তিনি রান্নাও করেন, রিকশাও টানেন আবার সাহিত্য চর্চাও করেন। তিনিই এবার ভোটের ময়দানে শাসকদলের প্রার্থী। বলাগড়ের তৃণমূল প্রার্থী দলিত সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ব্য়াপারি যে এখনও মাটির মানুষ তা আরও একবার প্রমাণ করলেন শুক্রবার। একসময় পেটের ভাত জোটাতে যে রিকশা তাঁর অবলম্বন ছিল, সেটা চালিয়েই এদিন মনোনয়ন জমা দিতে গেলেন মনোরঞ্জনবাবু। কর্মী-সমর্থকদের মুখে আওয়াজ উঠল, ‘রিকশা এবার বিধানসভায়’।
দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমির সেই সভাপতি এবার বিধানসভা নির্বাচনে সবচেয়ে চর্চিত নাম। তরুণ বয়সে পথভ্রষ্ট হয়ে নকশাল আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভ্রম যখন ভাঙে তখন তাঁর মনে হয়, ‘সামাজিক সাম্যের লড়াইটা জরুরি।’ তখন থেকেই বন্দুক ছেড়ে রিকশা হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। প্রার্থী তালিকায় তাঁর নাম ঘোষণার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘মাটির মানুষ মনোরঞ্জন ব্যাপারি। রান্না করেন, রিকশা টানেন, সাহিত্য চর্চাও করেন।’
হিন্দু উদ্বাস্তু হিসেবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে এদেশে ঘাঁটি গেঁড়েছিল মনোরঞ্জন ব্যাপারির পরিবার। তার পর থেকেই জীবন যুদ্ধে গা ভাসিয়েছেন তিনি। চা বেচেছেন, ডোমের কাজ করেছেন, রাঁধুনির কাজ করেছেন এমনকি রিকশাও টেনেছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারি। তাঁর সাদামাটা জীবনযাপন নিয়ে ওয়াকিবহাল ডান-বাম সবপক্ষই। তিনিও নিজের জয়ের ব্যাপারে ১০০ শতাংশ আশাবাদী।
এতকিছুর মধ্যেও দলিত অধিকার রক্ষায় লিখে ফেলেছেন একাধিক বইও। দলিতের আত্মজীবনী হিসেবে লিখেছেন ইতিবৃত্তে চণ্ডাল জীবন। ২০১৯ সালে সেই বইয়ের ইংরাজি অনুবাদ করেন শিপ্রা মুখোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন বাতাসে বারুদের গন্ধ। সেই বছরেই এই বইয়ের ইংরাজি অনুবাদ করেন অরুণাভ সিনহা।
তাঁর সাহিত্যে মাটির গন্ধ এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের বঞ্চনা এবং অধিকারের লড়াই বরাবর ফুটে উঠেছে। তবে সাহিত্যচর্চা ছেড়ে রাজনীতি কেন? সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘বিজেপির করা বিভাজনের রাজনীতির বিরোধিতা এখনই করা উচিত। আপনারা বাতাসে বিষের গন্ধ পাচ্ছে না? সেই দূষণ এখনই বন্ধ না করলে বাংলার ভূমিপুত্ররাই এনআরসি আর সিএএ’র জন্য ডিটেনশন ক্যাম্পে কাটাবে।’ তিনি ভোটে জিতলে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জয় হবে বলে মনে করেন দলিত সাহিত্যিক।