Advertisment

জঙ্গলমহলে তৃণমূল বিধায়কের গ্রামেই অনুন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ বাসিন্দাদের

বিধায়ক জ্য়োৎস্না মান্ডি এই গ্রামে কারও কাছে বউমা তো কারও কাছে জ্যেঠিমা। গ্রামবাসীদের বক্তব্য়, "বিধায়ক গ্রামের এই বাড়িতে থাকেন না। খাতরা-তে থাকেন। ছ'মাস অন্তর একবার নিজের বাড়িটা দেখে যান।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
bankura lok sabha polls west bengal 2019

লছমনগড়ের নতুন প্রজন্ম। ছবি: শশী ঘোষ

জঙ্গলমহলে অনুন্নয়নের অভিযোগ এবার খোদ বাঁকুড়া লোকসভার অন্তর্গত রাণীবাঁধের বিধায়কের গ্রামে। বিধায়ক জ্য়োৎস্না মান্ডির গ্রাম লছমনগড়ে ঢোকার রাস্তা প্রায় নেই বললেই চলে। যেটা আছে, সেটাকে রাস্তা না বলাই শ্রেয়। জঙ্গলঘেরা এই গ্রামের প্রবীণদের বক্তব্য়, "বউমাকে বারেবারে বলেও কোনও কাজ হয়নি। এই রাস্তার অব্য়বস্থার জন্য় বর্ষার সময়ে ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না।" যদিও তৃণমূল বিধায়কের বক্তব্য, "গ্রামের লোককে নিয়ে মাস পিটিশন দিয়ে পঞ্চায়েত সমিতিকে দিয়ে রাস্তা ঢালাই করিয়ে নেব। তারপর বন দপ্তরের বক্তব্য় শুনব।"

Advertisment

হিরবাঁধ পঞ্চায়েতের জঙ্গলঘেরা গ্রাম লছমনগড়। মাত্র ৩০টি পরিবারের বাস এই গ্রামে। আদিবাসীদেরই বসবাস এই অঞ্চলে। বেশিরভাগেরই পেশা কৃষিকাজ। কিন্তু বিধায়কের বাড়ি এই গ্রামে হওয়া সত্ত্বেও সামগ্রিক উন্নয়ন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, "বিধায়ককে একাধিকবার জানানোর পরেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।" নির্মল মান্ডি বলেন, "গ্রামে তো ঢুকলেন। আমাদের রাস্তার হাল দেখলেন। ওই রাস্তা দিয়ে কেউ যাতায়াত করতে পারে? ২০১১-র পর ২০১৬-তেও তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে। তবু রাস্তা হয় নি। এছাড়া গ্রামের দু'দিকের রাস্তার হাল খারাপ থাকায় শিশুকে কোলে নিয়ে কেউ আইসিডিএস সেন্টারেও যায় না। কোনও ড্রেন না থাকায় রাস্তা দিয়েই জল গড়াচ্ছে। এই রাস্তার বেহাল দশার জন্য় জরুরি অবস্থাতেও ডাক্তাররা আসেন না। কোনওরকমে গাড়ি করে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়া হয়।"

bankura lok sabha polls west bengal 2019 লছমনগড়ে ঢোকার 'রাস্তা'। ছবি: শশী ঘোষ

দেউলাগড়া উচ্চবিদ্য়ালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে বিদ্য়াসাগর মান্ডি। কিন্তু রাস্তা তৈরি না হলে সে কী করে বিদ্য়া চর্চা চালাতে পারবে তা নিয়ে নিজেই সংশয় প্রকাশ করল এই কিশোর। বিদ্য়াসাগরের কথায়, "গ্রামে ঢোকা-বেরোনোর রাস্তা ঠিক না থাকায় নিয়মিত স্কুলে যাওয়া হয় না। বর্ষাকালে হালত আরও খারাপ হওয়ায় স্কুল যাওয়া বন্ধ রাখতে হয়।" দেউলাগড়া প্রাথমিক বিদ্য়ালয়ে পড়ে ছোট্ট সনাতন সোরেন। তৃতীয় শ্রেণীর এই ছাত্র বাড়ির দাওয়াতে বসেই বলল, "বর্ষায় তো আমি স্কুল যেতে পারি না।"

গ্রামে বাচ্চাদের কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মায়েরা। কিন্তু পাশের গ্রামের আইসিডিএস (ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস) কেন্দ্রে নিয়ে যেতে অপারগ তাঁরা। গ্রামবাসীরা এই গ্রামেই আইসিডিএস কেন্দ্রের দাবি করেছেন। বিধায়কের বক্তব্য়, "আইসিডিএস নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। সেটা আমাকে বলেছিলেন ওঁরা। পরিষ্কার কথা, ১০-১২টা বাড়ির জন্য় আইসিডিএস সেন্টার হতে পারে না। একটু দূর হওয়ায় মায়েরা শিশুদের নিয়ে সেন্টারে যাচ্ছেন না। তবে গ্রামে কারও একজনের বাড়িতে একজন শিক্ষককে নিয়ে আসা যায় কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাস্তা হলে অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে।"

bankura west bengal lok sabha polls 2019 শিশুদের আইসিডিএস সেন্টারে নিয়ে যান না মায়েরা। ছবি: শশী ঘোষ

বিধায়ক জ্য়োৎস্না মান্ডি এই গ্রামে কারও কাছে বউমা তো কারও কাছে জ্যেঠিমা। গ্রামবাসীদের বক্তব্য়, "বিধায়ক গ্রামের এই বাড়িতে থাকেন না। খাতরা-তে থাকেন। ছ'মাস অন্তর একবার নিজের বাড়িটা দেখে যান। এখন তো সঙ্গে বন্দুক নিয়ে দুজন বডিগার্ড থাকে। গাড়ি করে গ্রামে আসেন আর ছুঁ করে চলে যান।" লছমনগড়ের উত্তম মান্ডি, হেমন্ত মুর্মু, লুলুরাম মান্ডি, পিন্টু মান্ডি প্রত্য়েকেই গ্রামের অনুন্নয়ন নিয়ে রীতিমত বিক্ষুব্ধ।

ইতিমধ্য়ে গ্রামে চারটি সোলার লাইটের মধ্য়ে একটি খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। এতদিন বনদপ্তরের জায়গা বলে যুক্তি দিচ্ছিলেন বিধায়ক। অন্যদিকে, খানাখন্দের গ্রামে ঢোকার রাস্তা নিয়ে গ্রামবাসীদের যৌথ পিটিশনের পর রাস্তা হবে, গ্রামের কেউ কিন্তু একথা বলেন নি। কিন্তু গ্রামের ক্ষোভের কথা শুনে বিধায়ক বলেলেন, পঞ্চায়েত সমিতির টাকায় রাস্তা করা হবে। এবং "জঙ্গল ঘেরা অনেক গ্রামেরই" একই হাল, সে কথাও জানিয়েছেন খোদ বিধায়ক।

বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মূল লড়াই বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারের। ২০১৪ সালে তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন মুনমুন সেন। সিপিএম প্রার্থী অমিত পাত্রের ভোট কাটাকাটি করা ছাড়া কোন কাজ নেই বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। আর কংগ্রেস প্রার্থীর জামানত টিকিয়ে রাখা দায় হতে পারে। তবে রাঙামাটির এই লোকসভা কেন্দ্রে জঙ্গলমহল এলাকায় কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে চলেছে তৃণমুল। আদিবাসীদের মধ্যে গেরুয়া শিবিরের প্রভাব অস্বীকার করার জায়গা নেই।

west bengal politics lok sabha 2019 Lok Sabha polls tmc
Advertisment