Lok Sabha Election: বাংলায় ভোট প্রচার বরাবরই রঙিন। বাঙালি ভোটারদের মনে রেখাপাত করতে রাজনীতিকদের রসবোধ তাই প্রতিফলিত হয়ে থাকে স্লোগান-ফোস্টুন-দেওয়াল লিখনে। এ ক্ষেত্রে এ রাজ্যের সুদীর্ঘ বাম পরম্পরার 'অবদান' অনস্বীকার্য। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পিছিয়ে নেই বিজেপিও। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ তথা গায়ক বাবুল সুপ্রিয় এবার প্রতিপক্ষ তৃণমূলকে বিঁধতে রিংটোন-এর আশ্রয় নিয়েছেন। বাবুলের সেই রিংটোন রেকর্ডিং-এর কাজও প্রায় শেষ। সম্ভবত আজ থেকেই রাজ্যের প্রান্তে প্রান্তে বাজতে থাকবে 'এই তৃণমূল আর না...'।
২০১১ সালে থেকে এ রাজ্যের ক্ষমতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। বিগত আট বছরে তৃণমূল জমানায় ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার এবং বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গিতে সেগুলির বিশ্লেষণই মূলত এ গানের কথা। এ ধরনের রিংটোন বা প্রচারমূলক গানকে জনপ্রিয় করার তাগিদেই সহজ সুরের রাস্তায় হেঁটেছেন বলিউডি বাবুল। তৃণমূল আমলে এ রাজ্যে ঘটা 'অন্যায়' তুলে ধরা, এবং পুনরায় তাদের ভোট দেওয়া উচিত না, এমনটাই বক্তব্য এই গানের।
আরও পড়ুন: ১১ আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা ঘোষিত, কে লড়ছেন কোথায়?
তবে, এই গানের লিরিক অর্থাৎ কথা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সাম্প্রতিক কলকাতার বুকে বামেদের একাধিক কর্মসূচিতে যেসব স্লোগান মুখরিত হয়েছে ছাত্র-যুবদের কন্ঠে, হুবহু সেইসব স্লোগান দিয়েই তৈরি বাবুলের রিংটোন। এ প্রসঙ্গে টুইটারে বাবুল জানিয়েছেন, কথাটা ঠিক, কিন্তু এও বলেছেন, 'চুরি' তিনি করেন নি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত এক ছন্দে বেঁধেছেন মাত্র।
এতেই শেষ নয়। এই গান নিয়ে ইতিনধ্যেই পুলিশের কাছে জমা পড়েছে অভিযোগপত্র। সৌজন্যে পশ্চিম বর্ধমান স্টুডেন্টস লাইব্রেরি কোঅর্ডিনেশন কমিটি নামে এক সংগঠন। তাদের বক্তব্য, গানটির মাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেস এবং তাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অসম্মান করা হয়েছে। এই মর্মেই ওই সংগঠন অভিযোগ দায়ের করেছে আসানসোল দক্ষিণ থানায়। অভিযোগপত্রের সঙ্গে গানটির একটি সিডিও জমা করা হয়েছে পুলিশের কাছে।
এছাড়াও রিংটোনে তৃণমূলের নামে আপত্তিকর কথা বলা হয়েছে, এমন অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনেও। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কমিশন। সূত্রের খবর, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাবুলের কাছ থেকে এ বিষয়ে জবাব চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। তৃণমূলের তরফ থেকে বাবুলর এই গানের একটি সিডি-ও প্রমাণ স্বরূপ জমা দেওয়া হয়েছে কমিশনে।
'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-কে নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, "কমিশনের কাছ থেকে কোনও রকম ছাড়পত্র (সার্টিফিকেশন) না নিয়ে এমন গান পোর্টালে এবং ইন্টারনেটে আপলোড করে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করা হয়েছে।" জানা যাচ্ছে, এ বিষয়ে মিডিয়া মনিটরিং কমিটির চেয়ারম্যান সঞ্জয় বসু সিইও-র দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং এরপরই বাবুল সুপ্রিয়কে নোটিস পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে রাজ্যে পরিবর্তনের আগে তৃণমূলের পক্ষ থেকে একাধিক টিভি চ্যানেলে একটি বিজ্ঞাপন সম্প্রচার করা হত। বাম সরকারের একাধিক 'অন্যায়-অবিচার' থেকে সমাজের সব অংশের মানুষ যে নিষ্কৃতি চাইছেন, সে কথাই বলা হয়েছিল সেই বিজ্ঞাপনে। আর বিজ্ঞাপনটির শেষে একটি বাচ্চা মেয়ে এসে বলত, "অনেক হয়েছে, আর না"। সাম্প্রতিককালে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির এই রিংটোন অনেককেই মনে করিয়ে দিচ্ছে বছর আটেক আগের সেই প্রচারকে। মূল বক্তব্য একই আছে, শুধু বদলে গিয়েছে লক্ষ্য এবং আক্রমণকারীর রঙ। এভাবেই গড়িয়ে চলে রাজনীতির চাকা।