৭ মার্চ ব্রিগেডে মোদীর সভার আগে প্রচারের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে বিজেপি। আসছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সভা-সমাবেশে নজরে পড়ছেন বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীরা। মঙ্গলবার মালদহের গাজোলে সভা করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। রাম নাম নিয়ে মমতা সরকার ও তৃণমূলকে নিশানা করেন তিনি। জানতে চান বাংলায় 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান রোখার চেষ্টা করা হয় তা নিয়ে মমতা সরকারের কৈফিয়ৎ তলব করেন তিনি। কেন দুর্গাপুজোর বিসর্জন বন্ধ করা হয়েছিল তা জানতে চান। বিজেপির নজরে বঙ্গ। বাঙালি আবেগ গেরুয়া শিবিরের অন্যতম পুঁজি। এদিন যোগীর মুখে তাই শোনা গেল বামলার মনীষীদের স্তুতি। এ রাজ্যের নারী নিরাপত্তাকেও কটাক্ষ করেন যোগী আদিত্যনাথ। তাঁর স্পষ্ট নিদান, 'বাংলায় রাম বিরোধীদের প্রয়োজন নেই।' পশ্চিমবঙ্গে লাভ জিহাদের ঘটনা বাড়ছে বলেও তোপ দাগেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি বাংলার ক্ষমতা দখল করলেই গো হত্যা বিরোধী আইন আনা হবে বলে আশ্বাস দেন যোগী।
কী বললেন যোগী আদিত্যনাথ?
- 'স্বামী বিবেকানন্দ,নেতাজি সুভাষ চন্দ্রবসু ,শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের এই জন্মভূমিকে আমার প্রণাম। মালদহ ভারতীয় সংস্কৃতির পীঠস্থান। চৈতন্য মহাপ্রভুর এই ভূমি বৈষ্ণব ধর্মের প্রচার করতে বড় ভূমিকা নিয়েছে। বাংলায় অরাজকতা দেখলে দেশবাসীর খারাপ লাগে। এই মাটি গুরুদেবের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাটি। এই মাটি নোবেল নিয়ে এসেছিল। ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলা এখন কোথায়?'
- 'বাংলায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প কার্যকর করতে দেওয়া হয় না। প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারতের লাভ কেন তৃণমূল সরকার দিতে চায় না। প্রধানমন্ত্রী কৃষাণ সম্মান নিধির লাভ সোজা অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো। কিন্তু এখানে মমতা দিদি সেটা করতে দেয়নি। এক দেশ,এক রেশন বাংলায় মানুষ সেভাবে সুবিধা পায়নি।'
- 'বাংলায় দুর্গাপুজো করতে দেওয়া হয় না। গরু পাচার করতে দেওয়া হয়।'
বাংলা সবসময় রাম নাম জপ করে। কিন্তু সেই বাংলাতেই জয় শ্রী রাম স্লোগান দিতে দেওয়া হয় না। কেন রোখা হচ্ছে রাম নাম স্লোগান?' - 'রাম বিরোধীদের গোটা দেশে জায়গা নেই। বাংলাতেও রামদ্রোহীদের কোনও স্থান নেই।'
- 'উত্তর প্রদেশে কোনও কালে একটা সরকার ছিল যারা অযোধ্যায় রামভক্তদের ওপর গুলি চালাত, তাদের পরিণতি কী হয়েছে আপনারা দেখেছেন। এবার বাংলায় তৃণমূল সরকারের পালা'
- ' সিএএ নিয়ে বাংলায় হিংসা কেন হয়েছে? এখানকার সরকার অনুপ্রবেশকারীদের বাইরে পাঠাতে চায় না।'
- 'পশ্চিবঙ্গে লাভ জিহাদের ঘটনা হচ্ছে। আমরা উত্তরপ্রদেশে এই নিয়ে আইন এনেছি। লাভ জিহাদের পরিণাম খুব বাজে হয়। এখানকার সরকার তা নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে সরকার অপরাধীদের সুবিধা দেয়, ওই সরকারকে সরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। বাংলায় পরিবর্তন চাই।'
- 'আগে ভারতের সব যুবক-যুবতী কাজ করতে বাংলায় আসতেন। এখন সেই বাংলা অনেক পিছিয়ে চলে গেছেন। অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলা পিছিয়ে গেছে। এখানকার যুবকরা রোজগারের জন্য উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লিতে যায়।'
- ' শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্বপ্ন পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কাশ্মীরের ধারা ৩৭০ বিলোপের হয়েছে। যাঁরা রাম মন্দিরের জন্য বলিদান দিয়েছে। তাদের স্বপ্ন এই বিজেপির সরকার পূরণ করেছে। অযোধ্যায় রাম মন্দিরের নির্মাণ হচ্ছে। বাংলায় বিজেপি সরকার নিয়ে আসুন।'
- 'বাংলার মুখ্যমন্ত্রী যা সব কথা বলেন, তাতে রাজ্যবাসী অপমানিত। কিছু লোক বাংলায় তোষণ রাজনীতি করে। আমরা এলে এখানে তোষণ রাজনীতি করা হবে না। উত্তরপ্রদেশে কেউ গো হত্যা করতে পারে না। ২০১৭ সালে আমাদের সরকার এসেছিল। তখনই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেআইনি সব বন্ধ হয়েছে। বিজেপি সরকার আসলে বাংলায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবৈধ গো হত্যা বন্ধ করা হবে। গরুপাচার বন্ধ হবে।'
- 'এখানকার সরকার মহরমের জন্য দুর্গাপুজো করতে দেয়নি। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে আমি এটা হতে দিইনি। এখানে গরুপাচারকারীদের মদত দেওয়া হয়। স্বামী বিবেকানন্দ এই বক্তব্য বলেছিলেন গর্বের সঙ্গে বল আমি হিন্দু। '
- '২ মে বাদে বিজেপি সরকার আসলে, তৃণমূলের গুণ্ডারা প্রাণভিক্ষা চাইবে। বাংলার কৃষাণদের সব ধরণের সুবিধা দিতে হবে। বিজেপি সরকার আসলে সব সফল হবে।'
এই সভার পরই হাথরসে নির্যাতিতার বাবাকে হত্যার ঘটনাকে তুলে ধরে উত্তরপ্রদেশের আইন-সৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিয়ে যোগীকে আক্রম শানিয়েছেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চটোটপাধ্যায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন