Advertisment

এশিয়ার বৃহত্তম সংখ্যালঘু গ্রামে উন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ তৃণমূলেই

"এখানে বেশিরভাগই গরীব, খেটে খাওয়া মানুষ। এখনও জলের সমস্য়া মেটেনি। রাস্তাঘাট হয়নি। বর্ষায় রাস্তাগুলোতে কাদা মাখামাখি অবস্থা। ভাল কাজ করাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
west bengal lok sabha polls 2019

পুনিশোল গ্রামের প্রবেশপথ। ছবি: শশী ঘোষ

স্বাস্থ্য়, শিক্ষা, পানীয় জল, রাস্তা, সহ সামগ্রিক উন্নয়নে বেশ কয়েক কদম পিছিয়ে রয়েছে ভারত নয়, এশিয়ার বৃহত্তম গ্রামের দাবিদার, বাঁকুড়ার পুনিশোল। যে গ্রাম পুরসভার দাবি রাখে, সেখানে উন্নয়ন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্য়দের মধ্য়েই তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। যার প্রভাব পড়তে পারে ১২ মে'র লোকসভা নির্বাচনের ওপর।

Advertisment

বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের এই গ্রামে ভোটারের সংখ্য়া ২৩ হাজারের ওপর। এই গ্রামের ভোটের লিডের ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে বিষ্ণুপুর লোকসভার ফল। স্বাস্থ্য়, শিক্ষা, রাস্তা, জল, কোনো কিছুর উন্নয়ন হয় নি বলে অভিযোগ খোদ তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য়দের একাংশের। অন্যদিকে, গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের রয়েছে অনুন্নয়ন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ।

west bengal lok sabha polls 2019 জলের সমস্যা যে আছে, তা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরলেই বোঝা যায়। ছবি: শশী ঘোষ

অবশ্য এসব অভিযোগ নিয়ে কোনও হেলদোল নেই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রেজাউল মন্ডলের। লোকসভা ভোটে তৃণমূলের লিড নিয়েও কোনও সংশয় নেই পুনিশোলের পঞ্চায়েত কর্তার। রেজাউলের দাবি, গ্রামে ২০১১ সালের পর থেকে "যথেষ্ট উন্নয়ন" হয়েছে। কিন্তু প্রকাশ্য়েই গ্রামের অনগ্রসরতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্রামের বাসিন্দারা।

জলের সমস্য়া যে রয়েছে, তা গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায় গেলেই টের পাওয়া যায়। দক্ষিণ পশ্চিম পাড়ায় সাবমার্সিবলের কাছে মহিলাদের ভিড়। জলের পাত্র নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে মহিলারা। অন্তঃসত্ত্বা শান্তনা বিবি এক হাতে বালতি, কোমরে কলসী নিয়ে রাস্তা দিয়ে জল নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। এ দৃশ্য় নিত্য়দিনের। পঞ্চায়েত প্রধান বলছেন, চারশো-সাড়ে চারশো সাবমার্সিবল বসানো হয়েছে। তাঁর সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন আরেক পঞ্চায়েত সদস্য়। মহিলারাও জলের সমস্য়া সমাধানের জন্য় দাবি জানিয়েছে পঞ্চায়েতের কাছে।

west bengal lok sabha polls 2019 পঞ্চায়েত সদস্য সবুর আলি মোল্লা এবং আবু বক্কর খান। ছবি: শশী ঘোষ

পুনিশোল গ্রামে রয়েছেন ১৪ জন পঞ্চায়েত সদস্য়। ১১ জন তৃণমূল কংগ্রেসের, বাকি তিনজন নির্দল। পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি অনুযায়ী, নির্দলরা সকলেই এখন তৃণমূলের সঙ্গেই রয়েছেন। কিন্তু গ্রামে সেভাবে উন্নয়নের কাজ হচ্ছে না বলে ক্ষোভ উগরে দিলেন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য় সবুর আলি মোল্লা, আবু বক্কর খান প্রমুখ। বক্কর বলেন, "স্বাস্থ্য়, শিক্ষা, রাস্তা, জল, সবেতেই আমরা পিছিয়ে রয়েছি। এই গ্রামে কোনও স্বাস্থ্য়কেন্দ্র নেই। তিনটে উপস্বাস্থ্য় কেন্দ্র রয়েছে। সাতটা প্রাইমারি স্কুল। ২৪টা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। একটা হাইস্কুল, একটা জুনিয়র হাইস্কুল। হাইস্কুলে ২,৭০০ জন পড়ুয়া রয়েছে। প্রাথমিক স্কুলগুলোতে ৭০০-৮০০ ছাত্রছাত্রী রয়েছে। দুটি স্কুলের ক্ষেত্রেই শিক্ষক-শিক্ষিকার অপ্রতুলতা আছে। সাড়ে চারশো নলকূপ বসানোর কথা। তাও কিন্তু সর্বত্র দেখা যাচ্ছে না।"

