Advertisment

নীতীশের মাস্টারস্ট্রোক...! গোলকধাঁধায় আটকে বিজেপি, বাড়তি অক্সিজেন 'ইণ্ডিয়া' জোটে

কেন্দ্রে জয়ের হ্যাটট্রিক করার প্রস্তুতির মাঝেই নীতীশের মাস্টারস্ট্রোক।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
bjp, congress, nitish kumar, nitish kumar reservation, nitish kumar remark, nitish kumar's remark on women, assembly, bihar politics,bihar reservation, bihar, modi nitish, obc, caste census, caste survey, congress, indian express"

নীতীশ কুমার

জাত শুমারির পরে ‘সংরক্ষণ’ নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নীতীশ কুমারের।  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিনামূল্যের রেশন প্রকল্প আরও ৫ বছর বাড়ানোর ঘোষণার পরই নীতীশ কুমার সংরক্ষণ ইস্যুতে বিজেপিকে কোনঠাসা করেছেন। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের মাস্টারস্ট্রোকে দিশাহীন বিজেপি।

Advertisment

বিহারে জাত সমীক্ষার আর্থ-সামাজিক রিপোর্ট প্রকাশের পরে, নীতীশ কুমার সংরক্ষণের সীমা ৭৫% করার প্রস্তাব করেন। সংরক্ষণের পরিধি বাড়ানোর প্রস্তাব বিহার মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ। বিলটি বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। নয়া নিয়ম অনুসারে SC, ST, OBC, EWS-এর জন্য সংরক্ষণ ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৫% করা হবে। একই সময়ে, EWS-এর ১০ শতাংশ সংরক্ষণের প্রস্তাবও রয়েছে সংশোধনীতে।  

বিহার সরকারের নয়া প্রস্তাব হল, তফসিলি জাতির সংরক্ষণ হবে ২০ শতাংশ। তফসিলি উপজাতির সংরক্ষণ ২ শতাংশ। অন্যান্য অনগ্রসর জাতি অর্থাৎ ওবিসি এবং অতি অনগ্রসর জাতি অর্থাৎ ইবিসিদের জন্য সংরক্ষণ ৪৩ শতাংশ। দুর্বল অংশের জন্য ১০ % সংরক্ষণ থাকবে। নীতীশের এই সিদ্ধান্তকে মাস্টারস্ট্রোক হিসাবে দেখা হচ্ছে।

তবে নীতীশের এই বাজি ২০২৪ সালের নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে তা সময়ই বলে দেবে। বিধানসভায় বিজেপি ‘রিজার্ভেশন সংশোধনী বিলকে’ সমর্থন করেছিল। সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমর্থনে দাঁড়িয়েছে বিজেপি। বিজেপি পঞ্চায়েত এবং পৌর সংস্থাগুলিতেও সংরক্ষণের সুযোগ বাড়ানোর দাবি করছে।

উল্লেখ্য নীতীশের দল জেডি(ইউ) এর উত্তরপ্রদেশ ইউনিট  সম্প্রতি তাকে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনে ফুলপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আহ্বান জানিয়েছে। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর এই আসন থেকেই প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন।

নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

শুক্রবার বিধানসভায় বিলটি পাস হওয়ার পর তা অনুমোদনের জন্য রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হবে। রাজ্যপালের অনুমোদনের পরই আইন আনা হবে। নিয়ম প্রণয়নের পর বিহারে তা কার্যকর করা হলেও রাজ্যপালের অনুমোদন মিলবে কি না তা বড় প্রশ্ন? আসলে, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে সংরক্ষণের সীমা ৫০ শতাংশের বেশি বাড়ানো যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি এটি বাস্তবায়নের জন্য আদালতের সম্মতির প্রয়োজন হতে পারে।

