Advertisment

ভোটের আগে ধান কেনার দৌড়ে শীর্ষ তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ

কেন্দ্রের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ওপর প্রতি কুইন্টাল ২০ টাকার বোনাসের মেয়াদ বাড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এছাড়াও কৃষক পিছু বিক্রয়যোগ্য পরিমাণ ৯০ কুইন্টাল করে বেঁধে দেওয়া হয়েছে, যাতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কৃষক ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের সুবিধে নিতে পারেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
কেন বামপন্থী এই লোকসভা নির্বাচন

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ধাক্কা ছাড়া একে আর কী বলা যায়? বর্তমান মার্কেটিং বর্ষ, যা চলবে অক্টোবর থেকে আগামী সেপটেম্বর পর্যন্ত, সরকারের তরফে ধান কেনার নিরিখে সম্ভবত রেকর্ড সৃষ্টি করতে চলেছে। এই চলতি মার্কেটিং বর্ষে সরকারিভাবে কেনা হবে ৪০ মিলিয়ন টন (এমটি) ধান, যা ২০১৮-১৯ এর আনুমানিক মোট উৎপাদন, অর্থাৎ ১১৫ এমটি-র, এক তৃতীয়াংশেরও বেশি।

Advertisment

কেন্দ্রীয় উপভোক্তা, খাদ্য, ও সার্বজনীন বিতরণ বিষয়ক (মিনিস্ট্রি অফ কনজিউমার অ্যাফেয়ারস, ফুড অ্যান্ড পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন) মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৪২.৪৫ লক্ষ টন (এলটি, ১০ এলটি-তে এক এমটি) ধান ২০১৮-১৯ মার্কেটিং বর্ষে কিনে নিয়েছে ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকারি সংস্থা। যেহেতু পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে বর্ষা-পরবর্তী খারিফ শস্যের বিক্রি এখনও চলছে, এবং শীতের রাবি শস্য বাজারে আসতে এপ্রিল গড়িয়ে যাবে, শেষমেশ সরকারিভাবে কেনা ধানের পরিমাণ ৪০০ এলটি ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। গত দু'বছরের ৩৮১-৩৮২ এলটি-র তুলনায় যা বেশি।

মন্ত্রকের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, "এবছর আমাদের নিজস্ব টার্গেট ৩৭৫ এলটি, যা সম্ভবত ছাড়িয়ে যাব আমরা। যেসব রাজ্য বোনাস (কেন্দ্রের ঘোষিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইসের চেয়ে বেশি) দিয়ে অতিরিক্ত ধান কিনছে, অথবা তাদের নিজস্ব সরাসরি ক্রয় প্রকল্প রূপায়িত করছে, তাদের পরিমাণ যোগ করলে আমাদের কাছে ৪০০ এলটি-র বেশি থাকবে।"

এবার রাজ্য অনুযায়ী তথ্য পরীক্ষা করলে বেশ মজাদার একটি চিত্র সামনে আসে।

publive-image রাজ্য অনুযায়ী ধান কেনার হার

বর্তমান মার্কেটিং মরশুমে ১ নভেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ছত্তিসগড় কিনেছে ৮০.৩৭ এলটি ধান, যার ৬৭ শতাংশের পণ্যযোগ্যতায় অঙ্কটা গিয়ে দাঁড়ায় ৫৩.৮৫ এলটি পরিশোধিত চালে, যা পূর্বতন রেকর্ড সৃষ্টিকারী ২০১২-১৩ সালের ৪৮.০৪ এলটি-র চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়াও রাজ্যের নতুন কংগ্রেস সরকার ধানের কুইন্টাল প্রতি ১,৭৫০ টাকার কেন্দ্রের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ওপরেও ৭৫০ টাকা করে বোনাস ঘোষণা করেছে।

ছত্তিসগড়ের ফুড অ্যান্ড সিভিল সাপ্লাইজ দফতরের মুখ্য সচিব রিচা শর্মা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, "আমরা ইতিমধ্যেই ২২ ডিসেম্বরের পর কেনা ধানের জন্য ২,৫০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল দিয়েছি। এর আগে কেনা ধানের জন্য বোনাসের টাকা এই মাসের শেষে দিয়ে দেওয়া হবে। এতে মোট ১৫.৭১ কোটি কৃষক লাভবান হবেন।" প্রতি কুইন্টাল ৭৫০ টাকা বোনাসের কথা ২০১৮ সালের নভেম্বরে বিধানসভা নির্বাচনের সময় কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়। হিসেব অনুযায়ী, ৮০.৩৭ এলটি ধান কিনতে রাজ্য সরকারের খরচ হবে ৬,০২৮ কোটি টাকা।

