Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

Exclusive: মধ্যবিত্তের কাছে টাকাপয়সার চেয়েও সম্মানটা সবথেকে দামি: আবির চট্টোপাধ্যায়

বাজারে চড়া দামের উপদ্রবে পাতে মাছ-মাটনের সঙ্গে স্ট্রাগল, দাম্পত্য সম্পর্কের রসায়ন থেকে প্রযোজক জিৎ... আর কী নিয়ে কথা বললেন আবির? পড়ুন বিশদে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Abir

মধ্যবিত্ত বাঙালির স্বপ্নপূরণ, বাজারে চড়া দামের উপদ্রবে পাতে মাছ-মাটনের সঙ্গে স্ট্রাগল, দাম্পত্য সম্পর্কের রসায়ন কিংবা নিউ নর্মালে শুটিং থেকে রুক্মিণী মৈত্রর সঙ্গে 'সুইজারল্যান্ড'-এর অভিজ্ঞতা, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে শেয়ার করলেন আবির চট্টোপাধ্যায় (Abir Chatterjee)। লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ

Advertisment

সুইজারল্যান্ড, যখন ছবির নাম তখন এই লকডাউনে নামটা শুনলেই মনটা ছুটে যায় একেবারে.. তা নিউ নর্ম্যালে কোথাও ঘুরতে গেলেন?

- না এখনও কোথাও যাওয়া হয়নি (হেসে)! তবে যাঁরা যাঁরা আমার মতোই ঘুরতে যেতে পারছেন না অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তাঁরা 'সুইজারল্যান্ড' সিনেমাটা দেখে সেই মজাটা পেতে পারেন। আর সেটাই সম্ভবত ছবির অন্যতম ইউএসপি। কারণ গত কয়েক মাস ধরেই আমরা তো বিভিন্ন দুশ্চিন্তা, প্যানিক... ইত্যাদির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, সেক্ষেত্রে এরকম একটা ছবি যেটা খুব মজার, হাসির ছলে আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের কথা বলে, সহজেই দর্শকদের কানেক্ট করার মতো, সেরকম একটা সিনেমা দেখলে হয়তো মানুষের মনটা কিছুক্ষণের জন্য ভাল থাকবে। সেই কারণেই আমি 'সুইজারল্যান্ড' (Switzerland) নিয়ে ভীষণ আশাবাদী।

রুক্মিণীর সঙ্গে প্রথমবার জুটি বাঁধলেন, কেমন অভিজ্ঞতা? আবীর-রুক্মিণী জুটিকে দর্শক কতটা উপভোগ করতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে?

- রুক্মিণী (Rukmini Moitra) খুবই খেটেছে এই ছবিটার জন্য। ভীষণ ডেডিকেটেড কাজের প্রতি। এই সিনেমার জন্য সোহিনী সেনগুপ্তের কাছে একটা ওয়ার্কশপও করেছে। রুমির চরিত্র করতে গিয়ে বাড়ির কাজও শিখতে হয়েছে ওঁকে। যেমন সেটা ফুলকো লুচি বানানো হতে পারে কিংবা রুটি বেলাও হতে পারে। ওর অভিনয়ের প্রতি যে নিষ্ঠা রয়েছে, তা ওঁর সঙ্গে কাজ করেই বোঝা যায়।

'সুইজারল্যান্ড'-এর স্ক্রিপ্টটা শুনে হয়তো প্রথমেই রুক্মিণীর কথা মাথায় আসবে না। কারণ, এর আগে গত ৩ বছরে ও যে ধরণের চরিত্রে অভিনয় করেছে, তার সঙ্গে রুমির চরিত্রের বেশ তফাৎ রয়েছে। কারণ, এরকম একটা কমন মিথ রয়েছে যে, "এই বয়সেই এরকম দুটো বাচ্চার মায়ের চরিত্রে কীভাবে অভিনয় করবে!" কিন্তু ও খুব দায়িত্ব নিয়েই কাজটা করেছে। ওঁর একজন সিনিয়র অভিনেতা হিসেবে আমি মুগ্ধ।

এখনও অবধি ছবির গান-ট্রেলার যা মুক্তি পেয়েছে, দর্শকরা বেশ প্রশংসা করছে। কারণ কখনও একটা ফ্রেশ জুটি সিনেমাতেও কোথাও একটা ফ্রেশনেস এনে দেয় বলে আমার বিশ্বাস। আমরা সেটা বহুবার দেখেওছি। এই কেমিস্ট্রিটা দেখে দর্শকরা বুঝতেই পারবেন না যে, আমরা প্রথমবার কাজ করছি একসঙ্গে।

বাচ্চাদের নিয়ে শুটিং করতে অসুবিধে হয়নি?

