ভোট নিয়ে উত্তেজনা ছিলই। তবে তা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের। কিন্তু সেই উৎসব যে রাঙা হয়ে উঠবে রক্ত জড়ানো প্রাণে তা স্বপ্নে দূর, দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনি কেউ। কিন্তু একুশের ভোটই প্রাণ কাড়ল কোচবিহার জেলার শীতলকুচি এলাকার জোরপাটকি গ্রামের ৪ সন্তানের।
চতুর্থ দফার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী (সিআইএসএফ)-এর গুলিতেই রক্তাক্ত হল নির্বাচন, শনিবারই একথা স্বীকার করেছে কমিশন। প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, সিআইএসএফ সদস্যরা একটি ১২ বছর বয়সী ছেলেকে হেনস্তা করছিল, এমন অভিযোগ শুনে গ্রামবাসীরা ঘেরাও করে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। এরপরই গুলি ছোঁড়ে নিরাপত্তা কর্মীরা।
আমতলী স্কুলে গ্রামবাসী সোফিউদ্দিন মিয়া বলেন, “আমরা শুনেছি কেন্দ্রীয় বাহিনীর একটি দল ১২ বছর বয়সী মৃণাল হককে মারধর করেছে। তার পরই গ্রামের সবাই ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। পুরুষ এবং মহিলারা সবাই ভোটকেন্দ্রে জড়ো হয়েছিল। ধাক্কাধাক্কা, ঝামেলা শুরু হয় তখনই। বিপুল জনতা গিয়ে সেই সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘিরে ধরে। আমিও সেই সময় দৌড়ে গেলাম স্কুলের মাঠের বাইরে এবং তখনই আমি গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছি। এই বুথে ৯৫০ জন ভোটার রয়েছেন এবং আমিও তাদের একজন।"
আরও পড়ুন, শীতলকুচিতে নজিরবিহীন গণহত্যা হয়েছে’, কমিশনকে তোপ মমতার
নিহতরা হলেন- হামিদুল মিয়া (৩১), মনিরুজ্জামান মিয়া (২৮), সামিউল হক (১৮) এবং নূর আলম মিয়া (২০)। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে যে রবিবার তাদের অন্ত্যোষ্টি ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারানো হামিদুল ছিলেন একজন পরিযায়ী শ্রমিক। মাথাভাঙ্গায় অনেক সময় রাজমিস্ত্রি কিংবা সাহায্যকারী হিসাবে কাজ করতেন। সিকিমেও যেতেন কাজের জন্য। বাড়িতে রয়েছে তাঁর বাবা-মা, স্ত্রী এবং একটি তিন বছর বয়সী সন্তান। হামিদুলের শাশুড়ি মফিয়া বিবি বলেন, “আমরা আমার জামাইয়ের দেহ দেখতে হাসপাতালে ছুটে এসেছি। আমার মেয়ে এবং তার তিন বছরের বাচ্চাদের জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে। কোনও কিছু করেই তো আর ফিরিয়ে আনতে পারব না। আমাদের এই কষ্ট, যন্ত্রণা সারাজীবনেও ভুলব না।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন