সকাল হতেই যেন মনখারাপের সুর। টলিপাড়ার মিঠু আর নেই! কেউ যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না। নব্বইএর দশকের সেই চার্মিং, হ্যান্ডসম মানুষটা এত তাড়াতাড়ি চলে যেতে পারে? কীভাবে? যেমন সুন্দর অভিনয় তেমন তার অমায়িক কথাবার্তা, দর্শকদের মনোরঞ্জন করতে খামতি রাখেননি একেবারেই। সিনেপর্দা থেকে টেলিভিশন – তার জনপ্রিয়তা ছিল সাংঘাতিক, খুঁটিয়ে দেখলে এখন তার একটাই পরিচয় ছিল – তিনি গুনগুনের ( খড়কুটো ) বাবা।
কথায় বলে জীবন ভীষণ অনিশ্চিত, অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল যেন! অভিনয় যেমন ভালোবাসতেন, জীবনকে উপভোগ করতে একেবারেই পিছপা হতেন না অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। বাড়ির পুজো হোক কিংবা সহ অভিনেতাদের সঙ্গে পার্টি, উচ্ছাস – দেদার মজায় ভরিয়ে রাখতেন সকলকে। এই তো সেদিনের কথা। ইন্ডাস্ট্রির দলের সঙ্গেই পিকনিকে মজেছিলেন অভিনেতা। নাচ করলেন, গীত সঙ্গীতের সেই বিখ্যাত গান গাইলেন – কত মানুষ তার প্রসংশা করলেন। শুটিং এর মাঝেও উৎফুল্লতা ছিল দেখার মত। যারা একসঙ্গে কাজ করেছেন তাদের কাছে যেন ভাষা নেই আজ, ভাল মুহূর্ত মনে রাখতেই সকলে বেশি আগ্রহী, সংলাপ বলতে গিয়েও চূড়ান্ত মজা করতেন – ভীষণ আনন্দ করতে ভালবাসতেন কি না!
শুধু শুটিং ফ্লোরেই নয়। পরিবারের প্রতি টান এবং ভালবাসা ছিল অমোঘ। সবরকম পুজোয় সমান ভাবে আনন্দ করতেন, কালীপুজো থেকে সরস্বতী পুজো, বাজি ফাটানো, নিজের হাতে সিন্নি মাখা – বাদ পরতো না কিছুই। দুর্গাপুজোর আরতি থেকে বিসর্জন, নিজ দায়িত্বে সামলাতেন সব কিছু। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভীষণ সক্রিয় ছিলেন, অনুরাগীদের উদ্দেশ্যে ছবি ভিডিও পোস্ট করতেন সমানতালে। নববর্ষের শুভেচ্ছা হোক অথবা শুটিং এর দৃশ্য, মাঝেমধ্যে অনুরাগীদের সঙ্গেও কথোপকথন চালাতেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাদের মজাদার মন্তব্য ভীষণ উপভোগ করতেন।
দিন কয়েক আগে দোল উপলক্ষেও চুটিয়ে মজা করেছিলেন, রং মেখে উৎসবে সামিল হয়েছিলেন তিনি। মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে বেশ পছন্দ করতেন, তারা পোশাক ঠিক করে দেওয়া থেকে চুল বেঁধে দেওয়া, কাজের ফাঁকেই বাবার দায়িত্ব ভুলতেন না একেবারেই। দর্শকদের অনুরোধে গান গাইতেন, কাছের মানুষদের সঙ্গে সময় কাটাতে বড্ড পছন্দ করতেন। তবে সবকিছুই আজ ফ্যাকাশে, সেই ফুর্তি সেই আনন্দ আজ যেন থমকে গেছে। টলিপাড়ার অভিষেক আর নেই, রয়ে গেছে শুধুই একরাশ স্মৃতি।