Advertisment

স্বপ্ন পূরণ করতে আস্ত একটা দল গড়ে লড়াইয়ে সোনারপুরের বাদল

আপাতত রাজ্যে আরজেপি প্রার্থীর সংখ্যা পাঁচ। যাদবপুর, দার্জিলিং, জয়নগর, বারাসত ও দমদম কেন্দ্রে হকি স্টিক ও বল নিয়ে ভোট চাইছেন তাঁরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

সোনারপুরের বাদল দেবনাথ

গেরুয়া, সবুজ, লাল, নীল - ভোট ময়দানের হরেক রঙের গোলিয়াথের ভিড়ে রয়েছেন একজন ডেভিডও। যিনি কেবলমাত্র নিজের শখ মেটাতে তৈরি করে ফেলেছেন একটা আস্ত রাজনৈতিক দল!

Advertisment

মানুষের তো কত রকম শখই থাকে! সোনারপুরের বাদল দেবনাথের শখ ছিল, নিজের একটা রাজনৈতিক দল তৈরি করার। এমন একটা দল, যেখানে তিনি নিজেই হবেন সর্বোচ্চ নেতা, নিজেই প্রার্থী ঠিক করবেন। প্রচারের পরিকল্পনা, অভিমুখ নির্ধারণ - সব করবেন একা হাতে। ঠিক যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস, মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি, অথবা লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি।

বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে ২০০৮ সালে ছোটবেলা থেকে লালন করে আসা স্বপ্নটা বাস্তবায়িত করেও ফেলেছেন বাদলবাবু। ২০১০ সালে জুটে গিয়েছে নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি। তারপর থেকে প্রতি ভোটেই লড়াই করে আসছে তাঁর 'রাষ্ট্রীয় জনসচেতন পার্টি' (আরজেপি)। চলতি লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের পাঁচটি কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে তারা। প্রতীক - হকি স্টিক ও বল। দলের সদর দফতর বাদলবাবুর সোনারপুরের বাড়ির বাইরের ঘর। প্রার্থীদের সঙ্গে করে আপাতত নাওয়াখাওয়া ভুলে প্রচারে মেতেছেন তিনি।

আরও পড়ুন: ১৯৫২ সালে পোলিং অফিসার, ২০১৯ সালেও ভোটার!

পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই বাদল দেবনাথের ছোটবেলা কেটেছে উত্তর কলকাতায়। আটের দশকের মধ্যভাগ থেকে তাঁরা সোনারপুরের বাসিন্দা। বাদলবাবু একসময় সক্রিয়ভাবে বিজেপি করতেন। তাঁর কথায়, "আমি বিজেপিতে ঢুকেছিলাম স্বর্গত তপন শিকদারের হাত ধরে। দল করতাম ঠিকই, কিন্তু মন ভরত না। কিশোর বয়স থেকে স্বপ্ন ছিল, নিজেই একটা রাজনৈতিক দল খুলব। আমার আর আমার দলের নামে দেওয়াল লিখন হবে। সেই উদ্দেশ্যে ২০০৮ সালে বিজেপি ছাড়ি। বিজেপি-র কারও সঙ্গে আমার কোনও মনান্তর হয়নি কিন্তু। বড় দলে থাকলে কোনওদিন নিজের দল খুলতে পারতাম না বলেই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।" তাঁর কথায়, "২০০৮ সালেরই ২৯ জুলাই শিলিগুড়িতে স্বামী বিবেকানন্দ আর সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শে নতুন দল তৈরির কথা ঘোষণা করি। অনেক লড়াইয়ের পর ২০১০ সালের ২০ জুন নির্বাচন কমিশনে আরজেপি-র রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছি। তারপর থেকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ উপেক্ষা করে দল করছি। প্রতিটি নির্বাচনে লড়ছি।"

