অমর্ত্য সেনের পর ফের ইতিহাস রচনা বাঙালির। ২০১৯-এর অর্থনীতিতে নোবেল পাচ্ছেন বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। এস্থার ডাফলো, মাইকেল ক্রেমারের সঙ্গে অর্থনীতির সর্বোচ্চ সম্মান ভাগ করে নিচ্ছেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্ব জুড়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ নিয়ে কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ নোবেল পাচ্ছেন এই তিন অর্থনীতিবিদ। স্ত্রী এস্থার ডাফলোর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ে গবেষণা করছেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে ১৯৮৩ সালে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। ১৯৮৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন তিনি। তার পর থেকেই মূলত বিদেশেই কর্মরত ছিলেন বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কলকাতার বাড়িতে মাঝেমধ্যেই আসতেন। অমর্ত্য সেনের নোবেল জয়ের ২১ বছর পর, বিশ্বের দরবারে ফের আলোড়ন তৈরি করল বাংলা।
আরও পড়ুন, বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেল জয়
এই সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই উচ্ছ্বসিত বাংলার মানুষ, বিশেষত কলকাতার বাঙালিরা। আজ যিনি বিশ্বজয় করলেন, একটা সময় তিনি এই শহরেই বড় হয়েছেন। বাঙালি অর্থনীতিবিদের বিশ্বজয়ে অত্যন্ত আনন্দিত বাংলার তারকারাও। টলিউড থেকে বলিউড অনেকেই ইতিমধ্যে সোশাল মিডিয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদকে।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে এই প্রসঙ্গে বলেন, ''এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের বিষয়। একজন বাঙালি হিসেবে গৌরবের তো বটেই। আনন্দ প্রকাশ করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।''
বাংলা ছবি ও বাংলা টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানান, ''নিঃসন্দেহে এটা গৌরবের বিষয়। স্কুল ও কলেজ জীবন উনি কলকাতায় কাটিয়েছেন, তাতে আরও বেশি করে গর্ব হচ্ছে। তবে 'এতদ্বারা প্রমাণিত হইল বাঙালির মেধা শ্রেষ্ঠ'- এ জাতীয় কোনও মনোভাব আমার নেই। এই সংকীর্ণ সময়ে নতুন করে আর বিভাজনের দরকার নেই। দিনের শেষে এটাই বড় কথা যে যোগ্য মানুষ সম্মানটা পেয়েছেন।''
পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানালেন, ''সমগ্র বাঙালি জাতির কাছে আজ গর্বের দিন। আমিও একজন ভারতীয় নাগরিক হিসাবে ভীষণ আনন্দিত। অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই।''
পরিচালক সৃজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ও অর্থনীতির ছাত্র এবং অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর একটি অসাধারণ যোগসূত্র রয়েছে। দুজনেই পড়াশোনা করেছেন কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুলে। এর পর দুজনেই প্রথমে প্রেসিডেন্সি কলেজ ও পরে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার পক্ষ থেকে যখন পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এই প্রসঙ্গে, তিনি বলেন, ''আমার সঙ্গে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক যোগাযোগ রয়েছে। এক নম্বর হল, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবা, দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়, আমি ওঁর কাছে পড়েছি। উনি আমাকে প্রেসিডেন্সিতে পড়িয়েছেন। দ্বিতীয়ত এটা ঠিক যে উনিও সাউথ পয়েন্ট, প্রেসিডেন্সি এবং জেএনইউ-তে পড়েছেন এবং আমিও তাই। অর্থাৎ ট্রিপল অ্যালামনি বলা যেতে পারে। নিডলেস টু সে, আমি প্রচণ্ড গর্বিত। দারুণ একটা অনুভূতি। একজন সাউথ পয়েন্টার হিসেবে, একজন প্রেসিডেন্সিয়ান, একজন জেএনইউয়াইট এবং অবশ্যই একজন বাঙালি হিসেবে।''