কৃষক দরদী তালিকায় আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হলো আরেক বিরোধী শাসিত রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ। এতটাই, যে এবার ধান কেনায় সর্বকালীন রেকর্ড সৃষ্টি করবে রাজ্য, এমনটাই আশা করা যাচ্ছে। রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের মুখ্য সচিব মনোজ কুমার আগরওয়াল জানিয়েছেন, "এবছর আমাদের লক্ষ্য ৫২ এলটি ধান (অর্থাৎ ৩৪.৮৪ এলটি চাল), যার মধ্যে প্রায় ৩০ এলটি কেনা হয়ে যাবে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকের মধ্যে, এবং ৪০ এলটি এপ্রিলের মধ্যে, যখন খারিফ শস্যের বিক্রি শেষ হয়ে যাবে। অবশিষ্ট পরিমাণের অধিকাংশটাই হবে বোরো (রাবি) ধান, যা কেনা হবে মে থেকে অগাস্ট মাসের মধ্যে।

কেন্দ্রের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ওপর প্রতি কুইন্টাল ২০ টাকার বোনাসের মেয়াদ বাড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এছাড়াও কৃষক পিছু বিক্রয়যোগ্য পরিমাণ ৯০ কুইন্টাল করে বেঁধে দেওয়া হয়েছে, যাতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কৃষক ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের সুবিধে নিতে পারেন, যা বাজারদরের চেয়ে কুইন্টাল পিছু ২৫০-৩০০ টাকা বেশি। আগরওয়াল জানিয়েছেন, "আমাদের ক্ষেত্রে ৫২ এলটি কোনো বাঁধা-ধরা টার্গেট নয়। কৃষকরা যদি তার পরেও ধান নিয়ে আসেন, আমরা ফিরিয়ে দেব না।"

অন্যদিকে, বিজেপি-শাসিত উত্তর প্রদেশেও এবছর অনায়াসেই ৫০ এলটি ধান কিনে নেবে সরকার। রাজ্যের খাদ্য ও লজিস্টিকস দফতরের মুখ্য সচিব নিবেদিতা শুক্লা ভর্মা জানান, "আপাতত টার্গেট ৫০ এলটি। পশ্চিম উত্তর প্রদেশে আমরা ধান কিনেছি ১ অক্টোবর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। পূর্ব উত্তর প্রদেশে এই প্রক্রিয়া শুরু হয় ১ নভেম্বর, চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ইতিমধ্যেই আমরা ৪৬ এলটি সংগ্রহ করেছি, এবং কৃষকরা আমাদের ক্রয় কেন্দ্রে যথাযথভাবে পরিষ্কার করা, শুকোনো ধান নিয়ে এলে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের চেয়ে ২০ টাকা বেশি দিচ্ছি প্রতি কুইন্টাল।"

এর আগে ২০০৮-০৯ মরশুমে উত্তর প্রদেশ সরকার কেনে ৪০.০৮ এলটি চাল, এবং ২০১১-১২ সালে ৩৩.৫৫ এলটি। ২০১৮-১৯ সালের লক্ষ্য ছিল ৩৩.৫৫ এলটি (৫০ এলটি ধানের বিক্রয়যোগ্য অংশ), যা কিনা আগের বছরগুলির তুলনায় কম বা সম পরিমাণ। কিন্তু কিছুদিন আগেই গত বছরের গম উৎপাদনের ৫২.৯৪ এলটি কিনে নিয়েছে সরকার, যেখানে এর আগে সরকারিভাবে কেনা গমের সর্বোচ্চ পরিমাণ ছিল ২০১২-১৩ সালের রাবি ফসল বিক্রির মরশুমে কেনা ৫০.৬৩ এলটি।

উল্লেখ্য, আখ চাষীদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা, অথবা কৃষকদের ফসলের ওপর রাজ্যের আশ্রয়হীন গরুদের হামলার ফলে উৎপন্ন সমস্যার কারণে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে। সেই প্রেক্ষিতে ধান এবং গম সংগ্রহে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে ইতিবাচক বার্তা পাঠাতে চাইবে প্রশাসন।

সিক্কার উল্টো পিঠে কিন্তু রয়েছে আরেক সমস্যা। নির্বাচনী চাপে পড়ে যত বেশি সংখ্যক রাজ্য ফসল কেনার দৌড়ে সামিল হবে, সরকারি গুদামে তত বাড়বে স্টক। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারে ১ জানুয়ারির হিসেব অনুযায়ী মোট ধান এবং চালের পরিমাণ ৩৬৬.৬০ এলটি, যা কিনা নির্দিষ্ট ন্যূনতম পরিমাণের প্রায় পাঁচ গুণ। এর সঙ্গে ২৭১.২১ এলটি গম যোগ করলে মোট ফসলের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৬৩৭.৮১ এলটি। প্রসঙ্গত, এর আগে কেন্দ্রের ভাণ্ডারে সর্বোচ্চ পরিমাণ, ৬৬৬.০৪ এলটি, জমেছিল ১ জানুয়ারি ২০১৩ সালে।

yogi adityanath tmc
Advertisment