Advertisment

নিজেদের ক্ষমতা নয়, বিজেপির পতন চাই, দিনের শেষে ব্রিগেডের বার্তা

ব্রিগেডের বক্তারা ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে জোরালো সওয়াল করলেন। কিন্তু কেউই আগাম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কারও নাম মুখে আনলেন না।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Mamata Speech at Brigade

ব্রিগেডে বক্তব্য রাখছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। ছবি- পার্থ পাল

বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক দিলেন দেশের সমস্ত বিজেপি বিরোধী দল। কেউ কেউ ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে জোরালো সওয়াল করলেন। জোট টিকিয়ে রাখা খুবই কঠিন কাজ বলে মনে করিয়ে দিলেন অভিজ্ঞ জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া। কিন্তু বক্তারা কেউই আগাম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কারও নাম মুখে আনলেন না। বরং সবাই জানিয়ে দিলেন, নির্বাচনের পরই প্রধানমন্ত্রী ঠিক করা হবে। সবার একটাই আওয়াজ, "মোদি হঠাও"।

Advertisment

তৃণমূল কংগ্রেসের লক্ষ্য এরাজ্যে ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৪২টিতে জয়। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান। কিন্তু ব্রিগেডে বক্তারা কেউই আগাম প্রধানমন্ত্রী নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি। বিজেপি ছেড়ে আসা বর্ষীয়ান যশবন্ত সিনহার বক্তব্য, শুধু মোদি হঠালেই হবে না, পরাজিত করতে হবে বিজেপির মতাদর্শকে। প্রাক্তন বিজেপি নেতা অরুণ শৌরিও চাইছেন এক বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের এক প্রার্থী। তাঁর মতে, "ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী হব ভেবে ক্যালকুলেশন করলে চলবে না।" ফারুক আবদুল্লাও তাঁর বক্তব্য জানিয়ে দেন, আগে লড়াই, তারপর প্রধানমন্ত্রী ঠিক করা যাবে।

শৌরির বক্তব্যের রেশ টেনে কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি বলেন, "জোটের ফল মিলেছে উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুর ও ফুলপুরের উপনির্বাচনে। বিজেপি সব থেকে বেশি ফায়দা পাচ্ছে ভোট বিভাজনের। বিজেপিকে ঠেকাতে গেলে এই ভোট বিভাজন রুখতে হবে।" সিংভি এ বিষয়ে হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের নাম করতেও ভোলেন নি। রাজনৈতিক মহলের ধারনা, কংগ্রেস ঘুরিয়ে জোটের বার্তা দিতে চাইল তৃণমূল কংগ্রেসকে। এদিন ব্রিগেডে কংগ্রেসের অপর প্রতিনিধি লোকসভার অধ্যক্ষ মল্লিকার্জুন খাড়গেও হাজির ছিলেন। তিনিও গণতন্ত্র বাঁচাতে একসঙ্গে লড়ার কথা বলেছেন। শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন সোনিয়া গান্ধী। গতকাল রাহুল চিঠি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে আজব কান্ড ঘটান লোকতান্ত্রিক জনতা দলের নেতা শরদ যাদব। রাফালের দুর্নীতির কথা বলতে গিয়ে একাধিকবার বোফর্সের নাম নেন প্রবীণ নেতা। প্রায় ৩০ বছর আগে বোফর্স কান্ড ঘটেছিল। বোফর্সের দুর্নীতির অভিযোগ ছিল গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে। কংগ্রেস সেবার বোফর্স ইস্যুতে লোকসভার ভোটে গোহারা হারে। বোফর্স প্রসঙ্গ উঠে আসায় কংগ্রেসের দুই প্রতিনিধির মুখ তখন একেবারে কাচুমাচু। শেষমেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগ নিয়ে ডেরেক ও'ব্রায়েনকে দিয়ে শরদ যাদবকে বলান, ওটা বোফর্স নয়, রাফালে হবে।

এদিন তামিল ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন ডিএমকে নেতা এমকে স্ট্যালিন। সেই ভাষা বাংলায় তর্জমা করে দিয়েছেন এক দোভাষী। তাঁকে সাহায্য করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা। আদতে শশী দেবী দক্ষিণ ভারতীয়। স্ট্যালিন বলেন, "বিরোধীরা একসঙ্গে বলেই ভয় পেয়েছেন মোদি। এখন দেশ চালাচ্ছে নরেন্দ্র মোদী প্রাইভেট লিমিটেড। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য, সব দলকে ঐক্যবদ্ধ করে মোদীকে একা করা। তাহলেই পরাজয় হবে মোদীর। দেশ বাঁচবে।"

প্রধানমন্ত্রীত্বের আর এক দাবিদার মায়াবতী নিজে না এলেও তাঁর প্রতিনিধি সতীশ মিশ্র এসেছিলেন ব্রিগেডের সভায়। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব বলেন, "দেশে নতুন প্রধানমন্ত্রী চাই। প্রধানমন্ত্রীর দাবিদার অনেক। জনতা ঠিক করবে কে প্রধানমন্ত্রী হবে।" মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সভায় ছিলেন অন্ধ্র প্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডু, দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও কর্ণাটকের কুমারস্বামী। হাজির ছিলেন এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার, বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা।

একদা জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এইচ ডি দেবগৌড়া। সেই সরকার টিকেছিল মাত্র ১১ মাস। জোট টিকিয়ে রাখা যে শক্ত এদিন তা স্পষ্ট করে বলেছেন তিনি, বিশেষ করে কয়েক মাসের কর্ণাটক সরকারে বেহাল অবস্থা দেখে। কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে চলছে তাঁর পুত্র কুমারস্বামীর নেতৃত্বে কর্নাটক সরকার। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বলেন, "কোয়ালিশন টিকিয়ে রাখা খুবই কঠিন কাজ। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুন সক্রিয় মোদী বাহিনী।" অভিজ্ঞ এই রাজনীতিক বিরোধী নেতৃত্বকে পরামর্শ দিয়েছেন, নির্বাচনের আগে কমন ম্যানিফেস্টো তৈরি করার। হাতে যে খুব একটা সময় নেই তাও মনে করিয়ে দিয়েছেন। শেষ মুহূর্তে সভায় এসে বক্তব্য রাখেন লালু প্রসাদ যাদবের পুত্র তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব।

এদিন তৃণমূল নেত্রী নিজেই ছিলেন সভার আয়োজক। তাই অন্যদের বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনিও এদিন স্পষ্ট করেন, "দেশের প্রয়োজনে এক জায়গায় আসতে হবে। যেখানে যে শক্তিশালী তাকে সমর্থন করতে হবে। আমাদের নেতা অনেক। কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা ভাবার দরকার নেই। নির্বাচনের পর আমরা সবাই মিলে ঠিক করব।"

General Election 2019
Advertisment