বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করতে গিয়ে শুক্রবার বেশ কিছু নজিরবিহীন পদক্ষেপ করেছেন নির্বাচন কমিশন। তার মধ্যে ৮ দফায় ভোট, দুজন পুলিশ পর্যবেক্ষকের মতো তিন নম্বর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল, একাধিক পার্টে জেলাভিত্তিক ভোট। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তিন ভাগে ভোটগ্রহণ। কেন এই নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত? দক্ষিণের এই জেলায় তিন দফায় ভোট নিয়ে এদিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেই দিলেন, এই জেলায় শাসকদলের ক্ষমতা বেশি বলেই কি সিদ্ধান্ত? কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দেন তিনি। সত্যিই কি তাই!
হতেও পারে। কারণ জানতে কয়েক মাস পিছনে ফিরতে হবে। কর্মিসভা করতে ডায়মন্ড হারবারে যাচ্ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী কেন্দ্রে সেই কর্মিসভায় যাওয়ার পথে আক্রান্ত হন নাড্ডা। ইট-পাথর ছোঁড়া হয় তাঁর কনভয়ে। কাঠগড়ায় ওঠে তৃণমূল। সেই ঘটনায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
বঙ্গ নেতৃত্বের কাছ থেকে ঘটনার রিপোর্ট পেয়েই কড়া হন অমিত শাহ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কড়া চিঠি নবান্নকে, আইনৃশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ এবং তিন আইপিএসকে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে তলব। এসব থেকেই বোঝা যাচ্ছিল দক্ষিণের এই জেলায় তৃণমূলকে উৎখাত করতে সব প্রচেষ্টাই করবে বিজেপি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও এসে এই জেলায় পরিবর্তন যাত্রার সূচনা করেছেন। মধ্যাহ্নভোজন করেছেন মৎস্যজীবীর বাড়িতে। একটা আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল। জেলার ৩১টি আসনে জয়লাভ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। শাসক-বিরোধী সবার কাছেই গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পিছনে যদি যাওয়া যায়, পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা নির্বাচন, সবসময়ই রক্তাক্ত হয়েছে এই জেলা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাকদ্বীপের সিপিএম কর্মী দম্পতিকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে পুকুরে ফেলা দেওয়া, হিংসা-হানাহানি, সবক্ষেত্রেই অভিযোগের তির ছিল শাসকদলের দিকে। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পর শুভেন্দু অধিকারীও ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে বুথ লুঠ করে ভোটে জেতার অভিযোগ তোলেন প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে। সবমিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ যেমন অমূলক নয়, তেমনই হিংসামুক্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার জন্যই এই পদক্ষেপ কমিশনের সেটাও বলাই যায়।