এরাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বহিরাগত তত্ত্বে বিজেপিকে বধ করার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। কালীঘাটে প্রার্থী ঘোষণার সময়ও বহিরাগত ইস্যু নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণার পর বহিরাগত ইস্যুই ব্যুমেরাং হল তৃণমূলের কাছে। দলে নতুন করে উঠে এসেছে ভূমিপুত্র প্রার্থীর দাবি। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে ভূমিপুত্র অর্থাত স্থানীয় প্রার্থীর দাবি উঠেছে। 'বহিরাগত' প্রার্থীদের মানবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। বাংলা পক্ষের তরফ থেকেও এই দাবিকে জোরালো সমর্থন জানানো হয়েছে।
বিগত কয়েকদিন ধরেই বাংলার রাজনীতি উত্তাল 'বহিরাগত' ইস্যু নিয়ে। অমিত শাহ বহিরাগত, কৈলাস বিজয়বর্গীয় বহিরাগত এভাবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ক্রমাগত তোপ দেগে চলেছেন তৃণমূল যুবর সর্বভারতীয় সভাপতি সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও এই ইস্যুতে সরব। এবার একাধিক তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বহিরাগত তত্ব নিয়েও ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। এই দাবিতেই রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে কলকাতা লাগোয়া ভাঙড়ে। ভাঙা হয়েছে দলীয় কার্যালয়। বাঁকুড়ায় হয়েছে রাস্তা অবরোধ।
আরও পড়ুন- বাদ ৫ মন্ত্রী, টিকিট পেলেন না তৃণমূলের একাধিক হেভিওয়েটও
এদিন প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর উত্তাল হয়ে ওঠে ভাঙড়। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের দাবি, ভাঙড়ে ভূমিপুত্র আরাবুল ইসলামকে প্রার্থী করতে হবে। ঘোষিত প্রার্থীকে বাতিল করতে হবে। বাঁকুড়ার তৃণমূল নেত্রী শম্পা দরিপা বহিরাগত প্রার্থী নিয়ে সরব হয়েছেন। কলকাতার বহিরাগত প্রার্থীকে মেনে নেওয়া হবে না বলে বাঁকুড়ায় দাবি ওঠে। সায়ন্তিকা গো ব্যাক বলেও স্লোগান দেওয়া হয়। কেশিয়ারীর প্রার্থী নিয়ে সরব হয়ে তৃণমূল যুবর রাজ্য সম্পাদিকার পদ ছেড়েছেন কল্পনা সিট। শিলিগুড়িতে তৃণমূল নেতা নান্টু পাল সরব হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী নিয়ে। সেখানেও ভূমিপুত্র প্রার্থীর দাবি উঠেছে। কলকাতা লাগোয়া ব্যারাকপুরেও ক্ষোভ দেখা গিয়েছে প্রার্থীকে ঘিরে। ব্যারাকপুরের পুরপ্রশাসক উত্তম দাসও বহিরাগাত প্রার্থী নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি শীর্ষ নেতৃত্বকে। রাজ্যের বহু বিধানসভা কেন্দ্রে স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে ফুঁসছে শাসকদলের কর্মীরাই। তাঁরাই এখন 'বহিরাগত' প্রার্থী নিয়ে ক্ষুব্ধ। রাজনৈতিক মহলের মতে, বহিরাগত তত্বেই এখন চাপে পড়েছে তৃণমূল। দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও বাড়ছে । ফের দলবদলের খেলা জমে উঠতে পারে।
আরও পড়ুন- “ভবানীপুরে হারতেনই, নন্দীগ্রামে তিনগুণ ভোটে হারাব”, মমতাকে চ্যালেঞ্জ শুভেন্দুর
শুধু প্রকাশ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ নয়, দলের ভিতরে, সোশাল মিডিয়ায়ও অনেকে সরব হয়েছেন বহিরাগত প্রার্থী নিয়ে। বাংলা পক্ষের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কৌশিক মাইতি বলেন, "বাংলা চালাবে ভূমিপুত্ররা। বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে এসে বাংলা চালাতে পারে না। রাজ্য জুড়ে ৮ জন বহিরাগত প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে বাংলায় দিকে দিকে আওয়াজ উঠছে স্থানীয় প্রার্থী চাই, এটা খুব পজিটিভ ইঙ্গিত বলে আমরা মনে করছি। কারণ, বিধায়ক স্থানীয় স্তরে উন্নয়ন করবে, সারা বছর বিপদে আপদে মানুষের সঙ্গে থাকবে। এটা স্থানীয় প্রার্থী হলেই সম্ভব।" তাঁর প্রশ্ন, "কলকাতা থেকে কেন অন্যত্র গিয়ে প্রার্থী হবে?" ভূমিপুত্র প্রার্থীর দাবিকে জোরালো সমর্থন করছে বাংলা পক্ষ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন