The Accidental Prime Minister movie cast: অনুপম খের, অক্ষয় খান্না, বিপিন শর্মা, সুজান বেরনার্ট, মুনিশ ভরদ্বাজ, অর্জুন মাথুর, অহনা কুমরা
The Accidental Prime Minister movie director: বিজয় রত্নাকর গুট্টে
The Accidental Prime Minister movie rating: ০/৫
হলে ঢোকার সময় আপনি জেনেই ঢুকছেন যে 'দি অ্যাকসিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার' ওই নামেরই একটি বইয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যে বইয়ের লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি স্বাভাবিকভাবেই ছবিটিকে প্রভাবিত করতে বাধ্য। আপনি ধরেই নিচ্ছেন যে ছবিটি হবে লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার খণ্ডচিত্র, ইউপিএ সরকারের শাসনকাল বিষয়ক তথ্যচিত্র নয়, যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং, এবং বইয়ের লেখক সঞ্জয় বারু ছিলেন তাঁর মিডিয়া উপদেষ্টা।
কিন্তু ওই ধরে নেওয়াই সার। ভেবেছেন একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ফিচার ছবি দেখবেন? ভুলে যান।
'দি অ্যাকসিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার' একটি আপাদমস্তক প্রচারের স্বার্থে তৈরি ছবি, যার প্রধান উদ্দেশ্যই হলো এটি প্রতিপন্ন করা, যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং একজন দুর্বল, মেরুদণ্ডহীন, গান্ধী পরিবারের দ্বারা পরিচালিত পুতুল ছিলেন। ছবিতে 'দ্য ফ্যামিলি' বলেই সম্বোধন করা হয় ওই পরিবারকে প্রতিবার, অনাবশ্যক 'বিপ' সহকারে, যদিও ঠোঁট নাড়া থেকে কথাটা বুঝতে আদৌ কোনো অসুবিধে হয় না।
আরো পড়ুন: ওপেনিংয়ে ৩ কোটি টাকা পেতে পারে ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’
প্রতি পদে বোঝানো হয়, যে সোনিয়া, রাহুল, প্রিয়াঙ্কা, এবং তাঁদের আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা ক্ষমতালোভী চাটুকারদের দলই সিংহাসনের আড়ালে আসল ক্ষমতার অধিকারী। এও অত্যন্ত যত্ন সহকারে বোঝানো হয় যে মনমোহন ব্যক্তিগতভাবে আদ্যন্ত সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত হওয়া সত্ত্বেও 'দ্য ফ্যামিলির' চাপে পড়ে কার্যত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন, দলের সতীর্থদের কুকর্ম দেখেও দেখতেন না।
যাঁদের রাজনীতির কোনো অভিজ্ঞতাই নেই, তাঁরা পর্যন্ত এই কাঠামোটা জানেন, কাজেই বলাই বাহুল্য, যে যাঁরা কিছুমাত্র খোঁজখবর রাখেন, তাঁদের জন্য এই ছবিতে অবাক হওয়ার মতো কিস্যু নেই।
কিন্তু যা দেখে সত্যিই অবাক লাগে, তা হলো এই ছবিটির চূড়ান্ত দায়সারা, খেলো, ন্যূনতম শিল্পবোধ বর্জিত অভিমুখ। যেন সচেতনভাবে শৈল্পিক দিকটা উপেক্ষা করেই তৈরি করা হয়েছে ছবিটি। প্রায় সবকটি চরিত্রই ক্যারিকেচারের সামিল, মনমোহন (খের) ও বারু (খান্না) সহ। খের বিশেষ করে গোটা ছবিতেই অদ্ভুতভাবে হাঁটেন, মিনমিনে, কাঁপা কাঁপা গলায় কথা বলেন, শরীরী ভাষায় ভয় ও প্রত্যয়ের অভাব স্পষ্ট। একবারও তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে না তিনি এমন একজনের ভূমিকায় অভিনয় করছেন, যিনি একবার নয়, দুবারের পূর্ণমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী, যাঁর শাসনকালে আর যাই থাক, প্রত্যয়ের অভাব ছিল না।
সিনেমা থিয়েটারে 'ফোর্থ ওয়াল' কদাচিৎ ভাঙা হয়, যখন কোনো চরিত্র সরাসরি দর্শকদের সঙ্গে কথা বলেন, বিশেষ কোনো বক্তব্য রাখতে। কিন্তু এই ছবিতে খান্নার হাতে বারু হয়ে উঠেছেন এক আত্মতুষ্ট, মিচকে হাসি হাসা মূর্তিমান, যিনি অহরহ ঘুরে দাঁড়িয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে চলেছেন, 'রিল' ও 'রিয়েলের' ব্যবধান মেটাতে। ভাবটা এমন, 'সত্যি' ঘটনাটা তিনিই বলছেন। খান্নার পরনে সবসময়ই চূড়ান্ত কেতাদুরস্ত স্যুট, এবং দিল্লির ক্ষমতাশালী বৃত্তে তাঁর ঈর্ষণীয় রকমের অনায়াস আনাগোনা যে কোনো মন্ত্রীর হিংসার কারণ হতে পারে। বস্তুত, এই ছবিটির এতটাই জুড়ে রয়েছেন বারু, যে ছবিটির নাম খুব সহজেই 'সদা উপস্থিত মিডিয়া উপদেষ্টা' হতে পারত।
ছবিতে স্ক্রিপ্টের বিশেষ কোনো বালাই নেই, স্রেফ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অবমাননাকর কিছু টুকরো টুকরো দৃশ্যের সমাহার, যার ফাঁকে ফাঁকে গুঁজে দেওয়া হয়েছে কিছু অনিচ্ছাকৃত হাস্যকর মুহূর্ত, যেমন ধরুন প্রধানমন্ত্রী হাসি হাসি মুখ করে বসে শুনছেন সেই বিখ্যাত ইংরেজি গান 'কে সেরা সেরা', পাশে বসে তাঁর স্ত্রী (দিব্যা শেঠ)। সেট ইত্যাদির কথা না বলাই ভালো: সত্যি সত্যিই সাউথ ব্লকের সব ঘরের দেওয়াল ওরকম ভয়ানক হলুদ আর বেগুনি রঙের বুঝি? অভিনেতা অভিনেত্রীদের পাশাপাশি হঠাৎ হঠাৎ আমাদের সে সময়ের আসল কিছু নিউজ ফুটেজ দেখানো হয়। কেন? যাতে আমরা ভেবে না বসি যে অভিনেতা অভিনেত্রীরাই আসল?
বারু হয়তো ঠিকই বলেছেন। মনমোহন সত্যি 'অ্যাকসিডেন্টাল' প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন, এবং ইতিহাস এ ব্যাপারে কী বলবে, তা এখনও অজানা। তবে ছবিটির মুক্তির সময় কিন্তু আদৌ অ্যাকসিডেন্ট নয়।মনে রাখবেন, নির্বাচন আসন্ন। আর হ্যাঁ, প্রচারও রুচিসম্মত হতে বাধা নেই কিন্তু।