অনেক রাজ্যে সংরক্ষণের পরিধি বাড়ানো হয়নি

প্রতিবেশী রাজ্য বিহারের ঝাড়খণ্ডে সংরক্ষণের পরিধি বাড়ানোর প্রস্তাব বিধানসভায় পাশ করা হয়েছিল এবং রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে সংরক্ষণের সীমা ৫০ শতাংশের বেশি বাড়ানো যাবে না, তাই এ বিষয়ে ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেলের মতামত চেয়েছেন ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল। তিনি স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেন যে এটি সম্ভব নয়। এর পরে, ঝাড়খণ্ডে সংরক্ষণের সুযোগ বাড়ানোর প্রস্তাবে সম্মতি দেননি রাজ্যপাল। বিষয়টি ঝাড়খণ্ডে বিচারাধীন। এমনকি ছত্তিশগড়েও সংরক্ষণের সুযোগ বাড়ানোর প্রস্তাবে সম্মতি দেননি রাজ্যপাল। এখন বিহারে রাজ্যপালের মনোভাব কী হবে সেদিকেই নজর বিহার সরকারের।

বিজেপির উদ্দেশ্য দেখা  হবে - চেতন আনন্দ

আরজেডি বিধায়ক চেতন আনন্দ বলেছেন যে বিহার সরকার রাজনৈতিক লাভের জন্য সংরক্ষণ সংশোধনী বিল পেশ করেনি। এটি ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য কোন মাস্টারস্ট্রোক নয়। আমরা জনগণের কল্যাণ চাই। বিজেপির উদ্দেশ্য কী তা পরীক্ষা করা হবে।  বিজেপির উচিত রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলে বিলটি অনুমোদন করা। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, সংরক্ষণের সীমা ৫০ শতাংশের বেশি বাড়ানো যাবে না। এ বিষয়ে চেতন আনন্দ বলেন, বিষয়টি আইনিভাবে আটকে যাবে নাকি কী হবে? এটা পরের বিষয়। রাজ্যপালের অনুমোদন পাওয়া যায় কি না সেটাই দেখার বিষয়, তবে বিহার সরকার নিজের থেকে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

‘বিজেপি বরাবরই সংরক্ষণের পক্ষে’

একইসঙ্গে বিলটি সংসদে পেশ করার আগেই বিজেপি তার অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছে। বিজেপি বিধায়ক হরিভূষণ ঠাকুর বাচাউল বলেছিলেন যে আমরা সংসদে সংরক্ষণ সংশোধনী বিলকে সমর্থন করব। বিজেপি চায় সংরক্ষণের পরিধি বাড়ুক। বিজেপি জনস্বার্থে গৃহীত প্রতিটি সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে এবং বিহার সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিজেপি বরাবরই সংরক্ষণের পক্ষে। তবে এই সিদ্ধান্তে বিহার সরকার কোন নির্বাচনী সুবিধা পাবে না।

'কেন্দ্রীয় সরকার সম্পূর্ণ ভীত

জেডিইউ মন্ত্রী রত্নেশ সাদা বলেছেন যে বিহার সরকার যেভাবে সংরক্ষণের সুযোগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকার পুরোপুরি ভীত হয়ে পড়েছে। বিহার সরকারের এই সিদ্ধান্তে উপকৃত হবে সব মহল। প্রত্যেক জাতি উপকৃত হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলেছে নীতীশ সরকার। নীতীশ রাজনৈতিক লাভের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেননি। এটাকে ২০২৪ সালের নির্বাচনের সঙ্গে দেখা উচিত নয়।

নীতীশ মডেল ব্যবহার করে মিশন-২৪ জয়ের পরিকল্পনা করছেন, বিজেপি কীভাবে জাতশুমারি-সংরক্ষণের দ্বিগুণ আঘাত মোকাবেলা করবে? এখন সেটাই বড় প্রশ্ন হিসাবে সামনে এসেছে।

