এই মুহূর্তে বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে উত্তাল সারা বাংলা। রাজ্যে ক্ষমতা দখলের জন্য তৃণমূল-বিজেপি-জোটের মহারণ চলছে। রণকৌশলের পর রণকৌশল করে চলেছে ডান-বাম সব পক্ষই। মুহূর্তের মধ্যে বদলে যাচ্ছে কৌশল। এদিকে জঙ্গলমহলের রাজনৈতিক উত্তাপও চরমে। বাঁকুড়ার রাণীবাঁধ বিধানসভার খাতড়ার দেউলাগড়ায় তাবড় কংগ্রেস নেতা অতুল্য ঘোষের বাগানবাড়িতে গিয়ে দেখা মিলল প্রভাকর সর্দারের সঙ্গে। বাঁকুড়ার জঙ্গলঘেরা প্রত্যন্ত এই গ্রামের 'পাহাড়তলী'ও ছিল একসময় রাজনীতির আখড়া। এখানেও চলত বৈঠক, ঠিক হত রণকৌশল। তাবড় কংগ্রেস নেতা অতুল্য ঘোষের এই বাগানবাড়িতে এসেছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের বড় অংশই।
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৫২-তে কলকাতা থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে বাঁকুড়ার খাতড়ায় দেউলাগড়া গ্রামে বাগানবাড়ি তৈরি করেন অতুল্য ঘোষ। নাম দেন পাহাড়তলী। এখান থেকে আট কিলোমিটার দূরেই মুকুটমণিপুর,কংসাবতী নদীর জলাধার রয়েছে। তখন এই বাড়িতে দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় বিহারী সর্দার। বিহারীকে সঙ্গ দিতেন তাঁর ছোট্ট ভাইপো। বিহারীবাবুর মৃত্যুর পর তিনিই কেয়ারটেকারের দায়িত্ব সামলান। আশির দোরগোড়ায় এসেও সেদিনের কথা বেশ মনে আছে প্রভাকর সর্দারের। আবার বাবার সঙ্গে কাজে সহযোগিতা করতেন শ্যামল। ছোট্ট শ্যামল নদুস-নুদুস ছিল বলে তাকে ভোদা বলে ডাকতেন অতুল্য ঘোষ। শ্যামলের কথায়, "ওনাকে দেখে আমার খুব ভয় লাগত। দেখলেই দৌড়ে পালাতাম। এখানে অতুল্যবাবু আসার সময় তাঁর গাড়ি দূর থেকে ট্রেনের মত হুইসেল দিত। আমরা বুঝতে পারতাম তিনি আসছেন।"
নির্বাচন বা যে কোনও পরিস্থিতিতে এই বাগানবাড়িতে রাজনৈতিক আলোচনা চলত। জনবহুল এলাকার কোলাহল থেকে দূরে এমন নিরিবিলি জায়গায় বৈঠকের সুবিধাও অনেক। লোকচক্ষুর আড়ালে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হত, জানালেন প্রভাকরবাবু। এই বাগানবাড়িতেই এসেছেন ততকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু, মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায়, প্রফুল্ল সেন, কামরাজ, মুরারজি দেশাই, বিজু পট্টনায়কসহ অনেকেই। একসময় এই বাগানবাড়িই ছিল বাংলার রাজনীতির পীঠস্থান। রণকৌশল নির্ণয় করা হত এখান থেকেই।
দেউলাগড়ায় গিয়ে দেখা গেল, পুরনো টিনের চালা বাড়ি এখনও রয়েছে। তার পাশে রয়েছে পরবর্তীতে তৈরি করা পাকা বাড়ি। ঘরের দেওয়ালে রয়েছে তৎকালীন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বর সঙ্গে অতুল্য ঘোষের ছবি। বারান্দায় রয়েছে অতুল্যবাবুর বসার আরামকেদারা। একসঙ্গে অনেকে বসতে পারে এমন ডাইনিং টেবিলও রয়েছে এখানে।
এখনও ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এই বাগানবাড়ি সামলাচ্ছেন প্রভাকর সর্দার। তিনি বলেন, "আমি এখানে ছোট থেকেই এই বাগানবাড়িতে কাকার সঙ্গে থাকতাম। আমার কাকা বিহারী সর্দার ছিল এখানকার কেয়ারটেকার। দেশ ও রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্ব এই বাড়িতে এসেছেন। নির্বাচনের আগে ও নানা সময়ে এই বাড়িতে বৈঠক হত। জহরলাল নেহরু থেকে বিধানচন্দ্র রায়, প্রফুল্ল সেনদের আমি দেখেছি এই বাগানবাড়িতে। আরও অনেক নেতা-মন্ত্রীকে আমি এখানে আসতে দেখেছি। আমি তাঁদের চা দিতাম। আমাকে খুব ভালবাসতেন অতুল্যবাবু। প্রভা বলে ডাকতেন আমাকে।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন