Advertisment

ছিল তিন, হলো দুই; বোলপুরের তৃণমূল তারকাদের বৃত্তান্ত

তিনজনের বাড়ির অবস্থান একে অপরের এক কিলোমিটারের মধ্যে। সেই শহরেই থাকেন তিনজনের দলের বিখ্যাত এক অধিনায়ক, দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

একটা শহরে শাসক দলের তিনজন সাংসদ থাকেন, তিনজনের বাড়ির অবস্থান একে অপরের এক কিলোমিটারের মধ্যে। সেই শহরেই থাকেন তিনজনের দলের বিখ্যাত এক অধিনায়ক, দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এই অনুব্রতর সঙ্গে বাকি তিনজনের দেখা হয়েছিল একবার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক সফরকালীন। তারপর আর হয় নি। তবু তাঁরা দলেরই সাংসদ। বোলপুরে অনুব্রতর বাড়ি তো দূরের কথা, তৃণমূল কংগ্রেসের নবনির্মিত বিরাট জেলা দপ্তরেও তাঁদের দেখা মেলে না।

Advertisment

বোলপুর শান্তিনিকেতন এলাকার ছবিটা এইরকম। বিনয় ভবন সংলগ্ন এলাকায় থাকেন বোলপুরের সাংসদ অনুপম হাজরা, লোকসভার নির্বাচনী প্রচারের সময় দুবেলা থাকতেন অনুব্রতর কাছে। ভোটে জেতার পর দলের অফিস মাড়ান নি। বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনার কাজ করতেন, সাংসদ হওয়ার কারণে পেশা থেকে ছুটি নিয়েছিলেন। কয়েকমাস আগে সে কাজ ফিরে পেতে বিশ্বভারতীতে নিজের বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ধর্ণায় বসেন অনুপম, এমনকি তাঁর বাবা বিশ্ববিদ্যালয় আধিকারিকের ঘরের মেঝেতে গড়াগড়ি পর্যন্ত দেন।

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রী পুজো দেবেন, সরলেন মা তারা

সাংসদ এবং তাঁর বাবার ভূমিকায় বিব্রত ছিলেন দলের নেতারা। জেলার নেতা, দপ্তরকর্মী, বা এলাকাবাসী, সকলের থেকেই তিনি যে শুধু বিচ্ছিন্ন তাই নন, দলের মধ্যেই তাঁর সম্পর্কে নানা অভিযোগ ওঠে নানা ধরনের সম্পর্ক ঘিরে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর একাধিক মন্তব্য এবং বিভিন্নরকম ছবির কারণে বারবার বিতর্কে থাকা অনুপম দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় স্বস্তির হাওয়া বোলপুরের তৃনমূল দপ্তরে। দলের নেতারা বলছেন, "আমাদের নেতারা সিদ্ধান্ত ঘোষনা করে দিয়েছেন, সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে দল।"

হাতে রইলেন বীরভূমের সাংসদ অভিনেত্রী শতাব্দী রায়, প্রান্তিকের 'সোনার তরী' আবাসনে থাকেন। সেখান থেকে বীরভূমে গিয়ে দলের কাজ করেন। কিন্তু নির্বাচনী প্রচার ছাড়া কখনোই দলের সভা বা প্রচারে তাঁকে পান না দলের নেতা কর্মীরা। মাঝে মাঝে নির্বাচনী কেন্দ্রে আসেন। কিছুদিন আগে অনুব্রতকে 'কুকথার স্টার' আখ্যাও দিয়েছিলেন শতাব্দী। তবে অনুব্রত কখনই কোন মন্তব্য করেন নি তাঁর সম্পর্কে।

দলের অন্দরে ক্ষোভ, শতাব্দী বীরভূমের সাংসদ হলেও তাঁর সব গতিবিধি রামপুরহাট কেন্দ্রিক, তাঁকে পরিচালনা করেন দলেরই এক মন্ত্রী। যাঁর হাত ধরে শতাব্দী রায় রামপুরহাটে আসেন, তিনি আবার সারদা মামলায় জেলে যাওয়ায় শতাব্দীর ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। রামপুরহাটে দলে বিরোধ কম থাকায় সামলে নিতে পেরেছেন অনেকটাই, কিন্তু দলের রাজনৈতিক কর্মসূচীতে তাঁকে এলাকায় খুব কমই দেখা যায়।

আরও পড়ুন: ভারী গাড়ির ভিড়ে কোণঠাসা কেন্দুলির রাধাবিনোদ

শান্তিনিকেতনে 'খোয়াই বাঁচাও' আন্দোলনে যুক্ত হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে পড়েন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী। থাকেন শান্তিনিকেতনের প্রাণকেন্দ্র রতনপল্লীতে। কিন্তু তৃণমূলের রাজ্য সভার এই সাংসদও আমল দেন না অনুব্রতদের। দলের সভা, মিছিল বা অন্য কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচী দূরের কথা, দলের জেলা দপ্তরও মাড়ান নি কোনদিন। শান্তিনিকেতনে থাকলে কদাচিৎ বিশ্বভারতীর কর্মসূচীতে থাকেন তিনি, এর বাইরে আর কোনো কর্মসূচীতে নেই।

তিন সাংসদের ভূমিকা নিয়ে দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও শীর্ষ নেতৃত্বর নির্দেশে তাঁরা এ প্রসঙ্গে চুপ।

অনুপম জানিয়েছিলেন, "যা বলার নির্দিষ্ট স্থানেই বলব।" তিনি বহিষ্কৃত হলেন, আর বাকি দুই সাংসদ এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী নন।
ফলে সাংসদদের নিয়ে সমস্যা-মুক্ত হতে পারছেন না অনুব্রত। তবু অনুব্রতর সাফ কথা, "প্রার্থী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোনীত, যিনি প্রার্থী হবেন তাঁকেই লক্ষাধিক ভোটে জয়ী করবো আমরা।" সাংসদরা কিন্তু অনুব্রতর মতন অত দরাজ নন, অন্তত প্রকাশ্যে। কর্মীরা বলছেন, "এই ইগো-টাই সমস্যা, ওঁরা যদি বুঝতেন!"

tmc anubrata mondal trinamul Birbhum
Advertisment