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য সমস্ত রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যেই  প্রস্তুতি শুরু করেছে। একদিকে বিজেপি, অন্যদিকে ইণ্ডিয়া জোট। জাত শুমারি উভয়ের জন্য একটি বড় বিষয়। বিরোধীরা যখন জাত শুমারির বিষয়ে নিয়ে সুর চড়িয়েছেন তখন বিজেপি হিন্দুত্বকে সামনে রেখেই নির্বাচনে জয়ের বাজি ধরতে চাইছে।

আগামী লোকসভা নির্বাচন নিয়ে বিজেপি কি এখন নীতীশ মডেলের এই গোলকধাঁধায় আটকা পড়তে পারে? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি হিন্দুত্ব ও আত্মনির্ভর ভারতের ভিত্তিতে কেন্দ্রে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। নীতীশের সংরক্ষণ ইস্যু নিয়ে সামনে এসেছে প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্তব্য।্নতিনি বলেছিলেন যে বিজেপি ওবিসি স্বার্থের জন্য সর্ব্দা চিন্তিত। কেন্দ্রীয় সরকারে ২৭ জন ওবিসি মন্ত্রী রয়েছেন। তিনি বলেছিলেন যে দেশে বিজেপির ৩৬৫ ওবিসি বিধায়ক রয়েছে। বিজেপি পিছিয়ে পড়া মানুষের প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষী তা দেখানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করছে মোদী।

জাতিশুমারির বিরোধিতার বিষয়টি কীভাবে মোকাবেলা করবেন? বিজেপি এখনও এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এবার সংরক্ষণের কোটা  বাড়ানোর বিরোধীদের নতুন পদক্ষেপ সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে। অমিত শাহ, যাকে বিজেপির চাণক্য বলা হয়, তাঁর কাছেও এর সমাধান খুঁজে পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ। ছত্তিশগড়ে দলের ইস্তেহার প্রকাশ করে অমিত শাহ বলেছেন যে ‘আমরা কখনও এর বিরোধিতা করিনি’। তবে আমরা চটজলদি করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। প্রসঙ্গত, তেলেঙ্গানায় ওবিসি নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করার ঘোষণা দিয়েছে বিজেপি।

জাত শুমারি রাজনৈতিক দলগুলির জন্য একটি বড় বিষয়

আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস তাদের এজেন্ডা পরিবর্তন করেছে। রাহুল গান্ধী রাজ্যে রাজ্যে জাত শুমারির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। মায়াবতী থেকে শুরু করে অখিলেশ যাদব রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করেছেন অনেকেই। তিনি  বলেছেন যে যারা মন্ডল কমিশনের বিরোধিতা করেছিল তারা এখন জাতি শুমারির সমর্থনে।

বর্ণ শুমারি ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ ইণ্ডিয়া জোট

লোকসভা নির্বাচনের জন্য জাত শুমারি ইস্যুতে ইণ্ডিয়া জোট ঐক্যবদ্ধ। এটাই জোটের সবচেয়ে বড় সাফল্য। দক্ষিণ থেকে উত্তর ভারতে এটি একটি বড় সমস্যা। অ-যাদব ওবিসিদের সঙ্গে বিজেপির সামাজিক সমীকরণ ভাঙার দিকেই বিরোধীদের নজর।

পিছিয়ে পড়া মানুষের সঙ্গে বিজেপি

কেন্দ্রে জয়ের হ্যাটট্রিক করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি। একদিকে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কাজের কথা বলছেন। অন্যদিকে হিন্দুত্বকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ইস্যু হিসাবে সামনে আনা হচ্ছে। অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ থেকে শুরু করে যোগী আদিত্যনাথ নির্বাচনী ফায়দা তুলতে মরিয়া। তবে এর কৃতিত্ব বিজেপিকে পুরোপুরি দিতে চাইছে না এটি কংগ্রেস। কমলনাথের মতো বর্ষীয়ান নেতারাও রাম মন্দির ইস্যুতে রাজীব গান্ধীর প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন।

Nitish Kumar
Advertisment