বাম আমলে জিততেন। তৃণমূল আমলে জিতেছিলেন। গেরুয়া ঝড়েও জিতলেন। দুর্গ রক্ষা করে অধীর চৌধুরি প্রমাণ করলেন, শক্তি কমলেও বহরমপুরে তিনিই শেষ কথা। এখনও।
তাঁকে হারাতে এবার মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়েছিল তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে বহরমপুরে পাঠিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারীকে। অনেকখানি সফলও হয়েছিলেন শুভেন্দু। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই জেলার বিস্তীর্ণ অংশে অধীরর আধিপত্য প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। জেলা পরিষদ তো বটেই, অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিরও দখল নিয়েছিল তৃণমূল। একের পর এক কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন তাঁর দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সেনাপতিরা।
অবশেষে, নির্বাচনের ঠিক আগে, প্রার্থী ঘোষণার সময় মোক্ষম চাল দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। বহরমপুরের বেতাজ বাদশাকে হারাতে জোড়া ফুলের প্রার্থী করেছিলেন অধীরের নিজের হাতে গড়া নেতা, একদা ছায়াসঙ্গী, কান্দির দীর্ঘদিনের বিধায়ক অপূর্ব সরকার ওরফে ডেভিডকে। একসময় যাঁর সম্পর্কে অধীর বলতেন, "ডেভিডের বাড়িতে আমি এত ভাত খেয়েছি, সব জড়ো করলে একটা ধানের গোলা ভরে যেত।" মমতা-শুভেন্দু ধারণা ছিল, অধীরের নির্বাচনী মেশিনারির খুঁটিনাটি জানেন ডেভিড। তাই দুর্গ-পতনের জন্য তিনিই সেরা বাজি।
কিন্তু, এত কিছুর পরও শেষ রক্ষা হল না। প্রবল চাপ সত্ত্বেও বহরমপুরের গড় রক্ষা করলেন অধীর। সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এগিয়ে রয়েছেন লক্ষাধিক ভোটে। তাঁর প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ প্রায় ৪৬ শতাংশ। তৃণমূল প্রার্থী ডেভিড পেয়েছেন ৪০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট।
একদিকে গেরুয়া ঝড়, অন্যদিকে তৃণমূলের চাপ সামলে কী করে জিতলেন অধীর? বহরমপুরের কংগ্রেস কর্মীদের দাবি, তাঁদের দাদা বছরভর মানুষের সঙ্গে থাকেন। তাই কয়েকজন নেতা জার্সি বদলালেও মানুষ তাঁদের সঙ্গে যান নি, ভোট দিয়েছেন অধীরকেই। অধীরের কথায়, "আমি মানুষকে নিয়েই বাঁচি। তাঁরাই আমার সব। তাই যত চাপই থাক, আমি সব সামলে নেব। মানুষ পাশে থাকলে কাউকে ভয় পাই না।"
অন্যদিকে তৃণমূলের দাবি, অধীরকে জেতাতে মাঠে নেমেছিল সিপিএম এবং বিজেপি। শাসকদলের এক নেতার কথায়, "উনি জনপ্রিয় নেতা ঠিকই। কিন্তু সিপিএমের সমর্থন না পেলে এবার তাঁর জেতা কঠিন ছিল। আর বিজেপি ইচ্ছাকৃত দুর্বল প্রার্থী দিয়ে ওঁর সুবিধা করে দিয়েছিল।" প্রসঙ্গত, গত বছর সিপিএম সমর্থিত আরএসপি প্রার্থী প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। এবার অধীরকে সমর্থন করেছিল সিপিএম।