/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/08/shanti-2025-09-08-16-40-00.jpg)
যা বললেন অভিনেত্রী...
১৯৮৭ সালে সিনে-জগতে পা রাখেন অভিনেত্রী শান্তি প্রিয়া। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি বলিউডে প্রবেশ করেন এবং ১৯৯১ সালে পান তাঁর প্রথম হিন্দি ছবির সুযোগ। এ ছবির মাধ্যমেই তিনি অক্ষয় কুমারের প্রথম নায়িকা হিসেবে পর্দায় আসেন সৌগন্ধ সিনেমায়। পরে তাঁকে দেখা যায় মেরে সাজনা সাথ নিবানা এবং ফুল অউর অঙ্গার–এর মতো ছবিতেও। ক্যারিয়ারের শীর্ষে পৌঁছেও শান্তি প্রিয়া প্রেমকে অগ্রাধিকার দিয়ে অভিনয় জগৎ ছেড়ে দেন।
১৯৯২ সালে তিনি বিয়ে করেন জীবনের ভালোবাসা, বাজিগর খ্যাত অভিনেতা সিদ্ধার্থ রায়কে। ভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমি থেকে আসা স্বামীর সঙ্গে নতুন জীবনে মানিয়ে নিতে তিনি নিজেই অভিনয় থেকে সরে আসেন। SCREEN-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শান্তি প্রিয়া জানান, প্রথম দেখা হয়েছিল একটি অনুষ্ঠানে, নাচের মহড়ার সময়। তাঁর চোখে চোখ পড়তেই বিশেষ কিছু অনুভব করেছিলেন তিনি। বড় চলচ্চিত্র পরিবার থেকে এলেও সিদ্ধার্থ ছিলেন একেবারেই সাধারণ আর বিনয়ী। পরিচয়ের এক বছরের মধ্যেই তাঁদের বিয়ে হয়।
বিয়ের পর সিনেমা ছাড়ার কারণ জানিয়ে শান্তি বলেন, “আমি নতুন নতুন বিয়ে করেছিলাম, তাই বিবাহিত জীবনটাকে পূর্ণভাবে উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। বোম্বে আমার কাছে ছিল একেবারে নতুন শহর। আমি দক্ষিণ ভারত থেকে এসেছি, আর সে মহারাষ্ট্র ও বাংলার মিশ্রণ। তাই সবকিছু শিখে নিতে, মানিয়ে নিতে নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করতে চেয়েছিলাম।”
বিবাহিত জীবন ছিল সুখের। তাঁদের দুটি পুত্রসন্তানও জন্ম নেয়। কিন্তু ২০০৪ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সিদ্ধার্থ রায় হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেন। পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়ার টেবিলে বসেই ঘটে সেই ভয়ঙ্কর ঘটনা। শান্তি প্রিয়া স্মৃতিচারণ করে বলেন, “ও ছেলেকে কিছু একটা শেখাচ্ছিল। হঠাৎ হেঁচকি উঠল, মাথা নিচু করল, আর সব শেষ।” চিকিৎসকের বহু চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁকে আর ফিরিয়ে আনা যায়নি।
এই আকস্মিক মৃত্যু শান্তি প্রিয়াকে ভিতরে ভিতরে ভেঙে দেয়। শোক সামলাতে গিয়ে তিনি নিজেকে একেবারে গুটিয়ে নেন। বলেন, “আমি কারও কাছে সাহায্য চাইতে চাইনি। কারও ওপর নির্ভর করতে চাইনি। বাইরে শক্ত থাকলেও ভেতরে ভেতরে কাঁদতাম।”
স্বামী হারানোর পর তাঁর জীবনযাত্রায়ও পরিবর্তন আসে। সাদা পোশাকেই সীমাবদ্ধ থাকতেন, একরকম অবসন্ন অবস্থায় দিন কাটাতেন। সেই সময় মা-ই তাঁকে জাগিয়ে তোলেন। একদিন মায়ের কথায় উপলব্ধি করেন যে, তাঁর সন্তানদের জন্যই তাঁকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হবে। শান্তি প্রিয়া বলেন, “মা বলেছিলেন আমি অশিক্ষিত হয়েও তোমাদের মানুষ করেছি। তুমি শিক্ষিত, স্বাধীন, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল, তবুও এভাবে ভেঙে পড়ছ? তোমার ছেলেরা এটা দাবি রাখে না। তখনই মনে হলো, হ্যাঁ, ওদের জন্যই আমাকে এগিয়ে যেতে হবে।” আজও তাঁর পরিবারই তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি। ভালোবাসা, হারানো আর নতুন করে বেঁচে ওঠার গল্পই শান্তি প্রিয়ার জীবনের মূল অনুপ্রেরণা।