নীল বাড়ি দখলের স্বপ্নে বিভোর পদ্ম শিবির। নেপথ্যের কারিগর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রচারকরা। বাংলায় লোকসভায় সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। তারপরই গেরুয়া বাহিনীর পাখির চোখ বঙ্গ বিজয়। এই কাজে সুচারুভাবে কাজে লাগানো হয়েছে শিব প্রকাশ ও অরবিন্দ মেননকে। দু'জনেই আরএসএস প্রচারক থেকে রাজনীতির ময়দানে। লোকসভার পর থেকেই এঁরা বাংলায় বিজেপির ভিত মজবুতে নীরবে কাজ করে চলেছেন।
২০১৪ সালের লোকসভার আগে আরএসএস থেকে বিজেপিতে আসেন শিব প্রকাশ। তাঁর দায়িত্বে ছিল পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে দলীয় সংগঠনের ভার। সেই পরীক্ষায় লেটার পেয়ে উত্তীর্ণ হন শিব প্রকাশ। তারপরই বিজেপির সর্বোচ্চ নেতৃত্বের তাঁর উপর আস্থা বাড়তে থাকে। সর্ব ভারতীয় বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা দলের দায়িত্বে আসার পর পরই শিব প্রকাশকে বাংলা সহ মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানায় সাংগঠনিক দায়িত্বে আনা হয়। তবে অবশ্যই ফোকাশে পশ্চিমবঙ্গ।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে প্রকাশ জানিয়েছেন, দায়িত্বে পেয়ে ৬০ শতাংশ সময় তিনি অতিবাগিত করছেন বাংলায়। গত চার মাসে কেবল দলীয় বৈঠকে অংশ নিতে দিল্লি গিয়েছেন তিনি। বাকি সময়টা এ রাজ্যেই কাটিয়েছেন দলের কাজে। এতদিনে বাংলাটাও রপ্ত করে ফেলেছেন তিনি। সরগড় করে ফেলেছেন রাজ্য রাজনীতির নানা তথ্য।
মোরাবাদের ঠাকুর পরিবারের ছেলে শিব প্রকাশ ১৯৮৬-তে আরএসএস-র প্রচারক হন। তাঁকে প্রথমে উত্তরাখণ্ডের প্রচারক করে পাঠানো হয়। পরে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্র প্রচারকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর ২০১৪ সালে তাঁর নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশেও মেলে সাফল্য। পুরস্কার হিসাবে বিজেপির যুগ্ম সম্পাদক করা হয় তাঁকে। প্রথমে তাঁকে ওড়িশার দায়িত্বে পাঠানো হলেও দলের নির্দেশ বাংলার দায়িত্বভার নেন শিব প্রকাশ। কয়েক মাস যেতে না যেতেই পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির পর্যবেক্ষক করা হয় তাঁকে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদ কৈলাস বিজয়বর্গীয় বাংলায় দলের সংগঠনের দায়িত্বে। তবে কেন ফের পর্যবেক্ষক করে আনা হল শিবপ্রকাশকে? গেরুয়া শিবিরের খবর, কৈলাশ নানা সময় দলীয় কর্মসূচির দেখভাল করেন। ফলে সংগঠন দেখা সবসময় তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সংগঠনের তৃণমূল স্তরকে মজবুত করতেই এ রাজ্যে আনা হয় শিব প্রকাশকে।
২০১৫ সালে যখম প্রথম শিব প্রকাশ বাংলায় পা রাখেন তখন রাজ্যের প্রায় ৭৮ হাজার বুথের প্রায় ৭০ ভাগেই বিজেপির কোনও কমিটি ছিল না। কিন্তু শিব প্রকাশের দেখানো পথে আপাতত বাংলায়র প্রায় সব বুথেই পদ্ম বাহিনীর লোক রয়েছে। তাঁর খাতয়, 'লোকসভার আগে এবং পরে বিজেপি নিয়ে ভয় ছিল বাংলার মানুষের। কিন্তু এখন তা কেটেছে। উল্টে দলে দলে এখন পদ্ম পতাকা ধরতে মরিয়া।'
দলের সংগঠন মজবুতে আরএসএস-য়ের শিক্ষা প্রকাশকে অনেকটাই সহায়তা করেছে বলে দাবি তাঁর। তাঁর দৌত্যেই অন্য রাজ্য থেকে বাংলায় এসে প্রচারে সামিল হচ্ছেন আরএসএস-এর অন্যন্য প্রচারকরা। যেমন উত্তরপ্রদেশ থেকে সুনীস বনশাল ও বিহারের রত্নাকর পাণ্ডে।সুরক্ষা কর্মী ছাড়াই বাংলায় হিংসাদীর্ণ অঞ্চলগুলোতেও গিয়েছেন প্রকাশ। এক্ষেত্রে তাঁর লো প্রোফাইল ইমেজ অনেকটাই কাজের সহায়ক হয়েছে।
আরেক আরএসএস প্রচারক অরবিন্দ মেননও নীরবে বাংলায় বিজেপির ভিত মজবুতে কাজ করে চলেছেন। প্রথমে এবিভিপি কর্মী, পরে যুব মোর্চার সদস্য হন মেনন। সেই সময়ই মালায়ালি নাইয়ার পরিবারের ছেলেটির প্রথম বাংলায় পদার্পণ। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের খুব কাছের মানুষ মেনন। তবে, নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় ২০১৬ সালে দিল্লিতে চলে যান মেনন। ২০১৭-য় গুজরাটের ভোটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেলিলেন তিনি।
২০১৮ সালে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক করা হয় অরবিন্দ মেননকে। পরে তাঁকে বাংলায় পাঠানো হয়। কলেবরে বাড়ছে দল। নব্য ও আদি বিবাদও প্রকট হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয় মেননকে।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন