Actor Sourav Saha in Rani Rashmoni: 'করুণাময়ী রাণী রাসমণি' ধারাবাহিকে সম্প্রতি শুরু হয়েছে রামকৃষ্ণদেবের গদাধর থেকে পরমহংস হয়ে ওঠার গল্পটি। এই কিংবদন্তি চরিত্রটিতে অভিনয় করছেন সৌরভ সাহা। দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা টেলিভিশনের বিভিন্ন জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন সৌরভ। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে বিশেষ কথোকপথনে ধরা পড়ল এই চরিত্রের জন্য তাঁর প্রস্তুতি এবং তাঁর অভিনয় জীবনের সূত্রপাতের নানা কথা।
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের চরিত্রে অভিনয় মানেই অভিনেতাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। এই চরিত্রের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলে, সেটা যদি একটু বলো।
আসলে ঠিক এই প্রথম নয়, এর আগেও ঠাকুরের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ এসেছে। বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনের প্রযোজনায় হরনাথ চক্রবর্তী একটি ডকুফিচার তৈরি করেছিলেন যেটা কোনও প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়নি কিন্তু মিশনেরই উদ্যোগে দেশে ও বিদেশে বহু জায়গায় দেখানো হয়েছে এবং প্রশংসা পেয়েছে। তার আগেও একবার এই চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ এসেছিল। তাই কিছুটা প্রস্তুতি ছিল আগে। আর আমি নিজে রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র, ঠাকুরের বই পড়ার অভ্যাস ছিল ছোট থেকে। তবে এই ধারাবাহিকে চরিত্রটা অনেকদিন ধরে থাকবে, তাই তার জন্য আলাদা করে কিছু প্রস্তুতি আমি নিয়েছি। আমাদের ডিরেক্টোরিয়াল টিম, রিসার্চ টিম এবং জি বাংলা-র যাঁরা এই প্রজেক্টটি দেখছেন, রাজেনদা, রূপকদা, রাখিদি-- তাঁরা বেশ কিছু বই রেফার করেছিলেন, যেগুলো খুঁটিয়ে পড়েছি। আমি খড়দায় থাকি। আমার বাড়ির পাশেই প্রায় মিশন বলা যায়। সেখানেও মহারাজদের সঙ্গে কথা বলেছি। মিশন। আমার আগে বেশ কয়েকজন এই চরিত্র করে সফল হয়েছেন। তার মধ্যে আমার বন্ধু সুমনও রয়েছে। ঠাকুরের ছোট ছোট ম্যানারিজম ছিল, সেগুলো জানার চেষ্টা করেছি। চরিত্রটা নিঃসন্দেহে শক্ত। চেষ্টা করছি।
আকাশ ৮-এর 'বিবাহ অভিযান'-এ। ছবি সৌজন্য: সৌরভ
অভিনয়ের প্রতি আগ্রহটা তৈরি হল কীভাবে?
