শেষ দফার ভোটে তিনি প্রার্থী নন, ভোটার। প্রার্থী হিসাবে তাঁর কেন্দ্রের ভোট মিটে যাওয়ায় তিনি খানিক হালকা মেজাজে।ইদানীং, তাঁর স্টাইল স্টেটমেন্টে যোগ হয়েছে গোঁফ। তিনি টলিউডের সুপারস্টার দেব। কলকাতার এক রেস্তোরাঁয় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে ভোট পরবর্তী আড্ডায় মাতলেন ঘাটালের বিদায়ী সাংসদ।
গতবার ভোট ময়দানে আপনি নবাগত ছিলেন। কিন্তু এবার তো বেশ অভিজ্ঞ। সব মিলিয়ে কেমন সামলালেন?
এখনও নতুন আছি (হাসি)। আসলে সামলানোর কিছু নেই, সৎ থাকাটাই জরুরি। কাউকে ছোট না করে মানুষের কাছে গিয়ে কেবলমাত্র উন্নয়নের কথা বলতে হবে। জনগণ সেটাই শুনতে চান। চারপাশে এত ঝামেলা আর ভাল লাগছে না। আমি সেসব থেকে বিরত থেকেছি। প্রত্যেকের দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়া উচিত। তাই না!
প্রথম সাংসদ হয়ে প্রশাসনিক কাজের জন্য এস পি ভারতী ঘোষকে পেয়েছিলেন। বর্তমানে তিনিই আপনার প্রতিদ্বন্দ্বি। দুই ভারতীর মধ্যে কতটা ফারাক?
আমি এটা বলতে পারব না। কিন্তু মনে হয় এখন চাপটা অনেক বেশি। জেতার চাপ রয়েছে। আমি রাজনীতিতে থাকি বা না থাকি, যে পেশায় রয়েছি সেখানে ভীষণ ভাল আছি। তবে বুঝতে পারছি উনি চাকরি ছেড়েছেন, সিআইডি রয়েছে, তাই ওঁকে জিততেই হবে। ওঁর জন্য এটা ডু অর ডাই পরিস্থিতি। উনি মনে করেছেন, এভাবে চিৎকার করে ভোট পাওয়া যায়।
কখনও টাকা নিয়ে ধরা পড়ছেন, আবার কোথাও মন্দিরে বসে পড়ছেন। একটা সময়ে তো মনে হয়েছিল বলি, এত কষ্ট করবেন না দিদি, আমি আমার ভোটটাও আপনাকে দিয়ে দিচ্ছি (যদি আমার ভোট ঘাটালে হতো)।
ভোটের দিন তো উনিই মিডিয়ার নজরে ছিলেন?
উইশ হার অল দ্য লাক!
ভোটের উত্তাপ আর তীব্র গরম, এই দুইয়ে মিলিয়েও আপনার আর মিমির সম্পর্কের বরফ গলাতে পারল না। মিমির হয়ে প্রচার করলেন না কেন?
না! মিমির প্রচারে যাওয়ার প্রয়োজনই ছিল না। ও এমনিতেও জিতবে। যে জিতে যাবে জানি (সেখানে গিয়ে আর কী হবে)... তাই কোথাও যদি আমার উপস্থিতি ভোট বাড়াতে পারে, তবে আমার সেখানেই যাওয়া উচিত।
আপনাকে তো 'নির্বাচনের ভদ্রলোক' আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
আমারই দলের নেতা একবার বলেছিলেন, "তুমি এটা বলতে পারলে?" আমি বলেছিলাম, "আমরা আমাদের সন্তানদের কোনওদিন বলতে পারব না, এই বক্তৃতাটা শোন, তুই কিছু শিখতে পারবি।" আমরা তো শুধু দোষারোপই করে চলেছি। প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানেন বিগত পাঁচ বছরে উনি কিছুই করতে পারেন নি। নাহলে ওঁকে এত গলাবাজি করতে হতো না।
সবার মুখে একসঙ্গে হাসি ফোটাতে পারব না, এটা আমাদের বুঝতে হবে। সব কাজ যদি হয়ে যেত তাহলে তো স্বাধীনতার সত্তর বছর পরেও কৃষকদের দুরবস্থার কথা বলতে হয়। নূন্যতম প্রয়োজনের কথা তখনও বলা হত এখনও বলা হচ্ছে। আমার চাওয়া বলতে, এগুলোই যদি দোষারোপ না করে বলা যায়। আমি চাই পুরো দেশটাই ভদ্রলোক হয়ে যায়। তাহলে দেখবেন তরতর করে এগোচ্ছি আমরা।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। টলিউডের এক বড় স্তম্ভ শ্রীকান্ত মোহতা। তিনি কিছুদিন হল অনুপস্থিত। প্রযোজক দেব কতটা মিস করছেন তাঁকে?
অফ কোর্স মিস করি! আই রিয়্যালি কেয়ার ফর হিম। আমার মণির সঙ্গে কথাও হয়েছে এই প্রসঙ্গে। আশা করি তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন। বাংলা ছবির ক্ষতি হচ্ছে। ওঁর প্রযোজনা সংস্থা যে ছবিগুলো বানাচ্ছে, উনি থাকলে ক্রিয়েটিভ লেভেলে সেটা আরও ভাল হত। আইন তো কারও হাতে নেই। সেটা আমি বদলাতে পারব না। তবে ওঁর শুভানুধ্যায়ী হিসাবে চাইব, সব ঠিক হয়ে যাক।
দেখুন ওঁর সঙ্গে তো আমার ব্যক্তিগত কোনও লড়াই নেই, বিরোধ ছবি রিলিজ হওয়া নিয়ে। এর বাইরে কোনও সমস্যা নেই। মনে আছে, আমি দুবাই যাওয়ার আগেও ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল। শ্রীকান্ত মোহতার মতো প্রযোজক আর নেই কলকাতায়, যিনি ১০-১২ কোটি টাকা দিয়ে ছবি বানাতে পারেন। এখানে ২ কোটি টাকা খরচা করতে মানুষ দশবার প্রশ্ন করছেন। বাংলা ইন্ডাষ্ট্রিতে শ্রীকান্ত মোহতার অবদান অস্বীকার করা যাবে না।