে সংগঠনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন বিখ্যাত আইনজীবী আবদুল ওয়াহাদ ওয়াইসিকে। আবদুল ওয়াহাদ ওয়াইসি ছিলেন দলের বর্তমান সভাপতি আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দাদা।

১৯৫৭ সালে, আবদুল ওয়াহাদ ওয়াইসি মজলিসকে একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত করেন এবং এর নামের সঙ্গে 'অল ইন্ডিয়া' যুক্ত করেন। ১৯৭৬ সালে, এই দলের দায়িত্ব আবদুল ওয়াহাদ ওয়াইসির ছেলে সালাহউদ্দিন ওয়াইসিকে দেওয়া হয়েছিল। তিনি ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ছয়বার হায়দরাবাদের এমপি নির্বাচিত হন। এখন সালাহউদ্দিন ওয়াইসির ছেলে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি দলের সভাপতি এবং হায়দরাবাদের সাংসদ। তার ছোট ভাই আকবরুদ্দিন ওয়াইসি বিধানসভায় দলীয় বিধায়ক দলের নেতা।

আরও পড়ুন: < Premium: সুড়ঙ্গ জয়ের ৪০০ ঘন্টা! ঐক্যবদ্ধ হার না মানা লড়াই, সাফল্যের এ কাহিনী চমকে দেবে >

তেলেঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচন প্রচারের শেষ দিনে, AIMIM প্রধান আসুদউদ্দিন ওয়াইসি মুসলিম সংরক্ষণের অবসান ইস্যুতে বিজেপিকে নিশানা করেছেন। পাশাপাশি ওয়াইসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও নিশানা করেন।একদিকে কংগ্রেস ও বিআরএসের মধ্যে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা। অন্যদিকে রাজ্যের নির্বাচনে তৃতীয় শক্তি বিজেপি। আসাদুদ্দিন ওয়াইসি হলেন তেলেঙ্গানার রাজনীতিতে চতুর্থ প্লেয়ার। যার দল অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) এবার ৯টি বিধানসভা আসনে ময়দানে নেমেছে। ওয়াইসি নিজে বিশ বছর ধরে হায়দরাবাদ থেকে সাংসদ হয়েছেন। তাঁর পরিবার পাঁচ দশক ধরে হায়দরাবাদে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। তবে প্রথমবারের মতো তিনি নিজের 'ঘরেই ঘেরা' বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

কংগ্রেস ওয়াইসির বিরুদ্ধে মুসলিম ভোট চুরি করার জন্য বিজেপির বি-টিম বলে অভিযোগ করছে, অন্যদিকে বিজেপি হিন্দুত্বের এজেন্ডা নির্ধারণ করে তাদের চ্যালেঞ্জ বাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে মুসলমানদের নেতৃত্ব দেওয়ার দাবিদার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি নিজের দুর্গ ধরে রাখার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। কংগ্রেস ও বিজেপির রাজনৈতিক গোলকধাঁধায় ওয়েসি।

আরও পড়ুন: < বিরাট ধৈর্যের প্রমাণ, উদ্ধারের পরই স্বাস্থ্যপরীক্ষা! এরপর আর কী কী? >

৯টি আসনে এআইএমআইএম প্রার্থী

বৃহস্পতিবার তেলেঙ্গানার ১১৯ টি বিধানসভা আসনে ভোটপর্ব। সকলের নজর এখন আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দিকে। ওয়াইসি তার নিজ রাজ্য তেলেঙ্গানার ৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছেন। সাতটি আসন হায়দ্রাবাদ এলাকার, যার মধ্যে রয়েছে চারমিনার, বাহাদুরপুরা, মালাকপেট, চন্দ্রায়ণগুট্টা, নামপল্লী, ইয়াকুতপুরা এবং ক্যারাভান আসন। এআইএমআইএম আগে এই সাতটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, তবে এবার রাজেন্দ্র নগর এবং জুবিলি হিলস আসন থেকেও প্রার্থী দিয়েছে। এই ৯টি আসন ছাড়া বাকি সব আসনেই বিআরএসকে সমর্থন করেছেন ওয়াইসি। কংগ্রেস ও বিজেপি প্রার্থীরাও পূর্ণ শক্তি নিয়ে এই আসনগুলিতে লড়াইয়ে নেমেছে।

মুসলিমদের প্রতি কংগ্রেসের ভালোবাসায় ক্ষুব্ধ ওয়াইসি

কর্ণাটকে জয়ের পর কংগ্রেসের মনোবল তুঙ্গে। তেলেঙ্গানায় আক্রমণাত্মক নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে মুসলমানদের আস্থা জেতার বাজি ধরেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস মুসলমানদের নিজের দিকে ফেরানোর জন্য সব রকম চেষ্টা করছে। দল হায়দরাবাদ আসনে প্রচারে অনেক সিনিয়র নেতাকে নিযুক্ত করেছে। রাহুল গান্ধী থেকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, সমস্ত কংগ্রেস নেতারা ওয়েসি এবং কেসিআরকে বিজেপির বি-টিম হিসাবে উল্লেখ করেছে।

এবার হায়দরাবাদে মুসলিম ভোট হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। এই কারণেই নিজের রাজনৈতিক দুর্গ বাঁচাতে মাঠে নেমেছেন ওয়াইসি। তারা হায়দ্রাবাদের প্রতিটি রাস্তায়, পাড়ায় এবং দরজায় দরজায় ঘুরে AIMIM প্রার্থীদের জন্য ভোট চাইছেন। গত চার দশকে এই প্রথম ওয়াইসি পরিবারকে তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। কারণ তাদের লড়াই করতে হবে বিজেপি, কংগ্রেস এবং বিআরএসের সঙ্গে। এ কারণে ওয়াইসির অনেক প্রার্থীই কি প্রবল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন?

২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, ওয়াইসি মাত্র ৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, যার মধ্যে তিনি ৭টিতে জিতেছিলেন। তবে এবার কংগ্রেস শক্তিশালী প্রার্থীকে মাঠে নামিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পুরনো হায়দ্রাবাদের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় তাদের সামনে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

ওয়াইসির এলাকায় শক্তি বাড়িয়েছে কংগ্রেস

তেলেঙ্গানায় ১৩ শতাংশ মুসলিম ভোটার। তবে পুরানো হায়দ্রাবাদ এলাকায় প্রায় ৪৫ শতাংশ মুসলিম রয়েছে। ওয়াইসি নিজে ওল্ড হায়দ্রাবাদ এলাকা থেকে জিতেছেন এবং তাঁর দলের বিধায়কও রয়েছে। কংগ্রেসও এই এ লাকায় একজন মুসলিমকেই প্রার্থীকে প্রার্থী করেছে, যার কারণে ওয়াইসির রাজনৈতিক সমীকরণ পালটে গিয়েছে। এই আসনগুলিতে কংগ্রেস তার সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে, যার কারণে কংগ্রেস বনাম ওয়াইসি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সাক্ষী থাকতে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের রাজনৈতিক গোলকধাঁধায় আটকে পড়ে আসাদুদ্দিন ওয়াইসি কীভাবে লক্ষ্য ভেদ করেন সেটাই দেখার বিষয়।

CONGRESS Asaduddin Owaisi
Advertisment