মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এবার মুখ খুললেন কংগ্রেসের সংসদীয় দলনেত্রী সোনিয়া গান্ধী। বুধবার সংসদীয় দলের সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির সরকার "প্রতারণা, তর্জন-গর্জন, এবং ভীতি প্রদর্শনের" নীতিতে বিশ্বাসী। তাঁর আরও বক্তব্য, "সত্য এবং স্বচ্ছতাকে নির্লজ্জভাবে দূরে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে।"
গত পাঁচ বছরে দেশের ওপর অভূতপূর্ব আর্থিক এবং সামাজিক চাপ পড়েছে, দাবী সোনিয়ার। "আমাদের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো ও ধর্মনিরপেক্ষতার মূলে পরিকল্পনা করে আঘাত হেনেছে মোদী সরকার। আমাদের সংবিধানে বর্ণিত মূল্যবোধ, নীতিবোধ, এবং সমস্ত বিধান মোদী সরকারের ক্রমাগত আক্রমণে জর্জরিত," বলেন ইউপিএ-র অধ্যক্ষ। তিনি আরও দাবী করেন, মোদী সরকার দেশের "বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে, বিরোধী দলের সদস্যদের নিগ্রহ করছে, এবং মতবিরোধের কণ্ঠরোধ করছে"।
তাঁর কথায়, "বাকস্বাধীনতা - যা কিনা আমাদের সবচেয়ে মৌলিক অধিকার - আজ সঙ্কুচিত এবং স্তব্ধ। যাঁরাই শাসকদলের বিপরীত মত পোষণ করেন, তাঁরাই নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। সারা দেশে সর্বব্যাপী ভয় এবং অশান্তির আবহ ছড়িয়ে পড়েছে। উত্তর পূর্বাঞ্চল জ্বলছে। জম্মু কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবোধ সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে গেছে। দলিত, আদিবাসী, এবং সংখ্যালঘুদের নিশানা করা হচ্ছে। কৃষকরা অভূতপূর্ব দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছেন। দেশের যুবসমাজ হতাশার অতলে তলিয়ে যাচ্ছে, কারণ চাকরি ক্ষেত্রে যে হারে ধ্বংসলীলা চলছে, তা আমরা আগে কখনো দেখিনি।"
আরো পড়ুন: সংসদে বিরোধী ঐক্যের ছবি, তৃণমূলের বিক্ষোভে রাহুল গান্ধী
সভায় উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি রাহুল গান্ধী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, দলীয় নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে, এবং অন্যান্যরা।
সংসদ এবং সমস্ত সংসদীয় প্রক্রিয়া পর্যন্ত এই সরকারের শাসনে আজ বিপন্ন, বলেন সোনিয়া গান্ধী। "খোদ সংসদ সীমাহীনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।আলোচনা এবং বিতর্কের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী কমিটি নামক প্রতিষ্ঠানটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মানি বিল (Money Bill), যাকে সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতি পর্যন্ত 'সংবিধানের বিরুদ্ধে প্রতারণা' বলে বর্ণনা করেছেন, যেভাবে চালিত করা হলো, সে পথেই আরও অনেক বিল চালনা করা হয়েছে, স্রেফ সংসদের দুই ভবনের নজর এড়াতে।"
নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে ছলচাতুরীর সাহায্যে ক্ষমতায় এসেছেন, এই ইঙ্গিত দিয়ে সোনিয়া বলেন, "বর্তমানে এটা প্রায় সর্বজন স্বীকৃত যে ২০১৪-র জনাদেশ প্রতারিত হয়েছে। আমি ব্যাপারটা একটু অন্যভাবে দেখি। ওই জনাদেশ পাওয়াই গিয়েছিল ছলনা এবং শঠতার দ্বারা, মানুষকে বিভ্রান্ত করে। আগে হোক পরে হোক, এই শঠতা ধরা পড়তই। ঠিক তাই হয়েছে।"
প্রবীন কংগ্রেস নেত্রী আরও বলেন, গত বছরের শেষের দিকে তিন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে আসন্ন লোকসভা নির্বাচন সম্পর্কে অত্যন্ত প্রত্যয়ী। "রাজস্থান, ছত্তিসগড়, মধ্য প্রদেশে আমাদের জয়ের পর, আমরা লোকসভা নির্বাচনে পুনরুজ্জীবিত হয়ে নামব," ঘোষণা করেন তিনি।
Read the full story in English