Exclusive: আঁধারেই দিন কাটে জঙ্গলমহলের শবরদের

কোনও বাড়িতেই বিদ্যুৎ নেই। এখানে উন্নয়নের ছোঁয়ায় ভরসা একমাত্র কেরোসিনের ল্যাম্প, হ্যারিকেন।

কোনও বাড়িতেই বিদ্যুৎ নেই। এখানে উন্নয়নের ছোঁয়ায় ভরসা একমাত্র কেরোসিনের ল্যাম্প, হ্যারিকেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

এক্সপ্রেস ফটো- পার্থ পাল

কেমন আছেন বাঁকুড়ার শবররা? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা হাজির হয়েছিল বাঁকুড়ার রানিবাঁধের কাটিয়াম গ্রামে। অলস দুপুরে গ্রামের যুবরা মাচায় বসে আড্ডা দিচ্ছে, কেউ বা ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কী তাঁদের পেশা, দিন কাটছে কীভাবে, পড়াশুনার হালই বা কী? 'উন্নয়ন'-এর খতিয়ান দিলেন শবর গ্রামের বাসিন্দারা।

Advertisment

সন্ধ্যে নামতেই জঙ্গল-লাগোয়া এই গ্রাম ঘন অন্ধকারে ঢেকে যায়। তবে বিদ্যুতের খুঁটি, আছে কভার দেওয়া বৈদ্যুতিক তার। শুধু কোনও বাড়িতেই বিদ্যুৎ নেই। এখানে উন্নয়নের ছোঁয়ায় ভরসা একমাত্র কেরোসিনের ল্যাম্প, হ্যারিকেন। উজালা প্রকল্পের কথা জানা নেই তা নয়, কিন্তু পরবর্তী রান্নার গ্যাস কেনার অর্থ কোথায় মিলবে? তাই সেই প্রকল্পেরও অংশীদার হয়নি গ্রামের বাসিন্দারা।

publive-image
এক্সপ্রেস ফটো- পার্থ পাল

কাজের দিন গ্রামের মানুষজন আড্ডা দিয়েই সময় কাটাচ্ছেন। কেন কাজ নেই? ২৮ বছরের যুবক সুনীল শবরের জবাব, "কী আর করব? কোনও জমি নেই। আমাদের জঙ্গলই একমাত্র ভরসা। বর্ধমানে চাষের কাজ থাকলে যেতে হয়। বাকি সময় এভাবেই কেটে যায়। আলু তোলার সময় দিন প্রতি ২০০টাকা, ধান কাটার সময় ১৮০টাকা সঙ্গে ২কেজি চাল। সুনীল শবরের বাড়িতে রয়েছেন মা, ভাই, স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে।" "উজালা গ্যাসের কানেকশন নিয়ে কী হবে? দ্বিতীয়বার থেকেই রান্নার গ্যাস কিনতে টাকা কোথায় পাব।" বলেন, সুনীল।

Advertisment
publive-image
এক্সপ্রেস ফটো- পার্থ পাল

এই গ্রামের শবরদের সকলেরই পেশা এক। বাণেশ্বর শবরও সিজনে বর্ধমানে ধান কাটতে যান। বাণেশ্বর বলেন, "জঙ্গলে গিয়ে বেল সংগ্রহ করা। তিনটে বেল বিক্রি হবে ১০টাকা। এটাই রোজগার। রোজ দিন তো আর জঙ্গলে যাওয়া হয় না।" সরামনি শবরের কথায়, "কারও কারও ছাগল, মুরগি আছে।" গ্রামে কিছু লোকের মোবাইল আছে। পাশের গ্রামে ৫টাকার বিনিময়ে মোবাইল চার্জ করাতে যায় গ্রামবাসীরা।

কেন গ্রামে বিদ্যুত নেই? গ্রাামবাসীরা একযোগেই জানিয়ে দেয়, "বিদ্যুতের বিল বাকি পড়েছিল তাই লাইন কেটে দিয়েছে। খাওয়ারই পয়সা নেই, কী করব? সরকার নানা খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। আর বিদ্যুতের জন্য পড়াশুনা করতে পারছে না আমাদের বাড়ির ছেলে-মেয়েরা। কী ভাবে উন্নয়নের মুখ দেখব?"

publive-image
এক্সপ্রেস ফটো- পার্থ পাল

রানিবাঁধ হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছে প্রশান্ত শবর। প্রশান্তই গ্রামের দ্বিতীয়জন, যে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়েছে। রাজ্য সরকারের সবুজসাথী প্রকল্পের সাইকেল চড়েই ৩কিলোমিটার দূরের স্কুলে যাতায়াত প্রশান্তের। লাজুক প্রশান্ত জানিয়েছে, সে দিনের আলোতেই পড়াশুনা করে। ঘরে বিদ্যুতের আলো না থাকায় রাতে পড়াশুনা বন্ধ রাখতে হয়। তবে আলোহীন, জীবিকার সঠিক পথহীন গ্রামে ঢালাই রাস্তা রয়েছে। আছে আইসিডিএস সেন্টারও। সুনীল বলেন, "আগে জঙ্গলপার্টির লোকেরা গ্রামে আসত। আমাদের জঙ্গলে নিয়ে যেত। জানতে চাইত গ্রামে কী কী অসুবিধা আছে। এখন তাঁরা আর আসে না।"

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

West Bengal