বছর দুয়েক বাদে ফের বড়পর্দায় সোনাদার প্রত্যাবর্তন। পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফ্রেমে এবার রহস্য-রোমাঞ্চ আরও বেশি। রিলিজের প্রাক্কালেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার আড্ডায় আবির চট্টোপাধ্যায় (Abir Chatterjee)। লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
পুজো রিলিজ হলে আনন্দের সঙ্গে টেনশনও থাকে। আপনার পাল্লা কোনদিকে ভারী?
শুধু পুজো রিলিজ বলে নয়, যে কোনও রিলিজেই আমার টেনশন থাকে। কারণ, গুপ্তধন ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে দর্শকদের উৎসাহ আরও বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, গত ২ বছর করোনার জন্য মানুষ পুজো উদযাপন করতে পারেননি। সকলেই ভয়ে ভয়ে কাটিয়েছে। তবে এবার সকলে পুজো মুডে রয়েছে। আর দুর্গাপুজো মানেই সেলিব্রেশন। বাঙালিদের খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা আর সিনেমা। সেক্ষেত্রে 'কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন' পুরো পরিবার নিয়ে দেখার মত ছবি।
'কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন' বড়পর্দায় দেখে উপভোগ করার মতোই সিনেমা। রহস্য-রোমাঞ্চ, বাঙালিয়ানা, খাওয়া-দাওয়া, একটু মজা, তার সঙ্গে গুপ্তধন খোঁজার রোমহর্ষক গল্প, যেটা দর্শক পুরো পরিবার নিয়ে উপভোগ করতে পারবেন। পুজো মানেই তো সকলে একসঙ্গে হওয়া। আর তাই এবার দর্শকদের থেকে আমাদের আশা আরেকটু বেশি।
গুপ্তধন সিরিজ নিয়ে দর্শকদের উন্মাদনা বরাবরই, আগের দু'বারের থেকে সোনাদার প্রত্যাবর্তন কি আরও ক্ষুরধার?
এবারের গল্পে রহস্য-রোমাঞ্চের পরিসর আরও বড়। গল্পের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ইতিহাস। 'গুপ্তধনের সন্ধানে' কিংবা 'দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন'-এ বাংলার ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে রহস্য-রোমাঞ্চের যে জাল বুনেছেন ধ্রুব (বন্দ্যোপাধ্যায়), এবার ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’-এর প্লটে টুইস্ট আরও বেশি। খুব মজাচ্ছলেই ইতিহাসের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। যা দেখতে বসে দর্শকদের অন্তত একঘেয়ে লাগবে না। আর বেশি রহস্য-রোমাঞ্চ মানে সোনাদাকেও আরও ক্ষুরধার হতে হয়েছে।
বছর তিনেক বাদে আবার আবির, অর্জুন, ইশা টিম..
হ্যাঁ, অর্জুন-ইশা, ধ্রব আর আমি .. আমাদের টিমে প্রত্যেকেরই বোঝাপড়াটা খুব ভাল। সেটা অনস্ক্রিন হোক কিংবা অফস্ক্রিন। আমার মনে হয়, ক্যামেরার বাইরে যদি আমাদের সকলের সম্পর্কটা এত মজার না হত, তাহলে সেটা ক্যামেরার সামনে ফুটিয়ে তোলাটা কঠিন। আমরা এমনিতেও যেমন মজা-ঠাট্টা, হইহই করি, শুটের সময়ও ঠিক তেমনই হয়েছে। তাই অর্জুন, ইশার সঙ্গে আমার রসায়ণটা বড়পর্দায় খুব ভালভাবেই ফুটে ওঠে।
তবে আমাদের সিলেবাসের বাইরে যেটা ছিল, সেটা হচ্ছে মারাত্মক গরম। আগের ২টো গুপ্তধন সিরিজ শুট হয়েছিল ঠান্ডায়। তাই আমাদের কোনও ধারণাই ছিল না। তবে ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’-এর শুটিং হয়েছে মার্চের শেষের দিক থেকে গোটা এপ্রিল মাসজুড়ে। প্রথমে পুরুলিয়ায় গেলাম। মারাত্মক রুক্ষ্ম-সূক্ষ্ম আবহাওয়া। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গরম। প্রায় লু বইছে। তারপর গেলাম মালদা-মুর্শিদাবাদ। সেখানকার গরমটা আবার একটু আলাদা। ওখানে গরমের পাশাপাশি বাতাসে আর্দ্রতা অনেক বেশি। কলকাতাতেও একই অবস্থা। তার মধ্যে যেহেতু রহস্য-রোমাঞ্চ গল্প, চেস সিকোয়েন্স, দৌঁড়ঝাপও ছিল। তাই গরমটা আমাদের খুব কষ্ট দিয়েছে। তবে আমাদের তিনজনের তরফ থেকে বলব, এত খাটুনি সার্থক হবে, যদি দর্শকদের ছবিটা ভাল লাগে। তিন বছর পরে একসঙ্গে কাজ করা আমাদের কাছে রি-ইউনিয়নের মতোই।
অন্যান্য পুজো রিলিজের সঙ্গে সোনাদা কতটা পাল্লা দিতে পারবে?
পুজোতে 'কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন'-এর পাশপাশি আরও যে কয়েকটা সিনেমা রিলিজ করছে, তাদের সঙ্গে যে একটা প্রতিযোগিতা রয়েছে, সেটা অস্বীকার করার কোনও জায়গাই নেই। তাই সবমিলিয়ে টেনশন তো থাকেই। ৩০ তারিখ রিলিজের আগে অবধি ছবিটা আমাদের, কিন্তু তারপর থেকে 'কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন' দর্শকদের।
পুজোর সময়ে সিনেমার প্রচার থাকে না ঠিকই কিন্তু তা ছাড়াও আমার ব্যক্তিগত অনেক কাজ থাকে। পুজো উদ্বোধন, বিজ্ঞাপন, পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া। আসলে, গত ২ বছর তো আমাদের চারপাশের সমস্ত ইন্ডাস্ট্রিই পুরো থমকে গিয়েছিল। অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। তাই আমার কাছে এই পুজোর ব্যস্ততা বা কাজের মধ্যে থাকাটা আশীর্বাদের মতোই। কারণ, আমি চাই মানুষ আরও বেশি করে কাজ করুক। তাই 'কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন' যদি এই শারদোৎসবে মানুষের আনন্দ আরও খানিকটা বাড়িয়ে দেয়, সেটাই আমাদের কাছে পুজোর উপহার হবে। কারণ, আগের ২টো ফ্র্যাঞ্চাইজির ক্ষেত্রে দেখেছি, আট থেকে আশি সকলেই খুব উপভোগ করেছেন গুপ্তধন রহস্য।
পরিচালক ধ্রুব খুবই খাদ্যরসিক, তো এই ছবির শুটে খাওয়া-দাওয়া কি জমিয়ে হয়েছে?
আমরা যেরকম গরমে শুট করেছি কিংবা শুটের সময়ে যেসমস্ত চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে, তারপর আর আলাদা করে শুটের বাইরে আড্ডা কিংবা জমিয়ে খাওয়া-দাওয়ার সময় পাইনি। তাছাড়া, প্রচণ্ড গরমে স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়েছে আমাদের প্রত্যেককে। তখন শুধু এনার্জি লেভেল ঠিক রাখা আর বেঁচে থাকার জন্য খেতে হয়েছে। তবে হ্যাঁ, 'কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন' যদি হিট হয়ে যায়, তখন জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে পুষিয়ে নেব।