২০১৯-এর ১৯ জানুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেসের ব্রিগেডের ঘোষণা হয়েছিল গতবছর ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসে। তৃণমূল নেত্রী আগাম জানিয়ে দিয়েছিলেন ফেডারেল ফ্রণ্ট গঠন করে তিনি বিজেপিকে উৎখাত করতে চান। তার জন্য তিনি একাধিকবার দিল্লি ছুটে গিয়েছেন, বিরোধী দলের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন। বেঙ্গালুরুতে গিয়েছেন কুমারস্বামী সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে। ইতিমধ্যে গেরুয়া শিবিরে বিশিষ্ট চার নেতা তৃণমূলের ব্রিগেডে যোগ দিতে চলেছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূলের মত আঞ্চলিক দলে শত্রুঘ্ন সিনহা, অরুন শৌরি, যশবন্ত সিনহা বা গেগং আপাংরা যোগ দিলে আহামরি ফায়দা না হলেও বিজেপিকে একটা জোরালো বার্তা দেওয়া যাবে।
কিন্তু গেরুয়া বাহিনীও কি চুপচাপ বসে থাকবে? এটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন। তার কারণ একটাই, মুকুল রায়। তৃণমূল কংগ্রেসে থাকাকালীন বিরোধী নেতৃত্বকে ভেঙে তছনছ করেছেন প্রাক্তন এই তৃণমূল নেতা। কী বলছেন মুকুলবাবু? তাঁর বক্তব্য, "তৃণমূল থেকে একাধিক সাংসদ ও বিধায়ক নিয়মিত আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যাঁর যখন সময় হবে তখন বিজেপিতে যোগ দেবেন।" ১৯ জানুয়ারি আপনি কোথায় থাকছেন? তিনি বলেন, "ওই দিন দিল্লিতেই থাকব।" তবে কি দিল্লির বিজেপি দপ্তরে ফের কোনও বিস্ফোরণ অপেক্ষা করছে? চটজলদি মুকুলবাবুর জবাব, "দেখা যাক।"
আরও পড়ুন- ২০১৯-এর লোকসভায় টিকিট অনিশ্চিত তৃণমূলের ৯ বর্তমান সাংসদের! দেখে নিন, তালিকা
সৌমিত্র খাঁ বিজেপিতে যোগ দেওয়া ও অনুপম হাজরাকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কারের পর বাংলার রাজনীতির 'চানক্যর' ভূমিকা নিয়ে কৌতূহল বেড়েছে রাজনৈতিক মহলে। এমন ঘটনা আরও ঘটবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। যাঁরা ওই চলতি নৌকায় জায়গা পাবেন না মনে করছেন, তাঁরাই যোগাযোগ রাখছেন তৃণমূলের একসময়ের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের সঙ্গে। জনাকয়েক তৃণমূল সাংসদ ও বিধায়ক যে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন সেকথা বলছেনও তিনি। ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, তারা এখন হোয়াটসঅ্যাপ কল বা মেসেজ করছেন। কোনও ঝুঁকি নিচ্ছেন না।
আরও পড়ুন- ‘এমনও তো হতে পারে, মমতাকে জেলে যেতে হল’
কারা তলে তলে মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন? রাজনৈতিক মহলের মতে, সারদা-নারদা ছাড়াও যাঁরা দলের টিকিট পাওয়া নিয়ে নিশ্চিত নন, মূলত তাঁরাই পদ্ম শিবিরেও পা বাড়িয়ে রাখছেন। সেক্ষেত্রে কলকাতা লাগোয়া গঙ্গাপাড়ের সাংসদও আছেন, আবার রাজ্য রাজনীতিতে স্বল্প পরিচিত গৌরাঙ্গের দেশের সাংসদও আছেন। জোর গুঞ্জন ছড়িয়েছে, যে বালুরঘাট, আলিপুরদুয়ার, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, কৃষ্ণনগর, বীরভূম সহ বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এমন ধরনের কিছু কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ রয়েছেন যাঁদের টিকিট পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। রাজ্যে দলবদলের জটিলতা ক্রমশ বাড়ছে।
আরও পড়ুন- ‘যে সিপিএম-কে হারিয়েছেন, সেই সিপিএম-কে আর ফেরত আসতে দেব না’
তৃণমূলের ব্রিগেডের দিন দিল্লিতে কী চমক থাকবে, তা নিয়েও জোর চর্চা রাজনৈতিক মহলে। হঠাৎ করেই সৌমিত্র খাঁ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর প্রশ্ন উঠছে, তাহলে এরপর কে? অনেকে অনুমানও করতে শুরু করেছেন। ১৯ জানুয়ারি বিজেপির দিল্লি অফিসে চমক, তা নাহলে ২০ জানুয়ারি মালদায় অমিত শাহর সভা রয়েছে। যদিও সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। বিজেপি সূত্রে খবর, অমিত শাহ আসতে না পারলে আসবেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এ মাসের শেষ রাজ্যে দুটি জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।