- যে দুটো বাচ্চা রয়েছে সিনেমায়, ওরা আমাদের এনার্জি পিল হিসেবে কাজ করেছে। ২১ দিনের শুটিংয়ে শেষ হয়েছে সিনেমাটা। সারাদিনে ১৪ ঘণ্টা শুটও হত। এখানে ওরা না থাকলে আমরা সম্ভবত এত মজা করে কখনও শুটিংটা করতে পারতাম না। টলিউডে যেভাবে কাজ হয়, সেটা বোধহয় আর কোনও ইন্ডাস্ট্রিতে হয় না। বাচ্চাগুলোকে নিয়ে আমরা টেনশনে থাকতাম রীতিমতো! কারণ জানুয়ারি মাসে শুটিং হয়েছে। ঠান্ডায় ওদের শরীর না খারাপ হয়ে যায়, সেই চিন্তা থাকত। রুক্মিণী ওদের হালকা একটু বকাবকি করত। তাই ওরা ভয়ও পেত রুক্মিণীকে। আমি ওকে বলেওছিলাম যে, আমার কথা তো শুনছে না, তুমি এটা একটু মেনটেন করো। আমি না হয় প্যাম্পার করছি, তুমি বকুনিটা দাও। (হেসে)
তাছাড়া, ওদের অনেক দাবীও ছিল যে, এটা কেন হবে না, ওটা কেন হবে না! কিন্তু ইট ওয়াজ ভেরি ফান। আমার মনে হয় ওই মজাটা না থাকলে শুটিং করাটা টাফ হত। সৌভিক কিংবা জিতের হাউজ খুবই কমফরটেবল করে দিয়েছে আমাদের।

switzerland

বাঙালিরা এমনিতেই ভ্রমণপিপাসু। আর সুইজারল্যান্ড মানেই তো মধ্যবিত্তর কাছে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নের মতো.. হানিমুনে যাওয়ার কথা বললেই সুইজারল্যান্ড-এর নাম আসে মনে। তো এই ছবি কি মধ্যবিত্ত দর্শকের বিদেশ ভ্রমণের সাধ আবার জাগিয়ে তুলবে?

- একদমই। সেরকমই একটা গল্প বলা হয়েছে এই ছবিতে। এই যে মধ্যবিত্তরা সবসময়ে একটা লড়াই করে চলে, তাঁদের ইচ্ছে আর ক্ষমতার মাঝে যে লাইন টানার চেষ্টা। ইচ্ছে তো অনেকেরই অনেকরকম হয়। কারও বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন থাকে, কারও বা ভাড়া বাড়িতে থেকে বড় ফ্ল্যাট কেনার সাধ থাকে, কেউ বা আবার মনে করেন পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত না করে নিজের গাড়িতে করে ঘুরব... এরকমই। এবার মানুষ নিজের ক্ষমতার সঙ্গে তার তুল্যমূল্য বিচার করে, যে কোন দরকারটা প্রায়োরিটির শীর্ষে। 'সুইজারল্যান্ড' ঠিক সেরকমই একটা গল্প বলে। শিবু আর রুমির একটা সুখের সংসার রয়েছে। তাদের দুই বাচ্চা স্কুলে পড়ে। রুমি স্কুলে পড়ায়। শিবুও চাকরি করে। এরকমটা নয় যে তাঁরা প্রচণ্ড আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। কিন্তু যখন এই মধ্যবিত্ত সংসারে বিদেশে যাওয়ার সাধ জাগে, সেখানে 'সুইজারল্যান্ড'টা কিন্তু একটা রূপক। একটা অ্যালিগরি। সুইজারল্যান্ডের মাধ্যমে আমরা এটাই বোঝাতে চেয়েছি যে সাধারণ মানুষ একটা স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে, একটা স্বপ্ন পূরণ হলে আবার একটা স্বপ্নের দিকে এগোতে থাকে। এই স্বপ্নের পিছনে তাঁরা কীভাবে ছুটবে এবং এই স্বপ্নপূরণের জন্য তাঁরা কি কোথাও জীবনের মূল্যবোধ, বিবেক বা নিজের সততাকে কোথাও বিসর্জন দেবে? না এগুলো মাথায় রেখেই স্ট্রাগল করে যাবে? ছবির গল্প সেটা নিয়েই।

ট্রেলারেও সেরকমই দেখানো হয়েছে, বাঙালির পাতে মেপে মেপে মাছ-মাংস পড়া মানে বিশাল ব্যাপার তো!

