সালটা ১৯৯৩, উত্তরপ্রদেশে তৈরি হল এক ‘নজিরবিহীন’ জোট। বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে একে অপরের হাত ধরে ফেলল সপা ও বসপা। কিন্তু সে রাজ্যের দুই শীর্ষ দলের ‘বন্ধুত্ব’ বেশিদিন টিকল না। ২ বছরের মাথাতেই মুলায়ম সরকার থেকে সমর্থন ফিরিয়ে নিলেন বহেনজি। তারপর তো সপা-বসপা মানেই দুই যুযুধান শিবির। সেই ‘বন্ধুত্ব’-এর যেন প্রত্যাবর্তন ঘটল শনিবার। আবারও লক্ষ্য সেই একটাই, বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করা। আর সেই লক্ষ্যপূরণ করতেই আবারও একে অপরের হাত ধরে নয়া সমীকরণ তৈরি করলেন অখিলেশ-মায়াবতীরা।
তাঁদের এই জোট ২০১৯ সালের ‘রাজনৈতিক বিপ্লব’, এভাবেই সপা-বসপা জোটকে বর্ণনা করেছেন মায়াবতী। পাশাপাশি তাঁদের জোটে মোদী-অমিত শাহের ‘রাতের ঘুম উড়ে যাবে’ বলেও মন্তব্য করেছেন বসপা নেত্রী। শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে জোটের কথা ঘোষণা করতে গিয়ে বহেনজি বলেছেন, ‘‘এই সাংবাদিক বৈঠকে গুরু ও চ্যালার রাতের ঘুম উড়ে যাবে।’’ লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে সপা-বসপা জোট সমীকরণে গেরুয়াশিবিরে যে স্নায়ুর চাপ বাড়ল, তা মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। সম্প্রতি তিন হিন্দি বলয়ে মোদী বাহিনীর ভোট ভরাডুবির পর রাজ্যস্তরে এমন বিরোধী ঐক্যের জেরে উনিশের লড়াই বিজেপির জন্য কঠিন হবে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।
১৯৯৩ সালেও একে অপরের হাত ধরেছিল সপা-বসপা। কিন্তু বেশিদিন উত্তরপ্রদেশের ওই দুই প্রধান দল নিজেদের হাত ধরে রাখতে পারেনি।দুবছর বাদেই ১৯৯৫ সালে সেই জোট ভেঙে যায়। অতীতের সেই পুনরাবৃত্তি উনিশের জোটে যে হবে না, সেকথা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন অখিলেশ-মায়াবতীরা। বাবুয়ার বুয়া বলেছেন, তাঁদের এই জোট ‘স্থায়ী’। বিধানসভা ভোটেও তাঁরা একসঙ্গে ভোটের ময়দানে লড়বেন। অন্যদিকে বাবুয়া বলেছেন, মায়াবতীকে অপমান করা মানে তাঁকেও অপমান করা। অর্থাৎ, বুয়া-বাবুয়ার এই ‘সম্পর্ক’-এ ফাটল ধরার যে কোনও সম্ভাবনা নেই, সেকথাই ঠারেঠোরে বুঝিয়েছেন দুই রাজনৈতিক নেতা।
আরও পড়ুন, অখিলেশ-মায়াবতীদের জোটে ঠাঁই পেতে এখনও আশাবাদী আরএলডি
মায়াবতীকে কি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সমর্থন করবেন অখিলেশ? সপা নেতার জবাব, ‘‘আপনারা জানেন কাকে আমি সমর্থন জানাব। আগেও বলেছি, আবারও বলব, খুশি হব, যদি উত্তরপ্রদেশ থেকে কেউ প্রধানমন্ত্রী হন।’’
অন্যদিকে, জোট ঘোষণা করতে গিয়ে বিজেপি সরকারকে কার্যত তুলোধনা করেছেন বুয়া-বাবুয়া। বিজেপি আমলে উত্তরপ্রদেশ ‘জাতিপ্রদেশে’ পরিণত হয়েছে বলে কটাক্ষ করেছেন মুলায়ম পুত্র। তিনি বলেছেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে কৃষকদের আত্মহত্যার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, জাতের ভিত্তিতে এনকাউন্টার হচ্ছে, যেখানে বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। সব নিষ্ঠুরতার অবসান ঘটাবে এই জোট।’’
দুই বিরোধী দলের জোটে কেন কংগ্রেস নয়? এ ব্যাপারে অবশ্য সোজাসাপটা জবাব দিয়েছেন মায়াবতী। বসপা নেত্রীর স্পষ্ট জবাব, ‘‘কংগ্রেস হোক কিংবা বিজেপি, সব এক। অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, কংগ্রেসের ভোট আমাদের ঝুলিতে আসে না। হয়তো এটাই কংগ্রেসের চাল, তাদের ভোট বিজেপিতে যায়। ফলে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে কোনও লাভ নেই।’’ লখনউয়ে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে মায়াবতী আরও বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল, আর আজ বিজেপির জন্য অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে দেশে।’’
অন্যদিকে, সপা-বসপা জোটে ঢুকতে মরিয়া আরএলডি। এ নিয়ে যদিও মুখে কুলুপ এঁটেছেন অখিলেশ-মায়াবতী। সপা-বসপা জোটে ঢোকার ব্যাপারে এখনও আশাবাদী আরএলডি। যদিও সপা প্রধান বলেছেন, মিটমাট করার জন্য তিনি তৈরি।
উত্তরপ্রদেশে ৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৮টি আসনে একসঙ্গে লড়বে সপা-বসপা। ২টি আসন রাখা হয়েছে ছোট দলগুলির জন্য। উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেসি ঐতিহ্যের কথা স্মরণে রেখে রায়বরেলি এবং আমেঠি কেন্দ্রে আগামী লোকসভা নির্বাচনে কোনও প্রার্থী দেবে না সপা-বসপা জোট। ওই দুই কেন্দ্রে কার্যত একচ্ছত্র আধিপত্য সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীর।
Read the full story in English