তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীকে দার্জিলিংয়ে প্রার্থী হয়েছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার (বিনয় তামাং গোষ্ঠী) অমর সিং রাই। কিন্তু ঘাসফুলের প্রার্থী হলেও গোর্খাল্য়ান্ডের দাবি থেকে এক চুলও সরছেন না অমর সিং। পরিকাঠামো তৈরি করে পৃথক রাজ্য় চাইছেন এই তৃণমূল প্রার্থী। তাছাড়া পাহাড়ে ভোট পাওয়া নিয়ে তাঁর সংশয়ের কথাও গোপন রাখেননি এই অধ্য়াপক। পাহাড়বাসীর ঐক্য় যে আজ বহু বিভাজিত, তা-ও একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রতিনিধিকে।
কেন তৃণমূলের সঙ্গে জোট?
মুখ্য়মন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের একটা বোঝাপড়া রয়েছে। এই জোট ভেবে-চিন্তেই করা হয়েছে। ওঁর সঙ্গে কথা বলে এটা করেছি, কেন না অনেক টেকনিক্য়াল ডিফিকাল্টি আছে। যেমন আমাদের তিন সেগমেন্টে ভোটার রয়েছেন ৬ লক্ষ। নীচে চার সেগমেন্টে ভোটার রয়েছেন ১১ লক্ষ। আমরা একটা রেজিস্টার্ড পার্টি, কিন্তু স্বীকৃতি নেই। আমাদের প্রতীক নেই। নির্বাচন কমিশন যে প্রতীক দেবে সেই প্রতীকেই লড়তে হবে।
গত বিধানসভা নির্বাচনে আমরা তাই করেছি। আমাদের দলের প্রতীক ছিল না। এটা ভাবতে হল। আমরা ইন্ডিপেনডেন্ট সিম্বলে লড়তে পারতাম। কিন্তু সমতলে চার সেগমেন্টে অসুবিধে হত। তাই ভাবলাম আমরা তৃণমূলের প্রতীকে লড়লে চারটে বিধানসভা কেন্দ্রে ভাল ফল হবে। জিএনএলএফও একসময় তৃণমূলকে সমর্থন করেছে।
আরও পড়ুন: ভোট নয়, ‘হোম মেড টি’ সঙ্গী করে লড়াই চা শ্রমিকদের
বিজেপি সম্পর্কে কী মত?
আমরা বিগত ১০ বছর ওঁকে (বিজেপি সাংসদ এস এস আহলুওয়ালিয়া) অনেক ভোটে জিতিয়ে লোকসভায় পাঠিয়েছি। ১০ বছর ধরে দেখেছি, ওদের সরকার থাকতেও কোনও কাজ করেনি। যশবন্ত সিনহার সময়ে ওদের সরকার ছিল না, কিন্তু আহলুওয়ালিয়ার সময়ে ২০১৪ থেকে ওদের সরকার ছিল। প্রধানমন্ত্রী এখানে এসে অনেক কথা দিয়েও কথা রাখেন নি। ওরা মিথ্য়া প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে ভোটের জন্য়। বছরের পর বছর এটাই হয়ে আসছে। সত্য়ি আমাদের কিছু দেয়নি। পাহাড়ের লোক এটা বুঝেছি। এবার আমাদের মূল লক্ষ্য়, পাহাড় থেকে বিজেপিকে হঠাতে হবে।
গোর্খাল্য়ান্ড নিয়ে কী অবস্থান? এই দাবি থেকে সরছেন?
একবারেই না। আমাদের সবার ভিতরে গোর্খাল্য়ান্ড আছে। তৃণমূলও সমর্থন করছে। ওদেরও গোর্খাল্য়ান্ড আছে। কিন্তু আমরা ভেবেছি, গোর্খাল্য়ান্ডের ইস্য়ু আমাদের কাছে ছিল, সবার কাছে থাকবে। ভবিষ্য়তেও থাকবে। গোর্খাল্য়ান্ড পাওয়ার জন্য় আমাদের অনেক অন্য় ইস্য়ু নিয়ে আগে ভাবতে হবে। পৃথক রাজ্য়ের জন্য় আমরা তৈরি আছি কিনা, এটাও ভাবতে হবে। কিন্তু আমি দেখছি, ১৯৮৮ দার্জিলিং গোর্খা কাউন্সিল দিয়েছে। ২০১১ জিটিএ দিয়েছে। আমরা এটাই ভাল করে চালাতে পারি নি। তাই আমরা চিন্তা ভাবনা করে দেখেছি, এখানে হিউম্য়ান রিসোর্সের বিকাশ হয়নি। একটা রাজ্য় চালাতে এটা করতে হবে। তা এখানে নেই। সেই পরিকাঠামো আগের কোনও সরকার তৈরি করে নি।
এখানে পরিকাঠামোর হাল কী?