- মধ্যবিত্ত বাঙালিরা রোজকার জীবনেই এই ছোট ছোট অ্যাডজাস্টমেন্টগুলো করে, যাতে তাঁরা একটা বড় স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। এটা আমাদের সকলের জীবনের গল্প। শিবু রুমিকে বলে পুজোর শপিং করো, কিন্তু বাজেটটা পঞ্চাশ শতাংশ কমাও। প্রতি মাসে বাইরে খেতে না গিয়ে ২ মাস অন্তর চলো। মাটন খাব না, তবে চিকেনটা খাব। চিংড়ি থাক, বরং পোনা মাছ খাই... আসলে সৌভিকের (পরিচালক) গল্পটা এই কারণেই আমার এত ভাল লেগেছিল। কোথাও গিয়ে এরকম দেখানো হয়নি যে তারা আর্থিকভাবে দুরাবস্থার মধ্যে কাটাচ্ছে।

কিন্তু আমরা প্রতিদিন দেখি বাজারে প্রতিটা জিনিসের দাম চড়া হচ্ছে। বিভিন্ন খাতে যে খরচাগুলো হয়, তাতে আমাদের মনে হয় যে আরেকটু বেশি রোজগার হলে হয়তো ভাল হত। তাহলে সঞ্চয়টা আরেকটু বেশি হত। মন খুলে আনন্দ করে খরচাও করতে পারতাম। এরকম নয় যে কাল কী খাব, সেটা জানা নেই। এই যে একটা অদ্ভূত ব্যালেন্স সৌভিক রাখতে পেরেছে গল্প বলার ক্ষেত্রে। সেটা প্রশংসনীয়। 'সুইজারল্যান্ড' বেশ কিছু মূল্যবোধের কথা বলে। মানবিকতার কথা বলে। এবং বলে যে, মধ্যবিত্তের কাছে সম্মানটা সবথেকে বড় দামি জিনিস। তাদের কাছে টাকাপয়সার থেকেও দামি হল এই সম্মান আর মূল্যবোধ। সেটাকে কীভাবে বজায় রাখবে? সেটা সৌভিক খুব সহজ-সরলভাবে, মজাচ্ছলে বলেছে। আর এটাই আমার সবথেকে বেশি ভাল লেগেছে।

একেবারেই আম-জনতার গল্প...
- একদমই তাই। স্বচ্ছল এক দম্পতিকে তাঁদের স্বপ্নপূরণ করতে গিয়েই কোথাও বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা, চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। একেবারে মধ্যবিত্ত এক সাধারণ দম্পতির গল্প। যাঁরা গাড়ি থাকলেও রোজ হয়তো গাড়ি চড়ে না কারণ তেলের দাম বেড়ে গিয়েছে বলে। অনেকসময়েই যখন কোনও ছবিতে মানবিকতা কিংবা মূল্যবোধের মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করা হয় দর্শকদের কাছে, গল্পটাকে অনেক সময়ে গম্ভীরভাবে বলা হয়। তার ফলে, এন্টারটেইনমেন্ট ভ্যালুটা কমে যায়। মানুষের মনে হতে পারে, ও বাবা আবার জ্ঞান!

খুব সাধারণ হয়েও অসাধারণ একটা মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তাই তো?
- সেটাই। আসলে এই গল্পগুলোই মানুষ এখন পছন্দ করছে। এখনকার দর্শকরা অনেকটা স্মার্ট। তাঁরা নিজেদের বাস্তবের গল্পগুলোকেই সিনেপর্দায় দেখতে চায়।

সুইজারল্যান্ড নিশ্চয় ঘুরতে গিয়েছেন?
- (হেসে) না। ইউরোপ গিয়েছি, কিন্তু সুইজারল্যান্ড এখনও যাওয়া হয়নি।

স্ত্রীর স্বপ্নপূরণের জন্য একজন স্বামী কতদূর যেতে পারে, এই ছবিতে সেরকমই এক গল্প দেখানো হয়েছে। আপনার জীবনে এরকম কোনও অভিজ্ঞতা রয়েছে?