west bengal lok sabha elections দলের সদস্যদের সঙ্গে বাদল দেবনাথ

বাদলবাবুর দল প্রথম ভোটযুদ্ধের ময়দানে নামে ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে। মোট পাঁচটি কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়ে প্রতিটিতেই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এরপর ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের সাতটি কেন্দ্রে প্রার্থী দেন বাদলবাবু। কলকাতা উত্তর, ডায়মন্ড হারবার, মথুরাপুর, যাদবপুর, হুগলি এবং দার্জিলিং। এবারও প্রতিটি কেন্দ্রেই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন জলপাইগুড়ির প্রার্থী হরিপদ বর্মন, তাঁর প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ ৬,৫৫৮। সর্বনিম্ম ভোট পেয়েছিলেন কলকাতা উত্তরের প্রার্থী তরুণ মুখার্জি, ৬৯৬টি।

বাদলবাবুর কথায়, "দেখুন, জেতা-হারা তো বড় কথা নয়। ভোটে লড়াটাই আনন্দের। তাই জামানত নিয়ে আমরা চিন্তিত নই।" তিনি জানান, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরা প্রার্থী দেন নি। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে একটি চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, রাজ্যের সর্বত্র জোড়াফুলের প্রার্থীদের সমর্থন করবে আরজেপি। বাদলের কথায়, "ওই ভোটে তো দিদি জিততেনই, তাই আমরাও আর ঝামেলায় গেলাম না।" তবে পার্থবাবু তাঁদের চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করেছিলেন কিনা, তা নিয়ে অবশ্য কিছু বলতে রাজি নন আরজেপি নেতা।

আরও পড়ুন: দিল্লির ভোটে নামেই নজর টানছে ‘আনজান আদমি পার্টি’

চলতি নির্বাচনে রাজ্যের মোট ৩০টি কেন্দ্রে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন বাদলবাবু। কিন্তু নির্বাচন কমিশন অধিকাংশ কেন্দ্রেই তাঁর প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করে দেওয়ায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ তিনি। তাঁর কথায়, "আমি মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে। কষ্ট করে একটা দল খুলেছি, তাই হয়তো অনেকের গায়ে জ্বালা ধরছে। ভাবুন তো একবার, কেন্দ্রগুলোতে ব্যানার, পোস্টার, ফ্লেক্স লাগানো হয়ে গিয়েছিল, দেওয়ালও লিখে ফেলেছিলাম, তারপর প্রার্থী নেই জানলে কেমন কষ্ট হয়! যা হোক কিছু ভোট তো পেতাম।" এরপরই তাঁর গর্জন, "২০২১ সালে আমি যেভাবে হোক ১০০টা আসনে লড়বই। গোটা বাংলার লোক আমার নাম জানবে। দেখি কে আটকায়!"

আপাতত রাজ্যে আরজেপি প্রার্থীর সংখ্যা পাঁচ। যাদবপুর, দার্জিলিং, জয়নগর, বারাসত ও দমদম কেন্দ্রে হকি স্টিক ও বল নিয়ে ভোট চাইছেন তাঁরা। নির্বাচনে লড়তে তো খরচ প্রচুর! কী করে জোগাড় করছেন? বাদলবাবু বলেন, "আমাদের দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৫৭ জন আছেন। রাজ্য কমিটিতে আছেন ৪৭ জন। চেয়েচিন্তে, ধারদেনা করে হয়ে যায় একরকম। আমরা তো ছোট দল, খরচ কম। মনোনয়ন জমার দেওয়ার সময় যে টাকাটা লাগে, সেই ধাক্কাটা সামলে দিতে পারলে বাকিটা টুকটুক করে চালিয়ে নিই।"

ভোটে জিতলে কী করবেন? বাদলের সহাস্য উত্তর, "আমরা তো জিতব না, তাই সে নিয়ে ভাবছিই না। তবে যদি জিতে যাই, বিবেকানন্দ আর নেতাজীর পথেই দেশ চালাব।"

election commission General Election 2019
Advertisment