গেরুয়া ঝড়ের জের। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়াতেই পিছিয়ে পড়ল তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি কলকাতা পুরসভার ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের অর্ন্তগত। লোকসভা নির্বাচনের ফল অনুযায়ী, ওই ওয়ার্ডে প্রায় ৫০০ ভোটে পিছিয়ে গিয়েছে তৃণমূল! মুখ্যমন্ত্রী যে বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক, সেই ভবানীপুরেও তৃণমূলের ফল রাজ্যের শাসক শিবিরের পক্ষে উদ্বেগজনক। ওই বিধানসভায় মোট আটটি ওয়ার্ড রয়েছে। তার মধ্যে ছ'টিতে লিড নিয়েছে বিজেপি। যদিও সার্বিকভাবে ভবানীপুরে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূলই।
ভবানীপুরে যে ওয়ার্ডগুলিতে বিজেপি লিড নিয়েছে, সেগুলি হল ৬৩, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩ এবং ৭৪ নম্বর ওয়ার্ড। মমতার ওয়ার্ডে এমন ফলে বিস্মিত স্থানীয় কাউন্সিলর রতন মালাকারও। তাঁর কথায়, "অভাবনীয় ফলাফল। এমন কেন হল, তা খতিয়ে দেখতে হবে।"
শুধু ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডই নয়, গোটা কলকাতা জুড়ে প্রায় ৫০টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ 'ববি' হাকিম যে ওয়ার্ডে গত জানুয়ারি মাসে ১৪ হাজার ভোটে উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন, সেখানে জোড়া ফুল প্রার্থী এগিয়ে থাকলেও ব্যবধান কমে এসেছে মাত্র ১,১০০ ভোটে! গেরুয়া ঝড়ে দক্ষিণ কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রাসবিহারী কেন্দ্রে পিছিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডেও এগিয়ে বিজেপি প্রার্থী। আর এক মেয়র পারিষদ রতন মালাকারের ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডেও জোড়া ফুলকে পিছনে ফেলেছে পদ্মফুল। বেহালায় মেয়র পারিষদ তারক সিংহের ওয়ার্ডেও পিছিয়ে গিয়েছে তৃণমূল।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলাম, দল শোনেনি: মমতা
তৃণমূলের সমস্যা বাড়িয়েছে উত্তর কলকাতাও। শ্যামপুকুর এবং জোড়াসাঁকো বিধানসভায় লিড নিয়েছে বিজেপি। মানিকতলায় তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে ঠিকই, কিন্তু মাত্র ৮৬০ ভোটে। বড়বাজার এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। এবার সেখানে কার্যত উড়ে গিয়েছে তৃণমূল। ৬, ১৩, ১৮, ২০, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ৩১, ৩৮, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৪, ৪৭, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৫, এবং ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জোড়াসাঁকোর বিধায়ক স্মিতা বক্সী। ওই ওয়ার্ডেও এগিয়ে গিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। কেন এমন ফল, প্রশ্ন করা হলে ববি জানান, "সম্পূর্ণ মেরুকরণের ভিত্তিতে ভোট হয়েছে। হিন্দু-মুসলমানে ভাগ করে ভোট করার চেষ্টা করেছে বিজেপি। কিন্তু এই অপচেষ্টা বেশিদিন টিঁকবে না।"
তৃণমূলকে একসময় কটাক্ষ করে দক্ষিণ কলকাতার পার্টি বলা হত। গেরুয়া দাপটে খোদ দক্ষিণ কলকাতাতেও উদ্বেগে জোড়া ফুল।