- দেখো, আমি মনে করি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যখন খুব গাঢ় হয়, তখন স্বপ্নটা দুজনের আর আলাদা হয় না। তখন স্বপ্নটা লোকে একসঙ্গে দেখে। কোথাও গিয়ে স্ত্রীয়ের স্বপ্নটাও নিজের স্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায়। স্বামীর স্ট্রাগলটাও স্ত্রীয়ের স্ট্রাগল হয়ে দাঁড়ায়। আমার মনে হয়, যে কোনও দাম্পত্য সম্পর্কেই এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে স্বপ্নগুলো যেন কারও একার না হয়। তখন কিন্তু মনে হবে যে, আমি 'স্যাকরিফায়েস' করছি! আমার না হয়ে স্বপ্নটা 'আমাদের' হওয়া উচিত। সেখানেই যে কোনও সম্পর্ক কিংবা পরিবারের সাফল্য।

প্রযোজক হিসেবে জিৎ সম্পর্কে কী বলবেন?
- প্রযোজক-অভিনেতা হিসেবে আমার সঙ্গে জিতের(Jeet) খুব ভাল সম্পর্ক। কারণ ওঁর প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারে তো পরপর ২টো ছবি করে ফেললাম। অভিনেতা হিসেবে যখন কেউ দীর্ঘ সময় ধরে পপুলার হয়, তখন প্রোডিউসার হিসেবে কাজ করতে এলে একটা অতিরিক্ত চাপ থাকে তাঁর উপর। প্রথমত, যেহেতু এতদিন ধরে ও ইন্ডাস্ট্রিতে আছে, ও জানে যে একটা ছবিকে কীভাবে ট্রিট করা উচিত। কিংবা কীভাবে গোটা টিমকে কমফোর্ট জোন দেওয়া উচিত। এবং দ্বিতীয়ত, এই প্রথম ওঁর প্রোডাকশন হাউজ থেকে কোনও ছবি রিলিজ করছে, যেখানে ও নেই। যার জন্য়ে প্রচণ্ডরকম আত্মবিশ্বাসী হওয়া প্রয়োজন। আরেকটা কথাও বলব, প্যান্ডেমিকের মধ্যে ওরা কিন্তু খুব একটা তাড়াহুড়ো করে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝোঁকেনি। আবার দেরিও করেনি। নিউনর্মালে প্রেক্ষাগৃহ খুলেছে। টাচ উড, পুজোর পর করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ভয় যেরকমভাবে জাঁকিয়ে বসেছিল, সেরকম কিছু হয়নি। তাছাড়া পুজোর মরসুমে সিনেমা রিলিজ নিয়ে একটা আশা থাকেই, জিৎ কিন্তু সেই সময়েই সিনেমাটা রিলিজ করছে। তাছাড়া রুক্মিণী ও আমার মতো একটা নতুন জুটিকে প্রমোট করছে। জিৎ প্রযোজক হিসেবে যে জায়গাটা দেয়, সেটা একজন অভিনেতাকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

মজার বিষয় হচ্ছে, এর আগে আমার লাস্ট রিলিজও জিতের হাউস থেকেই- 'অসুর'। আর লকডাউনের পর যে ছবি মুক্তি পাচ্ছে সেটাও জিতের হাউজের সিনেমা দিয়েই।

নিউ নর্ম্যালে 'ডিকশনারি'র শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
- হ্যাঁ একদিনের শুটিং ছিল। শেষ করলাম জাস্ট। চন্দ্রকোণায় একটা ওপেন স্পেসে শুটিং হয়েছে। একে-অপরের থেকে দূরত্ব মেনেই শুটিং হল। দেখলাম, এতদিন পর বাইরে বেরিয়ে শুটিং করতে গিয়ে লোকজন খুব রিলিভডভাবে কাজ করছে। মজার বিষয়, লকডাউনের আগে শেষবার 'ডিকশনারি'র শুটিং-ই করেছিলাম, আবার নিউ নর্ম্যালে সিনেমার সেটেও ফিরলাম এই ছবি দিয়েই। যদিও নন-ফিকশন সারেগামাপা'র শুট আগেই শুরু করেছি।

Abir Chatterjee
Advertisment