বেশ দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে টেলিপর্দায় ফিরলেন জয় কুমার মুখোপাধ্যায়। সান বাংলা-র 'জিয়নকাঠি' ধারাবাহিকে নায়কের চরিত্রে এসেছেন জয়। এর আগে মাত্র একটি ধারাবাহিকেই অভিনয় করেছিলেন জয় যা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। টেলিভিশনের দর্শক তাঁর প্রত্যাবর্তনে যে বেশ খুশি সোশাল মিডিয়ায় তার নিদর্শন প্রচুর। বাংলা ছবিতে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা, অভিনেতা হয়ে ওঠা নিয়ে কিছু কথা ও টেলিভিশনে ফিরে আসা, সব কিছু নিয়ে একান্ত আলাপচারিতা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে--
তোমার তো প্রায় দশ বছর হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে
হ্যাঁ, তা প্রায়, ২০০৯-১০ থেকে শুরু। তবে মাঝখানে একটা বড় গ্যাপ ছিল।
তুমি যখন ফিল্ম করেছ, বেশিরভাগ অ্যাকশন হিরোর চরিত্রেই তোমাকে দেখেছি। তোমার কি মনে হয় না, একই ধরনের চরিত্র করে গিয়েছো, খুব একটা ভেরিয়েশন পাওনি?
সত্যি কথা বলতে কী, এগুলো পুরোটাই পরিচালকদের উপর নির্ভর করে। কোনও অভিনেতা যখন কোনও বিশেষ ধরনের চরিত্রে সফল হয়, তখন অনেক সময়েই অভিনেতাদের টাইপকাস্ট হয়ে যাওয়ার একটা ব্যাপার চলে আসে। আমি টার্গেট ছবির জন্য বেস্ট ডেবিউটান্টের পুরস্কার পেয়েছিলাম। তার পর থেকে পর পর অ্যাকশন ছবির অফার আসতে থাকে। একটা ট্যাগ মতো পড়ে গিয়েছিল বলতে পারো, যেটা কিছুতেই সরাতে পারিনি। যদিও আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম। বিভিন্ন পরিচালকদের কাছে গিয়ে বলতাম যদি অন্য রকম একটা চরিত্র পাওয়া যায়। কিন্তু সেভাবে কিছু হয়নি। আর তার পরে একটা বেশ লম্বা গ্যাপ ছিল।
আরও পড়ুন: টিআরপি সেরা ‘ত্রিনয়নী’, সাতটার স্লটে এগিয়ে ‘শ্রীময়ী’
খানিকটা সেই কারণেই কি গ্যাপ যে মনের মতো চরিত্রের অফার আসছিল না?
সেই কারণে ঠিক বলব না। কিছুটা নিজের ডিসিশন ছিল। আর কিছুটা আমি যে ধরনের ছবি করতে চাইছিলাম, ঠিক তেমনটা পাচ্ছিলাম না। মানে এমন একটা ছবি যার গল্পটা শুনে মনে হল আই অলসো বিলিভ ইন দ্য সাবজেক্ট বা এই ছবিতে সময় দিলে দর্শককে নতুন কিছু দিতে পারব। তেমন কোনও চরিত্র পেলে হয়তো দর্শকের আরও বেশি ভালো লাগবে। আরও বেশি ভালোবাসা পাব দর্শকের থেকে। আমরা অভিনেতারা তো সবাই দর্শকের ভালোবাসাটুকু চাই। আমাদের মনে হয় দর্শক যেন কাজটা অ্যাপ্রিশিয়েট করে। কিন্তু একদিক দিয়ে দেখতে গেলে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিটা খুবই ছোট। চার-পাঁচটা প্রোডাকশন হাউস আছে যারা সত্যিই ছবি বানানোর ক্ষেত্রে সিরিয়াস। তাদের সকলের সঙ্গেই কথা হয়েছিল। সামহাউ কোনও কিছু ওয়ার্ক করেনি। তার পরেই একটা লম্বা গ্যাপ। ওই সময়েই আমি টেলিভিশনে শিফট করি-- স্টার জলসা-র 'চোখের তারা তুই'।
ওই ধারাবাহিকটা তো খুবই জনপ্রিয় হয়...
হ্যাঁ, ওই সিরিয়ালটা আবার তিন বছর চলে। শেষ হওয়ার পরে আমি ঠিক করেছিলাম যে একটু গ্যাপ নিয়ে, নিজের একটু লুক চেঞ্জ করে আবার ফিল্ম করব।
তাহলে লীনাদিই তোমাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে এলেন টেলিভিশনে...