রাজ্য় স্বাস্থ্য় দপ্তর বাড়িতে সন্তান প্রসব একেবারে বন্ধ করতে নানাভাবে প্রচার করছে। কিন্তু পুনিশোলের স্বাস্থ্য় ব্য়বস্থা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছেন বক্কর। তিনি বলেন, "বিশাল জনসংখ্য়ার গ্রামে দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটা স্বাস্থ্য়কেন্দ্রের। কিন্তু আজও তা হল না। এমনকী গর্ভবতী মায়েদের জন্য় ডেলিভারি পয়েন্ট করার কথা ছিল, তাও হয়নি। বাড়িতে ডেলিভারি ৮০-৯০ শতাংশ কমানো গেলেও এখনও মাসে দু-তিনটে ডেলিভারি বাড়িতেই হচ্ছে। পুরোপুরি বন্ধ করা যায় নি। স্বাস্থ্য়জনিত সমস্য়া কবে মিটবে বলা মুশকিল।" সবুর আলি মোল্লার বক্তব্য়, "এখানে বেশিরভাগই গরীব, খেটে খাওয়া মানুষ। এখনও জলের সমস্য়া মেটেনি। রাস্তাঘাট হয়নি। বর্ষায় রাস্তাগুলোতে কাদা মাখামাখি অবস্থা। ভাল কাজ করাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।"

west bengal lok sabha polls 2019 গর্ভবতী মায়েদের জন্য ডেলিভারি পয়েন্ট খোলা হয় নি আজও। ছবি: শশী ঘোষ

গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম খানের অভিযোগ, "গ্রামে তেমন কিছুই উন্নয়ন হয়নি। ওপরে ওপরে উন্নয়ন। পানীয় জলের সমস্য়া রয়েছে, হাইস্কুলের শিক্ষকও অনেক কম।" তবে কি নেতাদের দলাদলির জন্য়ই উন্নয়ন থমকে গিয়েছে এশিয়ার তথাকথিত বৃহত্তম গ্রামে? গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রেজাউল মন্ডল মানতে চান না যে উন্নয়ন হয় নি। তিনি বলনে, "এটা সংখ্য়ালঘু অধ্য়ুষিত এশিয়ার সর্ববৃহৎ গ্রাম। কমবেশি প্রায় ১ লক্ষ মানুষের বাস এখানে। জলের সঙ্কট ছিল। আমরা ৯০-৯৫ শতাংশ সমাধান করেছি। অনেক দিনের দাবি এখানে স্বাস্থ্য়কেন্দ্রের জন্য়। প্রশাসনও বলেছিল। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। বাড়িতে ডেলিভারি অনেক কমে গিয়েছে। রাস্তাঘাটের সমস্য়া রয়েছে, যা অল্প সময়ে মেটানো সম্ভব নয়। ২২ কিলোমিটার ঢালাই রাস্তা করেছি। কে কী বলল সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রশ্ন নেই।"

একদিকে শাসকদলের মধ্য়েই উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্নের মুখে এশিয়ার বৃহত্তম সংখ্য়ালঘু অধ্য়ুষিত বিষ্ণুপুর লোকসভার এই গ্রাম। অন্য়দিকে সেই দাবি ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন পঞ্চায়েত প্রধান। কিন্তু ১২ মে এই পুনিশোলের ভোটের কত শতাংশ বিরোধী শিবিরে সুইং করে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

Lok Sabha polls lok sabha 2019
Advertisment