সিঙ্গুরের তাপসী মালিকের কথা মনে আছে? তাপসীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর রাজ্যজুড়ে আন্দোলনের ঢেউ তুলেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচন এলেই ঘাসফুল শিবিরের হয়ে প্রচারে ঝড় তুলতেন তাঁর বাবা মনোরঞ্জন মালিক। এবার আর তিনি তৃণমূলের হয়ে প্রচার করতে চাইছেন না। তাপসী মালিকের বাবা মনোরঞ্জনবাবু বাজেমেলিয়ায় বাড়িতে বসে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রতিনিধিকে জানালেন তাঁর আক্ষেপের কথা। তিনি জানান, দলে এখন তাঁর প্রয়োজন ফুরিয়েছে।
সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের কথা উঠলে প্রথমেই নাম উঠে আসে তাপসী মালিকের। ২০০৬-এর ১৮ ডিসেম্বর ভোরে টাটার অধিগৃহীত জমিতে আধ-পোড়া বিকৃত দেহ উদ্ধার হয়েছিল তাপসীর। অষ্টাদশীকে খুন ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল সিপিএম নেতাদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত সুহৃদ মল্লিক ও দেবু মালিক গ্রেফতারও হয়েছিলেন। সিঙ্গুর কৃষি জমি রক্ষা কমিটির আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন তাপসী মালিক। বাড়ির ৫০ মিটারের মধ্যে হয়েছে শহিদ বেদী।
সিঙ্গুরের তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন বেচারাম মান্না। পাশের কেন্দ্র হরিপালে তৃণমূল প্রার্থী করেছে তাঁর স্ত্রী করবী মান্নাকে। ভোটের লড়াই শুরু, প্রচারে নামবেন কবে থেকে? এবার চক্ষু চড়কগাছ মনোরঞ্জন মালিকের। তাপসীর বাবা বলেন, "দিদিমনি যেটা ভাল বুঝেছেন তাই করেছেন। আমি দিদিমনির ওপরে যাব না। যেতেও পারি না। একসময় আমি ছাড়া চলত না। প্রতিটি মঞ্চে আমি বক্তব্য রেখেছি। এখন আর আমাকে ডাকেও না। সাফ কথা এর বেশি বলতে পারব না।"
আরও পড়ুন : দক্ষিণে যখন ভাঙছে তৃণমূল, তখন পাহাড়ে কি TMC-GJM ফ্যাক্টরে খেলা হবে?
প্রচারের কথা বলতে গিয়ে অতীতের কথা তুলে ধরেন মনোরঞ্জন মালিক। তিনি বলেন, "দিদি আমাকে ডাকলে যাব, না ডাকলে যাব না। কলকাতায় হেন ওয়ার্ড নেই যেখানে প্রচার করিনি। দিদির ওয়ার্ড, দক্ষিণ কলকাতাসহ সর্বত্র একটা ওয়ার্ডও বাদ নেই। প্রত্যেক দিন ১০-১২টা করে সভা করতাম। মাঝে-মধ্যে মাথা গরম হয়ে যায়। খাটিয়ে খাটিয়ে শেষ করে দিয়েছে। গলা শুকিয়ে গিয়েছে। এখন দোকানে বসে ছটফট করছি। ক্ষোভ আছে, সবটা প্রকাশ করব না। কার জন্য আমি খাটব বলুন তো?"
আক্ষেপের কোনও শেষ নেই মনোরঞ্জনবাবুর। তাঁর পাকা বাড়ি নিয়েও অনেকে অভিযোগ তোলেন। সেকথাও জানেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, "দুই ছেলে ঋণ নিয়েছে। সেই টাকায় এই বাড়ি।" মনোরঞ্জন মালিক বলেন, "দিদি অনেককেই চাকরি দিয়েছেন। শুধু আমাদের পরিবারের কথাই কেন ওঠে? সেটাই বোধগম্য হয় না। খুব কষ্ট লাগে। জীবনের মায়া করিনি যে জায়গায় গিয়েছি।"
আরও পড়ুন : ‘মুকুলদার অনুরোধেই বিজেপিতে’, তৃণমূলের মূল ভাঙছেন এই প্রাক্তনী?
শহিদ দিবসে এখন আর তৃণমূল নেতৃত্বের উৎসাহ চোখে পড়ে না। দলীয় নেতৃত্ব কী এখন আর যোগাযোগ রাখে? চোখে-মুখে একরাশ হতাশা নিয়ে মনোরঞ্জন মালিক বলেন, "কী বলব? তখন প্রয়োজন ছিল। এখন প্রয়োজন নেই। সময় শেষ। এখন আর সেরকম আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না।"
কিছু দিন আগেও জোর জল্পনা চলছিল মনোরঞ্জন মালিক বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। সত্যিই কী বিজেপিতে ভিড়বেন? তাঁর জবাব, "আমি বসে যাব তাও ভাল কোনও দলে আমি যাব না। আমি বিজেপিতে যাব না। আমাকে দিল্লিতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। দল পরিবর্তন করব না। দল ছাড়লেও মুশকিল। দিদিকে আমি ভালবাসি, এই পর্যন্ত।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন