টলিউডে মাফিয়ারাজ চলছে, অভিযোগের বিরুদ্ধে রবিবার মৌনমিছিলের আয়োজন করেছিল ফেডারেশন। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শোরগোল রাজনৈতিক মহলে। পাল্টা অভিনেত্রী প্রশ্ন ছুঁড়েছেন
যেই "গোটা মিছিলটা আদৌ স্বতঃস্ফূর্ত ছিল তো?"
রবিবার ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে মিছিলে যাঁরা যোগ দিলেন না, তাঁদের নিয়ে 'গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা হবে' বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলা সিনে সংগঠনের তরফে। আর ঠিক সেই বিষয়টিই খানিক অদ্ভুত ঠেকেছে অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তীর কাছে। অতঃপর তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, "গোটা মিছিলটা আদৌ স্বতঃস্ফূর্ত ছিল তো?"
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের উত্তপ্ত আবহে টলিউড ইন্ডাস্ট্রি যে বর্তমানে বেজায় গুরুত্বপূর্ণ এক স্থানে রয়েছে, তা বোধহয় অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে এখন দ্বিবিভক্ত সিনে-ইন্ডাস্ট্রি। কেউ পদ্ম-বাহিনীতে নাম লিখিয়েছেন, তো কেউ বা আবার ঘাসফুল শিবিরে। কিন্তু তার মাঝেও বেশ কজন শিল্পীরা রাজনীতির উর্দ্ধে গিয়ে শুধুমাত্র শিল্পীসত্ত্বা বজায় রেখেই বারবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন রাজ্য-রাজনীতির সঙ্গে বর্তমানে ওতপ্রোতোভাবে জড়িয়ে পড়া গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রিকে। সেই তালিকায় সম্ভবত সুদীপ্তা চক্রবর্তীর নামও নেওয়া যেতে পারে। কারণ, ফেডারেশনের তরফে রবিবার যে মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল, তাতে অনেকেই রাজনৈতিক গন্ধ খুঁজে পেয়েছেন। আয়োজকরা যদিও তাতে রাজনীতির রং খুঁজতে নারাজ। তাঁদের কথায়, ইন্ডাস্ট্রিকে যাঁরা কালিমালিপ্ত করছে, এই মিছিল ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। কিন্তু, সেই মিছিলে যোগ দিতে পারেননি অনেকেই। ব্যস্ত ছিলেন শুটিংয়ে। আর সেই প্রেক্ষিতেই যে বা যাঁরা যোগ দিতে পারেননি, তাঁদের উদ্দেশে এক হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে ভাইরাল হয়েছে ফেডারেশনের তরফে। তাতে বলা হয়েছে, "যাঁরা এদিনের মিছিলে যোগ দেননি, তাঁদের নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা হবে।" সেখানেই গন্ডগোলের সূত্রপাত।
ইন্ডাস্ট্রির একাংশ এই বার্তাকে মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপ বিশ্বাসের হুমকি হিসেবেই দেখছেন। বিশেষত, সিনে ইন্ডাস্ট্রির গেরুয়া শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা। সেই প্রেক্ষিতেই এবার মুখ খুললেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। অভিনেত্রীর স্পষ্ট জবাব, "যদি সত্যিই স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল হত, তাহলে হয়তো ফেডারেশনকে এমন নেতিবাচক বার্তা দিতে হত না। শিল্পী কলাকুশলীদের নিয়ে ভাবাটাই তো ফেডারেশনের কাজ। এই দায়িত্ব নিয়েই সংগঠন তৈরি করা হয়েছে। এবং সেই ভাবনারও যথেষ্ট গভীরতা থাকবে। এ আর নতুন কী? কেন আলাদা বার্তা দিয়ে সেকথা নতুন করে জানাতে হচ্ছে সংগঠনকে? সেটাই বুঝতে পারছি না!"
শিল্পী, কলা-কুশলীদের বিভাজনও চান না সুদীপ্তা। তাঁর কথায়, "সিনেমা/টিভির কাজে যাঁদের কলাকুশলী বলা হয়, আমার কাছে তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই এক একজন শিল্পী। একটা গল্প বা চিত্রনাট্য লেখা বা তাকে সঠিক নির্দেশনার মাধ্যমে পর্দায় আনা, বা ক্যামেরায় ছবি তোলা যেমন কোনোদিনই শুধু যান্ত্রিক ব্যাপার নয়, সঠিক সময় সঠিক আলো টা দেওয়া বা কেটে দেওয়াও শিল্প ছাড়া আর কিছু নয়।" সুদীপ্তার দাবি, "দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে কাজ করেন বলে তাঁরা যদি শ্রমিক বা টেকনিশিয়ান হন, তাহলে সেই হিসেবে আমিও একজন টেকনিশিয়ান ই। আর সেই জন্যই চিন্তা হচ্ছে আমারও। স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দিয়েছেন বলে যাঁদের নিয়ে মিছিল বের হলো, তাঁদের মধ্যে অনেকেই হয়তো সত্যিই স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে বেরিয়েছিলেন। তাতে কারোর কোনও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু যাঁরা গেলেন না, তাঁদের নিয়ে 'গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করা হবে, জেনে একটু অদ্ভুত লাগছে। গোটা মিছিল টা আদৌ স্বতঃস্ফূর্ত ছিল তো?"
টলিউডের অন্যান্য শিল্পীরা কেন এর প্রতিবাদে মুখ খুললেন না, সেই প্রসঙ্গেও প্রশ্ন তোলেন সুদীপ্তা। অভিনেত্রীর কথায়, শিল্পীদের হয়ে শিল্পীরা মুখ না খুললে মুখ খুলবে কে? কারণ, অধিকাংশ শিল্পীই এখন কোনও না কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত। ফলে, তাঁরা চাইলেও প্রতিবাদে শামিল হতে পারেন না।