সত্যি কথা বলতে কী, লীনাদি ও ম্যাজিক মোমেন্টস আমাকে প্রচণ্ড ব্যাক করেছে প্রথম থেকে। এবং স্টারের তরফ থেকেও আমাকে অনেকগুলো শো অফার করা হয়েছিল কিন্তু আনফরচুনেটলি আমি করে উঠতে পারিনি। কিন্তু এখন আমি খুবই খুশি যে সান বাংলা-র জিয়নকাঠি-টা করছি। একটা সময় এসেছিল আমি একটু ডিপ্রেসড হয়ে গিয়েছিলাম। আমার মনে হতো আমি কি আবার ফিরতে পারব অভিনয়ে? একটু ইনসিকিওরড হয়ে গিয়েছিলাম। থ্যাঙ্কস টু লীনাদি, অর্কদা, শৈবাল ব্যানার্জিদা। মানিদা তো আমার নিজের দাদার মতো। ওঁরা সবাই এবং ম্যাজিক মোমেন্টসই আমাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। আর লীনাদির লেখার আমি বিরাট বড় ফ্যান। যখন চোখের তারা তুই-ও করতাম, প্রত্যেকদিন অপেক্ষা করতাম, আজ কী সিন আসবে। আজ লীনাদি আমার জন্য কী সংলাপ লিখবে। এই নতুন প্রজেক্টেও সেই আগ্রহটা থাকে প্রত্যেকদিন।
জিয়নকাঠি ধারাবাহিকে তোমার চরিত্রটা নিয়ে কিছু বলো। তুমি কতটা রিলেট করতে পারছ চরিত্রটার সঙ্গে
দেখো আমি যে চরিত্রটা করছি, ঋষি সেন, সে একজন ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। একে তো সরকারি চাকরি, তার উপর ডিএম, প্রচুর দায়িত্ব। তার পার্সোনাল লাইফে যখন কোনও কিছু ঘটে, তখন সে সেখানে মন দেবে নাকি ডিস্ট্রিক্টের কথা ভাববে। সে তো আর খুব একটা কথায় কথায় ঠাট্টা-তামাশা করবে না। আমি ওই কয়েকটা বেসিক জায়গা পয়েন্ট আউট করেছি। মানুষটা কী রকম হতে পারে এবং তার পার্সোনাল লাইফে কী কী চ্যালেঞ্জ আসতে পারে, সেরকম পরিস্থিতিতে সে কীভাবে রিঅ্যাক্ট করতে পারেজ-- এই জিনিসগুলো মাথায় রেখে পারফর্ম করার চেষ্টা করছি। এবার টেলিভিশনে একটা ব্যাপার থাকে, প্রত্যেকদিন শুটিংয়ে এসে আমরা স্ক্রিপ্টটা পাই। তাই প্রত্যেকদিনই নতুন করে কাজটা করার সময় ভাবতে হয়। বেসিক একটা আউটলাইন করা থাকে। যখন মেকআপটা করি, তখন ক্যারেক্টারে ঢুকে যাই আর যখন মেকআপটা তুলি, তখন আবার ক্যারেক্টার থেকে বেরিয়ে যাই।
তোমার অভিনেতা হয়ে ওঠার জার্নিতে তোমার বাবা-মায়ের নিশ্চয়ই একটা বড় সাপোর্ট ছিল। তুমি তাঁদের কথা একটু বলো।
আমার বাবা প্রথম থেকেই বাংলা বিনোদন জগতের অংশ ছিলেন। আর মা চিরকালই হোমমেকার। মা সিনেমা শুধু দেখতে ভালোবাসেন কিন্তু এই জগতের সঙ্গে সেরকম কোনও সম্পর্ক ছিল না। বাবার মাধ্যমেই আমি ছোটবেলা থেকে অনেক স্টারদের দেখে বড় হয়েছি। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রঞ্জিত মল্লিক-- প্রায় সব তারকারাই বাবার সঙ্গে কাজ করেছেন। তাই ছোটবেলাতেই অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছেটা তৈরি হয়। কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে যখন পড়ি, তখনই আমার প্রথম ছবি। কিন্তু পরের দিকে গিয়ে বাবার সঙ্গে কিছু কিছু জায়গায় মিল হতো না। মনে হতো ওঁরা একটু ওল্ড স্কুল। আসলে আমরা বড় হয়েছি অ্যাল প্যাচিনো, রবার্ট ডি নিরো-র সিনেমা দেখে... তাই ওদের ফরম্যাটের সঙ্গে ঠিক মানিয়ে নিতে পারছিলাম না। একটা গ্যাপ তৈরি হয়ে গিয়েছিল যেটা আমি ঠিক ব্রিজ করে উঠতে পারিনি। কিন্তু এখন সৃজিতদা, শিবপ্রসাদদা বা কৌশিক গাঙ্গুলি বলো-- এঁদের হাত ধরে বাংলা সিনেমা অনেকটা বদলেছে। লেটস সি, আমরা সবাই মিলে তো চেষ্টা করছি এবং করব বাংলা এন্টারটেনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিকে আরও একটু উঁচুতে তুলে ধরতে। আর আমি ঠিক কমার্শিয়াল, আর্টহাউস এই পার্থক্যে বিশ্বাসী নই। যে ছবি ভালো ব্যবসা করছে, সেটাই তো বাণিজ্যিক ছবি। আমি সব ধরনের ছবিই দেখি। আমার কাছে 'টিনের তলোয়ার' যেমন খুব কাছের, আবার বলিউডের ধুম-জাতীয় ছবিও খুব ভালো। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে যেমন ভালো লাগে, তেমনই সলমন খানকেও ভালো লাগে।