ভোটগণনা শুরু হতেই টানটান উত্তেজনা বাংলায়। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ৪২-এ-৪২ আসনের লক্ষ্য সামনে রেখে তৃণমূলে বজায় ছিল উত্তেজনা। কিন্তু বেলা গড়াতেই অঘটনের আভাস আসতে থাকে বাংলার বহু কেন্দ্র থেকে। দিনভর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর বাংলায় ১৮টি আসনে নিজেরদের জয় বজায় রাখল পদ্মশিবির। যদিও ততক্ষণে ফলাফল কার্যত স্পষ্ট সব দলের কাছে। শহরের রাস্তায় রাস্তায় গেরুয়া আবিরের রঙ।
বিজেপির পার্টি অফিসে বসে তখন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন মুকুল রায়। বাংলায় বিজেপির এই উত্থান, এই জয়ের পিছনে কারিগর যে মোদী-শাহ জুটি, তা উল্লেখ করলেন সবার আগে। বৈঠক থেকেই নিশানা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকারকে। এদিন মুকুল বলেন, "ভোট লড়াইয়ে আমাদের দলের প্রায় শতাধিক কর্মী নিহত হয়েছেন, বাংলায় এখন গণতন্ত্র ফেরাতে চাইছেন মানুষ, তাই বিজেপির এই জয়। আমরা আমাদের জয় উৎসর্গ করছি বাংলার জনগণের উদ্দেশে। বাংলায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক, এটাই আমাদের দাবি।"
আরও পড়ুন: ‘গদ্দার’ চাণক্যই বিজেপির বাংলা জয়ের কারিগর
সকাল থেকেই জোড়াফুল এবং পদ্ম শিবির টক্কর দেয় একে অপরকে। ঘাটালে কখনও এগিয়ে যান দেব, কখনও আবার ভারতী ঘোষ। শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত লড়াই চলে ব্যারাকপুরে। তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদী বনাম বিজেপির 'বাহুবলী' অর্জুন সিং। যদিও শেষ হাসি হাসেন অর্জুন, কিন্তু সমানে সমানে লড়াইপর্বে চড়ে উত্তেজনার পারদ। প্রসঙ্গত, ব্যারাকপুরের এই নির্বাচন ঘিরে ভোটের দিন উত্তাল হয়েছিল সমস্ত এলাকা। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে এদিন মুকুল রায় বলেন, "এত জোচ্চুরি করেছে, সন্ত্রাস করেছে তৃণমূল, এমনকি নির্বাচনের পরেও হিংসা চালিয়ে গেছে এলাকায়। তাই গণতন্ত্র ফেরত দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের লাগাতার সংগ্রাম জারি থাকবে বাংলায়"।
কীভাবে এই সাফল্যর মুখ দেখল বিজেপি? দলবদলের রাজনীতিতেই কি বদলাল বাংলার ফলাফল? মুকুলের বক্তব্য, "ভারতবর্ষের নিরিখে যা বলার তা মোদী-অমিত শাহেরা বলেছেন, বাংলায় কংগ্রেস-সিপিএম উভয়েই বলেছে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দাও, তৃণমূলের বিরুদ্ধেও ভোট দাও। অর্থাৎ তৃণমূল বিরোধিতা করে তাঁরা ভোট পেয়েছেন, তার সঙ্গে যদি আমাদের ভোট যোগ করি, সেই নিরিখে তৃণমূল বিপুল সংখ্যক মানুষের সমর্থন হারিয়েছে। তাই তৃণমূলের কোনও নৈতিক অধিকার নেই বাংলায় ক্ষমতায় থাকার। গত দশ বছরে বাংলায় কোনও উন্নয়ন হয়নি, কোনও শিল্প হয়নি, শিক্ষায় পিছিয়ে বাংলা। আমাদের যেসব প্রার্থীরা জিতেছেন তাঁরা দিল্লি গিয়ে নিশ্চিত করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বলবেন বাংলায় কর্মসংস্থান হোক, শিক্ষা ব্যবস্থা ফেরত দাও, বাংলায় শিল্পায়ন হোক।"