আগে যাঁরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, এখন তাঁরাই একে অপরের প্রতিপক্ষ। এবার নন্দীগ্রামে যেন মারকাটারি ভোট হতে চলেছে। তৃণমূল ও বিজেপি নেতাদের বক্তব্যে তা অনেকটাই পরিস্কার। নন্দীগ্রামের একশো শতাংশ বুথে তৃণমূল কংগ্রেস বা বিজেপি কেউই এজেন্ট দিতে পারবে না বলে দু'দলই দাবি করেছে। তবে কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি যে ছেড়ে দেবে না তা তাঁদের কথাতেই স্পষ্ট। ভোট দখলের চেষ্টা হলে নিজের ক্ষমতাসীন এলাকায় পাল্টা ব্যবস্থা হবে বলেও হুঙ্কার ছাড়ছেন।
১০ বছর আগে রাজ্যে পরিবর্তনের নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল নন্দীগ্রামের। সেই পরিবর্তনে নন্দীগ্রামের কান্ডারীরাই এখন ময়দানে একে অপরের বিরুদ্ধে। নন্দীগ্রামের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক এখন গেরুয়াশিবিরে। শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীদের কেউ কেউ যোগ দিয়েছেন পদ্মশিবিরে। তাঁরাই এখন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অন্যতম শক্তি সেখানে।
আরও পড়ুন- এবার নন্দীগ্রামে মেরুকরণের ভোট না শুভেন্দু ফ্যাক্টর?
নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের বিরুলিয়া বাজারে দেওয়ালে প্লাস্টার না হওয়া দোতলায় বিজেপির দলীয় কার্যালয়। সেখানে তখন হাজির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রলয় পাল। বছর ৪২-এর প্রলয় পালের বাবা চিত্তরঞ্জন পাল ৪০ বারের পঞ্চায়েত সদস্য। প্রলয় জানিয়েছেন, ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে ছিলেন। কিন্তু তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ওই বছর বিজেপিতে যোগ দেন। ২০১১ থেকেই এটা বিজেপির অফিস। বিজেপির জেলা সহসভাপতির দাবি, "প্রথম প্রথম দেওয়াল লিখন হয়েছিল এখন আর দেওয়াল লিখতেও সাহস পাচ্ছে না। উৎসাহ কমে গিয়েছে। দেখুন এখানে দেওয়াল লিখনের অবস্থা দেখুন। আমাদের ১৫ হাজার দেওয়াল লেখা হয়ে গিয়েছে। প্রার্থীর নাম ঘোষণা হলেই লিখে দেওয়া হবে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ৬২ হাজার ভোট পেয়েছে বিজেপি। পঞ্চায়েত ভোটে এই ব্লকে একশো শতাংশ মনোনয়ন দাখিল করেছে বিজেপি। ভোট করাতে দেয়নি। নন্দীগ্রাম বিধানসভায় ২৭৮টা বুথ। সব বুথেই আমাদের এজেন্ট থাকবে। প্রচুর বুথে তৃণমূলের এজেন্ট থাকবে না।"
আরও পড়ুন- ‘বহিরাগত’ তত্ত্বেই এবার নাস্তানাবুদ খোদ তৃণমূল
নন্দীগ্রামে জয়ের ব্যাপারে একশো শতাংশ আশাবাদী স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল নেতা আবু তাহের, শেখ সুফিয়ানদের দাবি, এবার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ব্যাপক ভোটে জয় পাবেন। তৃণমূল বুথে এজেন্ট দিতে পারবে না এই দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। বরং তাঁদের প্রশ্ন, নন্দীগ্রামে বিজেপির সংগঠন বলে কিছু আছে কি?
তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সহসভাপতি শেখ সুফিয়ানের দাবি, "বিজেপিই সব বুথে এজেন্ট দিতে পারবে না।" জাহাজবাড়ি ঘেষা ঝা চকচকে অফিসে বসে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেতা বলেন, "বিজেপি বিধানসভা নির্বাচনে ১০০ বুথে এজেন্ট দিতে পারবে না। নন্দীগ্রামে বিজেপির সংগঠন কোথায়?" নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দলবদলে বিজেপিতে আসা এক নেতার বক্তব্য, "তৃণমূল যদি ওদের এলাকায় রিগিং করে তাহলে পাল্টা আমরাও ছেড়ে দেব না।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন