Advertisment

কেন এমন হলো! বিহ্বল আলিমুদ্দিন

প্রকাশ্যে কিছু বলতে না চাইলেও বাম নেতৃত্ব মূলত দুটি কারণকে চিহ্নিত করছেন। এবং, তাঁদের মতে, দুটি ক্ষতই দীর্ঘস্থায়ী বিপর্যয়ের সূচক।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
bengal election, left front, left

বঙ্গে বামের বিপর্যয়। ছবি- শশী ঘোয

বিপর্যয়ের আশঙ্কা ছিলই। কিন্তু তার অভিঘাত যে এমন হবে, ভাবতে পারেন নি বঙ্গের বাম নেতারা। পাঁচ বছরে ২২ শতাংশ ভোট কমায় কার্যত হতবুদ্ধি বাংলার বাম নেতারা।

Advertisment

গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই বাংলায় শক্তি বাড়িয়েছিল বিজেপি। তৃণমূলের দাপট সত্ত্বেও বেশ কয়েকটি জেলায় ফুটেছিল পদ্মফুল। তারপর থেকে রাজ্য রাজনীতিতে কোণঠাসা বামপন্থীরা ক্রমশ প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হতে শুরু করে। অবশেষে, সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে প্রমাণিত, বামপন্থীরা এই রাজ্যের নির্বাচনী মানচিত্রে এখন কার্যত অস্তিত্বহীন। আলিমুদ্দিন সূত্রের খবর, ভোট কমার আশঙ্কা আগেই করেছিলেন বাম নেতারা। কিন্তু তা যে ১০ শতাংশের নীচে নেমে আসবে, তা আগাম অনুমান করতে পারে নি সিপিএমের রাজ্য কমিটি।

নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই রাজ্য তৃণমূল-বিজেপি মেরুকরণের হাওয়া তীব্র হচ্ছিল। অধিকাংশ আসনেই বামপ্রার্থীরা রিং-এর বাইরেই ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে আলিমুদ্দিনের শীর্ষনেতারা রায়গঞ্জ, মুর্শিদাবাদ, আসানসোল, যাদবপুর, দমদমের মতো কয়েকটি আসনে নজর দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, জেতা তো দূরস্থান, রাজ্যের একটি আসনেও বামপ্রার্থীরা দ্বিতীয় হতেও পারেন নি। রায়গঞ্জে বিদায়ী সাংসদ মহম্মদ সেলিম বিকেল পর্যন্ত পেয়েছেন মাত্র ১৩ শতাংশ ভোট। মুর্শিদাবাদের বিদায়ী সাংসদ বদরুজ্জা খান বিকেল পর্যন্ত পেয়েছেন সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট। যাদবপুর কেন্দ্র নিয়ে আশাবাদী ছিলেন বামেরা। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী মিমি চক্রবর্তীর সঙ্গে টক্কর নেওয়া দূরে থাক, বিজেপি-র অনুপম হাজরার চেয়ে অনেকখানি পিছিয়ে থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন সিপিএমের প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর ভোট শতাংশ বিকেল পর্যন্ত সাড়ে ১৯ শতাংশ। দমদমের অবস্থাও তথৈবচ। বিকেল পর্যন্ত সেখানে বামেদের প্রাপ্ত ভোট ১৪ শতাংশের কম। ঝাড়গ্রামে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন দেবলীনা হেমব্রম। ব্রিগেডে নজরকাড়া এই বাম নেত্রী বিকেল পর্যন্ত ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

এ-হেন বিপর্যয়ের কারণ কী? নির্দিষ্ট কোনও উত্তর দিতে চাননি বাম নেতৃত্ব। আলিমুদ্দিনে সকাল থেকেই বৈঠক করেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তীরা। সিপিএমের পরিষদীয় দলনেতা সুজন বিকেলে বলেন, "আমাদের অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে। আমি আপাতত এ-নিয়ে কিছু বলব না। যা বলার সূর্যকান্ত মিশ্র বলবেন।" সন্ধ্যায় সূর্য বলেন, "রাজ্য কমিটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। বামফ্রন্টেও আলোচনা হবে। তারপর বলা সম্ভব। আমরা রাজ্যের মানুষের কাছে আবেদন জানাব শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে। নির্বাচনের ফল যেমনই হোক, আমরা মানুষের পাশে থাকব।"

প্রকাশ্যে কিছু বলতে না চাইলেও বাম নেতৃত্ব মূলত দু-টি কারণকে চিহ্নিত করছেন। এবং, তাঁদের মতে, দু-টি ক্ষতই দীর্ঘস্থায়ী বিপর্যয়ের সূচক। রাজ্য কমিটির এক নেতার কথায়, "আমাদের কর্মীরা রাস্তায় ছিলেন। আমাদের সমাবেশগুলিতে ভিড় হয়েছিল। কিন্তু মানুষ আমাদের ভরসা করেননি। আমরা যে জিততে পারি, তেমনটা ভাবেননি মানুষ। জনতার পারসেপশন থেকে সরে যাওয়া ভয়ংকর। আমরা কার্যত অস্তিত্বহীন হয়ে গেলাম।" অন্য এক সিপিএম নেতার কথায়, "রাজ্যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের ভিত্তিতে ভোট হচ্ছে। এর আগে বাংলায় কখনও হয়নি এমন। এই প্রবণতা জোরালো হলে বামপন্থীদের টিঁকে থাকাই মুশকিল।"

left front CPIM Left Movement
Advertisment