নরেন্দ্র মোদীকে ফের প্রধানমন্ত্রীর পদে বসাতেই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দেশ জুড়ে ভোট হবে। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে গেরুয়া বাহিনীর ভোটের ইস্যু ভিন্ন। ২০১৯ সালে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের রাজ্যে ভোট হবে পুনরায় 'সোনার বাংলা' গড়ার স্বপ্ন সফল করতে। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির সভা থেকে মঙ্গলবার এমনটাই ঘোষণা করলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বড় সাফল্য পাওয়ার মাধ্যমে বিজেপি যে আদপে এ রাজ্যে সরকার গড়ার স্বপ্ন দেখছে, অমিত শাহর এদিনের বক্তৃতা থেকে তা স্পষ্ট।
শাহর এদিনের বক্তৃতার অনেকটা জুড়ে থেকেছে সোনার বাংলা গড়ার ডাক এবং রাজ্যের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনার আবেগ। 'বন্দে মাতরম'-এর রচয়িতা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যে কাঁথির ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট (ডিএম) ছিলেন, সেই মাটিতে দাঁড়িয়ে মোদীর প্রধান সেনাপতির প্রতিশ্রুতি, বিজেপি-কে ক্ষমতায় আনলে রবীন্দ্রনাথ, চৈতন্য মহাপ্রভুর বাংলাকে ফিরিয়ে আনা হবে। রাজ্যে সরস্বতী পুজো এবং দুর্গা বিসর্জনে বাধা দেওয়া হয় বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অমিত শাহ। শাসনভার বিজেপি-র হাতে গেলে অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে এবং হিন্দু, বৌদ্ধ শরণার্থীরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন বলেও জানিয়েছেন শাহ। সংসদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ সংক্রান্ত নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলকে সমর্থন করবেন কী না, সে প্রশ্নও ছুড়ে দিয়েছেন পোড় খাওয়া রাজনীতিক।
আরও পড়ুন- উরি! স্মৃতির উদ্যোগে রাহুলের আমেঠিতে মোবাইল থিয়েটার
মমতা সরকারকে দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, ঘুষ সংস্কৃতির প্রশ্নে বিদ্ধ করার পাশাপাশি কেন্দ্রের প্রকল্পের ওপর নিজদের 'সিলমোহর' লাগানোর অভিযোগও করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়েই মমতা আয়ুষ্মান ভারতের মতো প্রকল্প থেকে রাজ্যকে সরিয়ে নিয়েছেন বলেও দাবি শাহর। তাঁর ভবিষ্যৎবাণী, এসবের জবাব ভোট গণনার দিন সকাল ৯টা থেকেই পেতে শুরু করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কংগ্রেস রাজনীতিতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর পদার্পণকেও তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন অমিত শাহ। তাঁর দাবি, অতীতে সোনিয়া-রাহুল জমানায় কংগ্রেস টুজি দুর্নীতিতে জড়িয়েছিল। কিন্তু এবার 'প্রিয়াঙ্কা জি' দলে যোগ দেওয়ায় 'থ্রিজি' অর্থাৎ আরও বড় ও দীর্ঘস্থায়ী দুর্নীতি করার পরিকল্পনা করছে কংগ্রেস। কংগ্রেসকে ফের একবার পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি করার জন্য কাঠগড়ায় তুলেছেন বিজেপি সভাপতি। এদিকে, তৃণমূলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের কথা বলে মমতাকেও পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য এক হাত নিয়েছেন তিনি। কংগ্রেসের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া তৃণমূল কংগ্রেসও যে আদপে একই মুদ্রার ভিন্ন পিঠ, সে কথা এদিন বারবার জোরের সঙ্গে বলেছেন শাহ।
আরও পড়ুন- জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধের পোস্টার বয়
উল্লেখ্য, ২২ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) মালদা জেলায় সভা করেছিলেন অমিত শাহ। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই এদিন কাঁথির সভা। গান্ধী পরিবার এবং পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির প্রসঙ্গ বাদ দিলে শাহর দুই বক্তৃতাই হুবহু এক। এই দুই সভাতেই মূলত নাগরিকত্ব বিল এবং মমতা সরকারের অপশাসনকে বক্তৃতার বিষয়বস্তু হিসাবে বেছে নিয়েছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি। রাজনৈতিক মহলের মতে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলা-সহ পূর্ব ভারত থেকেই সবচেয়ে বেশি আসন জেতার আশা করছে বিজেপি। সে ক্ষেত্রে এ রাজ্যে অনুপ্রবেশ এবং নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলই যে গেরুয়া ব্রিগেডের প্রধান ইস্যু তা ফের স্বীকৃতি পেল এদিনের পর।