আমি রহড়া মিশনে পড়তাম। পড়াশোনায় খুব একটা ভাল ছিলাম না কিন্তু স্কুলজীবনটা খুব ভালো কেটেছে। ওখানকার মহারাজরা খুব বন্ধুর মতো ছিলেন। খেলাধূলা, অভিনয় নিয়ে হই হই করে কাটত। আমাদের স্কুলে সারা বছর নানা ধরনের নাটক হতো। সেখান থেকেই ভালো লাগাটা তৈরি হয়। তাছাড়া খড়দা এলাকায় থিয়েটারের একটা চর্চা রয়েছে বহুদিন ধরে। আমাদের পাড়াতেও নাটক হতো। খারিজ নাট্যোগাষ্ঠীর কনক রায়ের হাত ধরেই আমার থিয়েটারে আসা বলা যায়। উনিই প্রথম আমাকে সাহস জুগিয়েছিলেন। আমি তখন ক্লাস সেভেন-এইটে পড়ি। উনি আমার বাবা-মাকে বুঝিয়েছিলেন যে ছেলে যদি অভিনয়টাই করতে চায় বড় হয়ে, তবে সেটা ভালোই হবে। এই থিয়েটার করতে করতেই ২০০৩ নাগাদ টালিগঞ্জের বেশ কিছু ডিরেক্টরদের সঙ্গে আলাপ হল। প্রথম বড় কাজ পেলাম ইটিভিতে।
'বামাক্ষ্যাপা' ধারাবাহিকে অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ছবি সৌজন্য: সৌরভ
'বামাক্ষ্যাপা'-তে প্রথম সাড়ে-তিন চার বছর বামা চরিত্রে আমি অভিনয় করি। তার পরের পাঁচ-ছ বছর অরিন্দমদা করেছিলেন। ওই কাজটার পর আরও অনেক জায়গা থেকে ডাক পেতে শুরু করলাম। 'এরাও শত্রু', 'কে তুমি নন্দিনী', 'টাপুর টুপুর', 'সাঁঝবেলা', 'শুভবিবাহ'-- ২০১৪-১৫ সাল পর্যন্ত বহু মেগাসিরিয়াল করেছি। কিছু ছবিও করেছি। ২০১৫-র পর থেকেই মোটামুটি মেগাসিরিয়াল থেকে একটু সরে এলাম কারণ আমি খুব পরিবারকেন্দ্রিক মানুষ। আমাদের জয়েন্ট ফ্যামিলি। বাড়িতে যথেষ্ট সময় দিতে না পারলে আমার ভালো লাগে না। আর আমার বাড়ির সবাই পাড়ায় খুবই অ্যাক্টিভ। পাড়ার স্পোর্টস থেকে দুর্গাপুজো সবকিছুতেই আমরা থাকি। এমনও হয়েছে এর জন্য কিছু কাজ ছেড়ে দিয়েছি। কারণ আমার কাছে আমার বাড়ি ও পাড়া খুব ইম্পর্ট্যান্ট। তাই আমি একটা সময় পরে এক মাসের গল্প বা সাহিত্যের প্রজেক্টগুলো করতে শুরু করি। আমার মনের মতো অনেক চরিত্রই পেয়েছি আকাশ ৮-এর বেশ কিছু কাজে-- 'সন্ন্যাসী রাজা', 'আনন্দ আশ্রম', 'ছদ্মবেশী'। এখন আবার ঠাকুরের আশীর্বাদে এই চরিত্রটা পেলাম। জানি না দর্শকের কতটা ভালো লাগবে।
আকাশ ৮-এর 'আনন্দ আশ্রম'-এ। ছবি সৌজন্য: সৌরভ
তোমার এই পেশাদার অভিনেতা হওয়ার সিদ্ধান্তে পরিবারের থেকে কোনও আপত্তি ছিল না?
না, আমার বাবা-মা খুব সহজ মানুষ। আমার বাবা আগে যা বলতেন, এখনও তাই বলেন-- যেটা করবে সিরিয়াসলি করবে। আর আমাদের পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। সংসারের সমস্ত দায়িত্ব নিতে হবে, এমন কোনও চাপ ঠিক ছিল না আমার উপর তখন। তবে একটা চিন্তা ছিল যে প্রথমদিকে যে এই কাজটা আমি কতটা সফলভাবে করতে পারব। যখন বাবা-মা আর বাড়ির অন্যান্যরা বুঝতে পারল যে আমি এই কাজটা করতে পারছি, তখন আস্তে আস্তে চিন্তাটা কেটে যায়। আমি ল কলেজে পড়তে পড়তেই একটু একটু অভিনয় করতে শুরু করি। আর ফাইনাল ইয়ারের পরেই বামাক্ষ্যাপা-তে সুযোগটা আসে। তার পরে আর অন্য় কিছু করার কথা ভাবিইনি। ল পাশ করলেও প্র্যাকটিস করিনি কখনও। অভিনয়ের দিকে এসব কিছু না হলে হয়তো ভাবতে হতো। তখন একটা অন্য রকম জীবন হতো, এখন এটাই জীবন।