নির্বাচন উৎসব শেষ হতে আর আন্দাজ দুই সপ্তাহ বাকি, এই মোক্ষম সময় মুখ খুলে বিজেপি'র জাতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব ভবিষ্যদ্বাণী করলেন, পরবর্তী সরকার গড়তে জোটসঙ্গীদের সাহায্যের প্রয়োজন হবে বিজেপি'র। এই প্রথম লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ চলাকালীন জোট সরকারের প্রসঙ্গ উঠে এল জনসমক্ষে। বিজেপির অন্যান্য শীর্ষ নেতা - যেমন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ - প্রকাশ্যে যা দাবি করেছেন, রাম মাধবের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ৫৪৫ আসনের লোকসভায় বিজেপির আসন সংখ্যা তার চেয়ে অনেকটাই কম থাকবে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সীমারেখার ঠিক নীচে।
"যদি আমরা নিজেদের জোরেই ২৭১ টি সিট পাই, তাহলে খুব খুশি হব," দিল্লিতে সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গের মুখ্য সম্পাদক (নিউজ) জন মিকলথওয়েটের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন মাধব। "এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স) সঙ্গে থাকলে সহজেই মেজরিটি পাব আমরা।"
মাধবের আরও বক্তব্য, ২০১৪ সালের বিজেপি ঢেউয়ে ভেসে যাওয়া উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে যা লোকসান হবে, তা পুষিয়ে নেওয়া হবে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রান্তিক রাজ্যে, এবং পূর্বাঞ্চলে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার মতন রাজ্যে। তাঁর কথায়, ক্ষমতায় ফিরলে উন্নয়নমূলক নীতি মেনে চলবে বিজেপি, এবং জনমুখি আর্থিক নীতির পথে না হেঁটে অর্থনৈতিক সংস্কারের দিকেই নজর দিয়েছে তারা।
তিনি বলেন, "আমরা পূর্ব ভারতে ভালোমতোই প্রভাব বিস্তার করেছি - একই ধরনের পরিশ্রম যদি দক্ষিণ ভারতেও দেওয়া হতো, আমাদের অবস্থান আরেকটু জোরালো হতো। রাজনীতিক হিসেবে আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতিষ্ঠান-বিরোধী মনোভাবের ফলে গতবার আমরা যা করতে পেরেছিলাম, তার পুনরাবৃত্তি নাও ঘটতে পারে।"
দলের প্রতি আস্থা
কিন্তু এসবের থেকে দূরে ভারতের কার্পেট শিল্পের রাজধানী ভাধোইয়ের কাছে একটি বিশাল তাঁবুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রচার সভায় সমবেত ৫০,০০০ সমর্থকদের মধ্যে রীতিমত উল্লাসের চিহ্ন দেখা গেল। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আগে বাজার গরম করতে মঞ্চে উঠলেন উত্তরপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রধান মৌর্য। "২০১৪ ছিল মোদী ঢেউ। ২০১৯ হচ্ছে মোদী সুনামি," বলেন মৌর্য। তারপর বলেন, "পদ্ম চিহ্নে আপনাদের ভোট মানে সন্ত্রাসবাদীদের শিবিরের ওপর ১,০০০ কিলোগ্রাম বোমা।"
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক
পড়শি দেশ সম্পর্কে যতই কঠিন কথা বলুন মোদী, দলের হয়ে কিছু বিদেশনীতি নির্ধারণকারী মাধবের গলায় কিন্তু পাকিস্তান নিয়ে আশার সুরই শোনা গেল। তাঁর মতে, সম্প্রতি রাষ্ট্রসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের দ্বারা জৈশ-এ-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করার পদক্ষেপ পাকিস্তানকে সুযোগ দিচ্ছে এটা প্রমাণ করার, যে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা। মাধবের এও বক্তব্য, সেই ব্যবস্থা বিশ্বাসযোগ্য হলে মোদী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মধ্যে নির্বাচনের অল্পদিন পরেই চীনে আসন্ন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হতে পারে।
মাধবের কথায়, "ওদের দেখাতে হবে যে ওরা আন্তরিকভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চায়। আমি একথা বলছি কারণ নির্বাচনের ফল প্রকাশ হওয়ার তিন সপ্তাহ পর রয়েছে এসসিও। সেই এসসিও-তে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী মুখোমুখি হবেন। এটা পাকিস্তানের কাছে সুযোগ। আগামী একমাসের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য কিছু ঘটলে, অর্থাৎ এসসিও-র আগে, আমি নিশ্চিত যে সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হবে। কিন্তু দায়টা ওদের।"
উল্লেখ্য, আজহারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রসংঘের পদক্ষেপ সম্ভব হয় তখনই, যখন এই পদক্ষেপ সংক্রান্ত তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করে নেয় চীন। এ বিষয়ে মাধবের বক্তব্য, "আমি যা বুঝেছি, তাতে চীন অবশেষে মাসুদ আজহারের প্রতি তাদের অবস্থান জনিত লাভ-ক্ষতির হিসেব নিকেশ করে উঠতে পেরেছে।"
'ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক'
ভারতের বিদেশনীতিতে আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হলো মোদী এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং-এর মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা। "তাঁরা খুব ভালো ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন," বলেন মাধব। তাহলে চীনের বিস্তৃত এবং বিতর্কিত বেল্ট অ্যান্ড রোড পরিকাঠামো প্রকল্প, যাতে ভারত অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে, তার কী হবে? মাধবের উত্তর, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নের মীমাংসা না হলে কোনও আপোষের ব্যাপার নেই। "আমরা এখনও মনে করি, গোটা প্রকল্পটাই একতরফা ভাবা হয়েছে।"