Advertisment

মৃত্যুর ১২৮ বছর পর রাজ্যে ভোটের ইস্যু বিদ্যাসাগর

রবিবার শেষ দফার ভোটের আগে এ ঘটনা নির্বাচনী ভাষ্য়েও বদল ঘটিয়েছে। বিজেপির হিন্দুত্ব বনাম তৃণমূল কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে আলোচনা এখন বিদ্যাসাগর ঘিরে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Vidyasagar Statue Broken in Kolkata

বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রোড শোয়ের পর কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে ভাঙা বিদ্যাসাগর মূর্তি। ফাইল ছবি

মৃত্যুর ১২৮ বছর পর লোকসভা ভোটের ইস্যু হয়ে উঠলেন বিদ্যাসাগর। সৌজন্য অমিত শাহের রোড শো চলাকালীন তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ এবং বিদ্যাসাগরের মূর্তিভঙ্গ।

Advertisment

বুধবার বিদ্যসাগর কলেজে মূর্তি ভাঙার পরদিন তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে মোট ১০টিরও মিছিল বের করে, যে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের পরণে ছিল বিদ্যাসাগরের ছবি সংবলিত টি শার্ট, হাতে ছিল বিদ্যাসাগরের ছবি। কলকাতায় মিছিল বের করেছিল বামফ্রন্ট। এদিকে বিজেপি নেতারাও এক ধর্নায় বসেছিলেন, অমিত শাহের রোড শোয়ের দিন তাঁদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার চক্রান্তের জন্য তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন তাঁরা।

রবিবার শেষ দফার ভোটের আগে এ ঘটনা নির্বাচনী ভাষ্য়েও বদল ঘটিয়েছে। বিজেপির হিন্দুত্ব বনাম তৃণমূল কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে আলোচনা এখন বিদ্যাসাগর ঘিরে। বুধবার, তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আগরপাড়ার এক সভায় বিদ্যাসাগরের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং অভিযোগ করেন, বিজেপির আনা বহিরাগতদের হাতে বাংলা আক্রান্ত।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুধবার বসিরহাট এবং ডায়মন্ডহারবারে দুটি জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন। এক জায়গাতেও তিনি বিদ্যাসাগরের নাম উল্লেখ করেননি। তবে অমিত শাহের মিছিলে তৃণমূল কংগ্রেসের আক্রমণের অভিযোগ করতে ভোলেননি তিনি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর কলকাতায় এই হিংসার প্রতিবাদে একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন। তিনি বলেন, "এটি সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র, এবং বাংলা আক্রান্ত। ওরা বহিরাগত। যদি ওরা বাংলার কেউ হত, তাহলে বিদ্যাসাগেরর মূর্তি চিনতে পারত না! ওরা বিজেপির ভাড়া করা গুণ্ডা। এরাই আক্রমণ করেছে, কলেজ ছাত্রদের মারধর করেছে। ওদের লজ্জা পাওয়া উচিত।"

মমতা এদিন গান্ধী ভবন থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত আরও একটি পদযাত্রার নেতৃত্ব দেন, যে যাত্রার শরিক ছিল নাগরিক সমাজ। এ মিছিলে শয়ে শয়ে বিজেপি কর্মীদের হাতে ছিল বিদ্যাসাগরের ছবি এবং ছিঃ বিজেপি লেখা ব্যানার। এই পদযাত্রার শুরুতে মমতা মহাত্মা গান্ধীর মূর্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং যাত্রা শেষে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তির সামনে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন।

যাত্রার মাঝে স্বামী বিবেকানন্দর পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন মমতা। সোশাল মিডিয়াতেও এ লড়াইয়ে শামিল হয়ে নিজের প্রোফাইল ছবি বদলান তিনি। তাঁর প্রোফাইল পিকচার হয়ে যায় বিদ্যাসাগরের ছবি। তাঁকে অনুসরণ করেন বেশ কিছু তৃণমূল কংগ্রেস নেতা-নেত্রীরা। হুগলি, হাওড়া, বাঁকুড়া, এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলাতেও তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে।

দলের সম্পাদক পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় অমিত শাহের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, মঙ্গলবারের ঘটনায় তৃণমূলের উপর দোষ দিয়ে নিজের মুখ রক্ষা করতে চাইছেন বিজেপি সভাপতি। তিনি বলেন, "কিন্তু সারা দেশের মানুষ জানে কে বিদ্যাসাগেরর মূর্তি ভেঙেছে।  ভিডিও ফুটেজই এদের মুখোশ খুলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। রাজ্য শিক্ষা দফতর মূর্তি ফের বানিয়ে দেবে।"

বামফ্রন্টও কলেজ স্কোয়ারের বিদ্যাসাগর উদ্যান থেকে হেদুয়া পার্ক পর্যন্ত একটি মিছিল করে এবং এ ঘটনার জন্য তৃণমূল ও বিজেপি উভয় পক্ষকে দায়ী করে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এ ঘটনাকে বাংলার ইতিহাসে এক ক্ষতচিহ্ন বলে অভিহিত করেন।

ইয়েচুরি বলেন, "বাংলার নবজাগরণে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর সামাজিক অবদান জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অভিমুখ বদলে দিয়েছিল এবং ভারতের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করেছিল।"

মেয়ো রোডের গান্ধী মূর্তির সামনে অমিত শাহের রোড শো-য়ে তৃণমূলের হামলার প্রতিবাদে ধর্নায় বসেন রাজ্য বিজেপির নেতারা।

রাজ্য বিজেপির সদর দফতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ মমতার বহিরাগত বিজেপি তত্ত্বকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, "বাংলা বিজেপির প্রচুর কর্মী রয়েছে। আমাদের রোড শো করার জন্য বহিরাগত প্রয়োজন নেই। টিএমসি এখন বিজেপির নিশ্চিত জয় দেখে বিচলিত হয়ে পড়েছে, ফলে তাদের নেতারা এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করছেন।"

বাংলার ন্যতম সাংস্কৃতিক আইকন এবং বাংলার নবজাগরণের অন্যতম ব্যক্তিত্ব বাংলা আধুনিক বর্ণমালার স্রষ্টা শুধু নন, উচ্চবর্ণীয় হিন্দু সমাজে ব্যাপক সংস্কারের প্রধানতম ব্যক্তিত্বও বটে।

তাঁর সামাজিক সংস্কারের অভিমুখ ছিল বাল্যবিবাহ বন্ধ করা এবং বিধবাবিবাহ চালু করা। বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় দিয়েই আজও বাঙালি শিশুদের অক্ষর চেনার হাতেখড়ি হয়।

Read the Full Story in English

tmc bjp General Election 2019
Advertisment