কংগ্রেসের সঙ্গে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের আসন রফার সিদ্ধান্ত ঘিরে জট অব্যাহত। এরই মধ্যে রবিবাসরীয় ব্রিগেডে সুর চড়িয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বকে বার্তা দিয়েছিলেন আইএসএফ-এর পৃষ্ঠপোষক আব্বাস সিদ্দিকি। বলেছিলেন, 'তোষণ নয়, ভাগিদারি চাইছি।' এর ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই হাত শিবির সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন ভাইজান। তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন আব্বাস সিদ্দিকি। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছেন, 'দিদি-মোদীর সঙ্গে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা যোগাযোগ রাখছেন।'
ঠিক কী বলেছেন আব্বাস সিদ্দিকি?
রবিবার ব্রিগেডে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ভাষণের মাঝেই মঞ্চে ওঠেন আব্বাস। তাঁকে দেখে উল্লাসে ফেটে পড়ে জনতা। অধীরবাবুও নিজের বক্তব্য থামিয়ে দেন। উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যায় বাম নেতৃত্বের চোখে-মুখে। পরে ভাইজানকে আগে বলতে দেওয়ার জন্য অধীরকে আনুরোধ করেন সিপিএম নেতা মহঃ সেলিম। সঙ্গে সঙ্গে আর ভাষণ না দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। পরে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ফের ভাষণ শুরু করেন অধীর চৌধুরী। প্রকাশ্যে এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই কংগ্রেস-আইএসএফ জোট ঘিরে প্রশ্ন চিহ্ন দানা বেঁধেছে। তাল কেটেছে ব্রিগেডেরও। এই ঘটনায় অবশ্য সোমবার দুঃখপ্রকাশ করেছেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি।
কিন্তু, ঘটনার রেশ যে গভীরে তা এদিন আব্বাসের মন্তব্যেই সাফ হয়ে গিয়েছে। সোমবার ভাইজান বলেছেন, 'বিশ্বস্তসূত্রে জানাতে পেরেছি মোদী-দিদির সঙ্গে রাজ্য কংগ্রেসের এক বড় নেতা যোগাযোগ রেখে চলছেন। ভোটের পর উঁচু পদের বিনিময়ে তৃণমূলকে সমর্থন করবে বলে জানিয়েছেন। শুনেছি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন কংগ্রেসের হাতে মাত্র ৫২টা আসন রয়েছে। সেখান থেকে আর তাদের কোনও আসন ছাড়া সম্ভব নয়। তাই গতকালই কংগ্রেসকে অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেছি।'
এরপরই কিছুটা সুর চড়িয়ে আব্বাস সিদ্দিকি বলেছেন, 'কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের আসন রফা হয়েছে। আমাদের সঙ্গেও হয়েছে। কিন্তু, কংগ্রেসের সঙ্গে ভবিষ্যতে জোট হবে কিনা তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা আমাদের (আইএসএফ) রয়েছে।'
ভাইজানের এই বক্তব্যের জবাবে কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, 'আমি জানি না আব্বাস সিদ্দিকি কোথা থেকে এসব শুনেছেন। আমার মনে হয় না যাঁরা এখনও গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষতার পথ অনুসরণ করে কংগ্রেস করেন তাঁরা মোদী বা মমতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং পদের লোভে রাজনীতি করছেন। জানিনা আব্বাসকে কে বলেছেন কংগ্রেসের হাতে ৫২ টা আসন রয়েছে। উনি নাম বললে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে পারি। তবে পুরোটাই ভুল বলে মনে হচ্ছে।'
গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ জোট গড়ে বাংলা জয়ের স্বপ্নে বিভোর বাম নেতৃত্ব। শুরু থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে আসন রফা ঘিরে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সমঝোতা ধাক্কা খাচ্ছে। রবিবার ব্রিগেডের পর এদিন আব্বাসের মন্তব্যে সেই ফাটল আরও বাড়ল বলেই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন