ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ভোট এবং ভোটার ভেরিফাইয়েবল পেপার অডিট ট্রেল (ভিভিপিএটি) স্লিপের ১০০ শতাংশ ক্রস-চেকিংয়ের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট আজ তার রায় ঘোষণা করতে পারে। ১৮ এপ্রিল, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ ৫ ঘন্টা আইনজীবী এবং নির্বাচন কমিশনের যুক্তি শোনার পরে তাঁদের সিদ্ধান্ত সংরক্ষণ করে।
ভিভিপ্যাট-ইভিএম ১০০ শতাংশ মেলানোর আর্জি, কমিশনের কাছে এই বিষয়ে কাছে ব্যাখ্যা শীর্ষ আদালত। শুনানিকালে নির্বাচন কমিশনের কাছে চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ আজ সকালে নির্বাচন কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে দুপুর ২টায় আদালতে হাজির হতে বলেছে।
আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ, গোপাল শঙ্করানারায়ণ এবং সঞ্জয় হেগড়ে উপস্থিত ছিলেন। প্রশান্ত ভূষণ অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (ADR)-এর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনিন্দর সিং এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা উপস্থিত ছিলেন। VVPAT-এর মাধ্যমে প্রতিটি ভোটের যাচাইয়ের দাবিতে আবেদনের বিষয়ে কমিশনের কাছে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছে। আজ দুপুর ২ টায় কমিশনের কর্তাদের আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভোটার ভেরিফাইয়েবল পেপার অডিট ট্রেল (ভিভিপিএটি) সহ ইভিএম ব্যবহার করে প্রদত্ত সমস্ত ভোটের যাচাইকরণের আবেদনের উপর বুধবার অর্থাৎ আজকে সুপ্রিম কোর্ট তার রায় ঘোষণা করতে পারে । রায় দেওয়ার আগে এ বিষয়ে ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাছে কিছু ব্যাখ্যা চেয়েছে আদালত। এছাড়াও এর কর্মকর্তাকে আজ দুপুর ২টায় আদালতে হাজির হয়ে কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ ১৮ এপ্রিল সিদ্ধান্ত সংরক্ষণ করেছিল। নির্বাচনী ব্যবস্থায় ভোটারদের সন্তুষ্টি এবং আস্থার সর্বোচ্চ গুরুত্ব বিবেচনা করে, সুপ্রিম কোর্ট শুনানির সময় আবেদনকারীদের বলেছিল যে সবকিছু নিয়ে সন্দেহ করা উচিত নয়।
গত শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে বলেছিল, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় শুদ্ধতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা বিস্তারিত জানাতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ বলেছে যে এটি একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া। এর মধ্যে পবিত্রতা থাকতে হবে।
আবেদনকারীর আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ অভিযোগ করেছেন, যে দুটি সরকারী সংস্থা ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড এবং ইলেকট্রনিক্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার পরিচালকরা বিজেপির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। অন্য আবেদনকারীর আইনজীবী দাবি করেছেন যে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে, একটি সংসদীয় কমিটি ইভিএমে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছিল, তবে নির্বাচন কমিশন এখনও এই বিষয়ে কোনও উত্তর দেয়নি। দুই ঘণ্টাব্যাপী শুনানি চলাকালে অনেক আবেদনকারী আদালতে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
আজ সিদ্ধান্তের আগে VVPAT নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্ন করেছে আদালত। কন্ট্রোল ইউনিটে মাইক্রো কন্ট্রোলার আছে কিনা তা জানতে চেয়েছেন আদালত। দুপুর ২টায় শুনানির সময় এ বিষয়ে জবাব দেবে কমিশন। গত শুনানিতে, আদালত নির্বাচন কমিশনকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে ভোট দেওয়ার পরে ভোটারদের VVPAT স্লিপ দেওয়া যাবে না কি না। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন বলেছে – ভোটারদের ভিভিপিএটি স্লিপ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট ঝুঁকি রয়েছে। এতে ভোটের গোপনীয়তা নষ্ট হবে এবং বুথের বাইরে এর অপব্যবহার হতে পারে।
এর আগে ১৬ এপ্রিল এই মামলার শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্ট নিজের পর্যবেক্ষণে বলেছিল, যতক্ষণ না কোনও মানুষের হস্তক্ষেপ আসে, ততক্ষণ ইভিএম-এর ফলাফল সঠিকই আসবে। পাশাপাশি ব্যালটের যুগে যে আর ফেরা যাবে না, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
এদিকে মামলাকারী অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মসের বক্তব্য, প্রতিটি বিধানসভায় ২০০টি ভিভিপ্যাট মেশিন থাকলেও ৫টির বেশি গণনা হয় না। তাদের দাবি ছিল, জালিয়াতির সম্ভাবনা রুখতে ভিভিপ্যাট স্লিপ সংগ্রহ করে ব্যালট বাক্সে ফেলার সুযোগ দেওয়া উচিত ভোটারদের।
এদিকে ইউরোপে ব্যালটে ভোট হওয়ার উদাহরণ তুলে ধরা হলে বিচারপতি দীপঙ্কক দত্ত বলেছিলেন, 'একটা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করবেন না। এমন উদাহরণও দেবেন না যা আমাদের দেশের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। ইউরোপের উদাহরণ এখানে কাজ করবে না।' বেঞ্চের অপর বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বলেন, 'ভারতে ভোটারের সংখ্যা ৯৭ কোটি। ব্যালট জমানায় কী ঘটত, সেটা আমরা সবাই জানি। আপনি ভুলে যেতে পারেন, কিন্তু আমরা ভুলিনি।'