একটা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই, এখাানকার পড়ুয়াদের বাইরে যেতে হচ্ছে। মেডিক্য়াল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নেই। একটা বিশ্ববিদ্য়ালয় পর্যন্ত নেই দার্জিলিংয়ে। ১৯৫৫ থেকে বিশ্ববিদ্য়ালয় চাইছি। মানব সম্পদের উন্নয়ন কীভাবে ঘটবে? একটা রাজ্য় চালাতে, একটা স্বায়ত্ব শাসিত সংস্থা চালাতে মানব সম্পদের দরকার আছে। আমাদের আরও সময় লাগবে। ছাত্র-যুবদের তৈরি করলে একটু সহজ হবে রাজ্য়ের অধিকার চাওয়া। আমাদের পার্টির ইস্তেহারে রাজ্য় দাবি করিনি।
আরও পড়ুন: দার্জিলিংয়ে বইছে গণ ক্ষোভের চোরাস্রোত
আইডেন্টিটি ক্রাইসিস...
সবার আগে 'আইডেন্টিটি ক্রাইসিস' দূর করতে হবে। এখনও সবাই বলে 'নেপাল থেকে এসেছ, তোমরা বাইরের লোক।' একথা শুনতে হয় এখনও। বাইরে গেলেও শুনতে হয়। তাই আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের মোকাবিলা করতে পার্মানেন্ট সেটেলমেন্ট চাই। এটাই মূল ইস্য়ু। না থাকলে অসুবিধা হবে।
আগে পাহাড়ে ঐক্য় ছিল। এখন চারটে গ্রুপ তৈরি হয়েছে। কী বলবেন?
পাহাড়ের মানুষ দুর্বল হয়ে গিয়েছেন। এটা আমি জানি। পাহাড়ের লোকের দুর্বলতা, আমরা এক হতে পারছি না। কেন আমাদের দাবি পৃথক পৃথক হয়ে যাচ্ছে? আমরা পাহাড়ের সব লোক গোর্খাল্য়ান্ড চেয়েছিলাম ১৯৬২ সালে। আমদের চাহিদা আলাদা, পার্টি আলাদা হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের ইতিহাস দেখলে বোঝা যাবে, সবই একসঙ্গে ছিল। গোর্খা লিগ। তবে এবার পাহাড়ের মানুষ এক হচ্ছেন না। আমার এটা ভাল লাগে নি, কিন্তু কী করব?
গুরুং ও মন ঘিসিংয়ের হাত মেলানো নিয়ে কী বলবেন?
ওদের রাজনৈতিক বাধ্য়বাধকতা কী আছে আমি জানি না। ইতিহাসে দেখেছি, জিনএলএফকে তাড়িয়ে দিয়েছে বিমল গুরুং। মন ঘিসিংয়ের মায়ের মৃত্য়ুর সময় আসতে দেয়নি। সুভাষ ঘিসিংকে পাহাড় থেকে নামিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ওরা এখন এক হয়েছে। কী ভেবে এটা করেছে? ওদের একটাই লক্ষ্য়, তৃণমূল ও বিনয় তামাং গ্রুপকে হঠানো।
পাহাড়ে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
আমি প্রচারে যাচ্ছি। ব্য়াপক সাড়াও পাচ্ছি। ফেসবুক, হোয়াট্সঅ্যাপ, টুইটারে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু জনতা সিদ্ধান্ত নেবেন। আমাকে ভোট না দিলে জনতার মত, আমাকে ভোট দিলে জনতার আশীর্বাদ। না দিলেও ওঁদের সিদ্ধান্ত।
দার্জিলিংয়ের মানুষ কি 'কনফিউজড'?
এখানকার মানুষ অবশ্যই 'কনফিউজড'। আমাদের 'কনফিউশন' হচ্ছে, আমরা শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছিলাম। এই প্রতীক পাহাড়ের মানুষ দেখতে চাইছিলেন না। আমাদের বোঝাতে হবে কেন এই সিম্বলে তাঁদের ভোট দিতে হবে। আমরা ব্য়াখ্য়া দিচ্ছি। পাহাড়ের মানুষকে বোঝাতে পারলে আমরা জিতে যাব।
পাহাড়ের ভোটেই হার-জিত? '
আমরা এখানে আগে লিড দিতাম। এবার এখানে কী হবে না হবে তা আমি জানি না। আমরা বলতেও পারছি না। আমি বলেছি ভোটাররা সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে ভোট দেবেন। পার্টির ক্য়াডাররা খাটছে। এখানে ভাল লিড নিতে পারলে সমতলে সহজ হবে।
লড়াই কি কঠিন?
(মাথা নেড়ে) এবারের লড়াই খুবই কঠিন।