Advertisment

বিপক্ষে মিমি-বিকাশ, তাও দমছেন না যাদবপুরের এই হকার প্রার্থী

গোপাল নস্কর পেশায় ট্রেনের হকার। অর্থাভাবে বাড়ি বন্ধক রাখতে বাধ্য হয়েছেন। বন্ধ হয়ে গিয়েছে ছেলের পড়াশোনাও। কিসের আশায় নির্বাচন লড়ছেন বছর পঁয়তাল্লিশের এই হকার?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

সহ-হকারদের সঙ্গে নিয়ে ভোটের প্রচারে গোপাল

প্রতিদিন ভাত জোটে কিনা তার ঠিক নেই। কিন্তু নিজের জন্য ভোট জোটাতে আপ্রাণ লড়ছেন এক হকার। নিজেই ভোট চাইছেন, পোস্টার সাঁটাচ্ছেন, ব্যানার বাঁধছেন। সঙ্গী তাঁর মতোই আরও কয়েকজন হকার। যাদবপুর কেন্দ্রের হেভিওয়েট প্রার্থীদের চোখ ঝলসানো প্রচারের পাশাপাশি ওই হকার প্রার্থীও আছেন লড়াইতে।

Advertisment

নাম, গোপাল নস্কর। পেশা, শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার বিভিন্ন ট্রেনে হকারি করা। কখনও সেফটিপিন, কখনও জল, কখনও আবার টিপ, নেইলকাটার, ক্লিপ। বাড়ি সোনারপুরে। কিন্তু প্রবল অর্থকষ্টের জন্য আপাতত সেই বাড়ি বন্ধক রাখতে হয়েছে। এখন থাকেন পিয়ালীতে। দুই ছেলের একজনের চতুর্থ শ্রেণির পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অন্যজন স্নাতক পাশ করার পর বসে রয়েছেন। কিন্তু এসব কিছুই দমাতে পারছে না বছর পঁয়তাল্লিশের গোপালকে। যাদবপুর কেন্দ্র থেকে একটি প্রায় অপরিচিত দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই রেলওয়ে হকার।

আরও পড়ুন: স্বপ্ন পূরণ করতে আস্ত একটা দল গড়ে লড়াইয়ে সোনারপুরের বাদল

গোপাল যে দল করেন, তার নাম রাষ্ট্রীয় জনসচেতন পার্টি। কর্মীসংখ্যা শূন্যের কোঠায়। প্রচারের জন্য পর্যাপ্ত অর্থও নেই। বুধবার গোপালের সঙ্গে যাদবপুর কেন্দ্রের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা গেল প্রার্থীর সঙ্গী জনা চারেক লোক। তাঁরাও সকলেই ট্রেনে হকারি করেন। একজনের নাম পালান বৈদ্য, তিনি মলম বিক্রেতা। বিক্রিবাটা বাদ দিয়ে কেন ঘুরছেন গোপালের সঙ্গে? পালান বলেন, "বয়স তো আমার কম হল না। অনেকবার ভোট দিয়েছি। কখনও দেখি নি আমাদের মতো কেউ ভোটে লড়ছেন। তাই গোপাল যখন বলল ও লড়বে, আমি ঠিক করলাম জানপ্রাণ দিয়ে ওর সঙ্গে থাকব।" ট্রেনে ট্রেনে জল বিক্রি করেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, "দেশের সংসদটা শুধু বড় বড় লোকেদের জায়গা তো নয়। আমাদের মতো মানুষদের প্রতিনিধিও থাকা প্রয়োজন সেখানে। তাই কয়েকটা দিনের রোজগার বন্ধ রেখে গোপালের সঙ্গে রয়েছি।"

কার্যত একই কথা বলছেন প্রার্থী নিজেও। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে গলায় উত্তরীয় পরা মলিন পোশাকের গোপাল বলেন, "রাজনীতি আমি খুব ভাল বুঝি এমন দাবি করছি না। কিন্তু নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, যারা সংসদে যান, তাঁরা কেউ আমার মতো মানুষের কথা বলেন না। আমাদের চেনেনই না তাঁরা। তাই দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল, ভোটে দাঁড়াব। বিগত দুবার শেষ মূহুর্তে দাঁড়ানো হয়নি। তাই এবার যখন সুযোগ পেয়েছি, সর্বশক্তি দিয়ে প্রচার করছি।"

বাবার সঙ্গে প্রচারে বেরিয়েছে ছোট ছেলে শুভঙ্কর। বয়স ১৭। চতুর্থ শ্রেণির পর অর্থাভাবে আর পড়া হয় নি। গোপালের কথায়, "ও আমাকে বড্ড সাহায্য করে। নাহলে একা সংসারটা টানতে পারতাম না।" দাদা শুভ্র চাকরির চেষ্টা করছেন। শুভঙ্কর ট্রেনে বাদাম, জল বিক্রি করে। বাবার ভোটপ্রচারে কেন? শুভঙ্করের কথায়, "বাবা যা করেন, সবকিছুতেই পাশে থাকি। আমি জানি উনি মানুষের জন্যই কাজ করতে চান। তাই ভোটের লড়াইতে সাধ্যমতো পাশে থাকার চেষ্টা করছি।"

আরও পড়ুন: কেন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে ফুঁসছে ঝাড়খণ্ডের এই গ্রাম?

২০০৯ এবং ২০১৪ সালের ভোটেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ভেবেছিলেন গোপাল। কিন্তু শেষ মূহুর্তে হয়নি। তিনি জানান, ২০০৯ সালে পারিবারিক একটা সমস্যায় আটকে গিয়েছিলেন। তাই লড়া হয় নি। আর ২০১৪ সালে মনোনয়নপত্র জমার আগের দিন বাড়িতে আগুন লেগে গিয়েছিল। তাই সেবারও মনোনয়নপত্র জমা করতে যেতে পারেন নি। তাঁর কথায়, "আমি যে দলটি করি, তার নাম আরজেপি। সোনারপুরের এক ভদ্রলোক এই দল চালান। আমি এই দলে যোগ দিয়েছি কেবলমাত্র আমার মতো মানুষের কথা তুলে ধরতে। বড় দলে থাকলে পারতাম না।"

যাদবপুর নজরকাড়া আসন। হেভিওয়েট প্রার্থী দিয়েছে প্রধান তিন দল। তৃণমূলের টিকিটে লড়ছেন অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীর মতো সেলেব্রিটি। সিপিএমের প্রার্থী আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। বিজেপি-র প্রার্থী অধ্যাপক অনুপম হাজরা। তা সত্ত্বেও হাল ছাড়তে নারাজ হকার গোপাল। তাঁর কথায়, "ওঁরা সব বড় বড় মানুষ। সকলকে প্রণাম। কিন্তু আমি গরীব মানুষ হয়ে গরীবের কথা বলে যাব। হারা-জেতা পরের ব্যাপার।"

election commission General Election 2019
Advertisment