General Elections 2019: নরেন্দ্র মোদীকে দিল্লির মসনদ থেকে হঠানোর সঙ্কল্প অনেকদিন নিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিকেলে কালীঘাটে নিজ বাসভবন থেকে রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করলেন দলনেত্রী। অন্য কয়েকটি রাজ্যে প্রার্থী দেওয়ার কথাও ঘোষণা করলেন। তবে এদিন টিকিট না পাওয়া গতবারের জয়ী সাংসদদের পাশে বসিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন মমতা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা। অনেকেরই চোখ-মুখে ছিল থমথমে ভাব। ক্ষোভ, মান-অভিমান পরিস্ফুট হয়ে উঠছিল একাধিক চেহারায়।
লোকসভা ভোটের আরও খবর পড়ুন, এখানে
মমতার ডানদিকে বসেছিলেন সাংসদ সন্ধ্যা রায়। অপর পাশে সাংসদ উমা সোরেন। উমার ডানদিকে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যখন ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হিসাবে বীরবাহা সোরেনের নাম ঘোষণা করছেন মমতা, তখন একটি চেয়ারের ব্যবধানে বসা সাংসদ উমা সোরেনের মুখে ঔদাসীন্য। সাংবাদিক বৈঠকে আগাগোড়া বসে থাকতে হলেও প্রার্থী তালিকায় নিজের নাম না থাকায় উমা যে খুশি নন, তা একেবারে স্পষ্ট।
আরও পড়ুন: লোকসভায় তৃণমূলের নতুন মুখ কে কে? দেখুন, তালিকা
বিশিষ্ট অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায় গতবার প্রার্থী হয়েছিলেন মেদিনীপুরে। সেখানে এবার প্রার্থী করা হয়েছে মানস ভুঁইয়াকে। টলিউডের এই অভিনেত্রী সোমবার নবান্নে ছুটে গিয়েছিলেন। মমতার একেবারে ডানদিকে তিনি বসেছিলেন। প্রার্থী না হওয়ার হতাশা সারাক্ষণ ঢেকে রাখার চেষ্টা করলেন। তবে মুখের হাসি তাঁর উধাও। অনেকটা 'সিরিয়াস'। তিনি যে দক্ষ অভিনেত্রী।
আরও পড়ুন, West Bengal Lok Sabha Elections 2019 LIVE Updates: প্রার্থী ঘোষণা হতেই পুরোদমে প্রচারে তৃণমূল
ব্যারাকপুরে এবারও প্রার্থী হয়েছেন গতবারের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী কে হবেন তা নিয়ে গুঞ্জন চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। তৃণমূল সূত্রে খবর, এখানে এবার প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিং। তাঁর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় তিনি গেরুয়া শিবিরের দিকে ঝুঁকছিলেন বলে সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, এই খবর পাওয়ার পর সোমবার নবান্নে ত্রিবেদী ও অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর এদিন কালীঘাটে বাড়ির বৈঠকে ভাটপাড়ার বিধায়ককে ডেকে পাঠান দলনেত্রী।
আরও পড়ুন: Lok Sabha Election 2019: তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত, কোথায় কোন প্রার্থী?
তাঁকে প্রার্থী করে নি তৃণমূল কংগ্রেস, কিন্তু তাঁকে ঝাড়খন্ডের দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানান মমতা। সাংবাদিক বৈঠকে অর্জুন হাজির থাকলেও চোখেমুখে ছিল হতাশার ছাপ। দলের সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক সুব্রত বক্সী এবার প্রার্থী হচ্ছেন না কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি প্রার্থী না হওয়া নিয়ে একাধিকবার মত প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন: তৃণমূলের ১০ বিদায়ী সাংসদ এবার টিকিট পেলেন না, দেখুন তালিকা
মোদী-অমিত শাহর বিরুদ্ধে অলআউট লড়াইয়ের কথা বলেছেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু এরাজ্যে ৪২/৪২ চাই বলে দাবি করলেও লড়াই যে কঠিন, তা এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে হাজির তৃণমূল নেতৃত্বের প্রত্যেকের চোখে মুখে স্পষ্টতই ফুটে উঠেছে।
কোচবিহারের তৃণমূল সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়কে সরিয়ে প্রার্থী করা হয়েছে পরেশ অধিকারীকে। মমতা বলেন, "পার্থ দলে থাকলে কাজ করবেন। অনেকেই তো এদিক ওদিক করছেন।" এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "ধার চেয়ে লজ্জা দেবেন না। এক গদ্দার তো আগেই গিয়েছে।" এরাজ্যে দল ভাঙানোর খেলা যে চলবে তা অবশ্যই বুঝে গিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তাই প্রার্থী বাছাইয়ে সাবধান তিনি। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তাই এবার এমন অনেককেই প্রার্থী করা হয়েছে, যাঁদের দলবদল নিয়ে বিশেষ উৎসাহ থাকবে না।